Menu

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: কালের অপ্রতিরোধ্য প্রবাহে আমাদের জীবন থেকে আরেকটি বছর চলে গেল। চলে গেল খ্রিস্ট্রীয় সাল ২০১৯। এ বছরটি ২০২০। নতুন বছর ফুরালে নতুন শতাব্দীর ৫ ভাগের ১ ভাগ সময় পার হয়ে যাবে। বাকি থাকবে ৫ ভাগের ৪ ভাগ সময়।একবিংশ শতাব্দীর প্রথম ১৯ বছর কেটেছে রক্তপাত, আঞ্চলিক যুদ্ধ, বিশ্বায়নের ছন্দপতন, গণতন্ত্রের অসুস্থ হয়ে পড়া, নব্য নাজিবাদ, নব্য ফ্যাসিবাদ, উগ্র জাত্যাভিমান, সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবাদ, মানুষের প্রতি মানুষের বিদ্বেষ, ঘৃণা ও হলাহলের বিষাক্ত পরিবেশের গুমট অন্ধকারে।

ভালো কিছু কি হয়নি এই ১৯ বছরে? নিশ্চয়ই হয়েছে। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন কিছু উদ্ভাবন মানবজাতিকে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী হতে উৎসাহিত করেছে।প্রযুক্তির এসব উদ্ভাবন ঘটেছে মূলত কমিউনিকেশন টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, মেডিকেল টেকনোলজি ইত্যাদি ক্ষেত্রে। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা পৃথিবী থেকে বহু আলোকবর্ষ দূরে আবিষ্কার করেছেন এমন একটি গ্রহ যেটি আমাদের সূর্যের মতোই আরেকটি সূর্যকে কেন্দ্রে রেখে প্রদক্ষিণ করে তার কক্ষপথে।

বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, নব আবিষ্কৃত এই গ্রহ আবহাওয়ার দিক থেকে প্রাণিকুলের অস্তিত্বের জন্য সহায়ক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে সঙ্গে এটাও ভাবা যায় ভিনগ্রহে মানবজাতির মতো প্রাণীর অস্তিত্ব থাকতে পারে।বিজ্ঞানের অনেক আবিষ্কার তাৎক্ষণিকভাবে মানবজাতির জন্য সুফল কিংবা কুফল বয়ে আনে না। কিন্তু যতই সময় অতিবাহিত হয় মানুষ নব অর্জিত জ্ঞানকে নিয়ে বিচিত্র খেলায় মেতে ওঠে। এর ফল কখনও হয় মঙ্গলজনক, আবার কখনও হয় ভয়াবহ এবং মানববিধ্বংসী। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন আপেক্ষিকতার তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন।

সেই তত্ত্বকে ব্যবহার করে অন্য বিজ্ঞানীরা তৈরি করলেন মানববিধ্বংসী আণবিক বোমা। আবার এ বিজ্ঞানের সুফল আমরা পেয়েছি কৃষি, চিকিৎসা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো কল্যাণমূলক কাজে।এ যেন আলো-আঁধারের খেলা। আলোর চোখে অন্ধকার খুব কালো আর অন্ধকার আছে বলেই আলোর কত কদর। জীবন ও মৃত্যু নিয়েও একই কথা বলা যায়। মৃত্যু আছে বলেই মানুষ জীবনকে এত ভালোবাসে।

জীবনকে ধরে রাখার জন্য মানুষের সাধনার অন্ত নেই। মৃত্যুই জীবনের শেষ পরিণতি, তদসত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মানুষের দ্বারা কোনো মানুষের মৃত্যু মানবসভ্যতা কখনই মেনে নিতে পারেনি। সে জন্য মানুষের প্রাণ হন্তারকের শাস্তি নির্ধারিত হয়েছে মৃত্যুদণ্ডে। সেই মৃত্যুদণ্ড নিয়েও এখন অনেক বিতর্ক।পৃথিবীর অনেক দেশ মৃত্যুদণ্ড রহিত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সব অঙ্গরাজ্যে না হলেও কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে মৃত্যুদণ্ড রহিত করা হয়েছে। কাজেই সভ্যতার প্রশ্নটিও আপেক্ষিক। সভ্যতাকে কণ্টকমুক্ত করার জন্য মৃত্যুদণ্ডের প্রচলন হয়েছিল। আবার সভ্যতা সম্পর্কে নব উপলব্ধি মানুষকে মৃত্যুদণ্ড নিয়ে নতুন করে ভাবতে প্রণোদিত করেছে।

সবকিছু মিলিয়ে বলতে হয় শুভ-অশুভ, কল্যাণ-অকল্যাণ, ভালো-মন্দ, সত্য-অসত্য, দারিদ্র্য ও সম্পদ, জ্ঞান ও অজ্ঞান একে অপরকে এত গভীরভাবে জড়িয়ে আছে যে আমরা ঠিক বুঝতে পারি না কোথায় মঙ্গল নিহিত আছে।অদৃষ্টবাদীরা কিংবা যারা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণে প্রস্তুত, অর্থাৎ যারা প্রকৃত ইমানদার বা মোমিন তারা জীবনে কোনো দুঃখ-দুর্দশা কিংবা শোক ও কষ্টে পতিত হলে বাঁচার শক্তি সঞ্চয়ের জন্য ভাবতে চেষ্টা করেন, আল্লাহ হয়তো এর মধ্য দিয়েই বড় কোনো মঙ্গল প্রদান করবেন। আল্লাহ যা করেন তা আমাদের ভালোর জন্যই করেন। এসব বিশ্বাসীর কথা।

আস্তিকের কথা। নাস্তিকরা এমন কথা শুনলে বলবেন অদৃষ্টবাদীরা নিজের অসহায়ত্ব এভাবেই প্রকাশ করে। যত যাই বলি, মানুষের জীবনে Uncertainly বলে কিছু ঘটনা ঘটে।গ্রিক পৌরাণিক কাহিনী থেকে জানা যায়, আন্তিয়াস ছিল একটি দৈত্য। সে ছিল ‘গাইয়া’ বা মাতৃপৃথিবী এবং সমুদ্র দেবতা পসিডনের সন্তান। তার এক অদ্ভুত পেশা কিংবা নেশা ছিল। যখনই সে তার দেশে (গ্রিস অধিকৃত লিবিয়া) কোনো পথচারীকে দেখতে পেত তখনই সে তার সঙ্গে কুস্তি জুড়ে দিত এবং শেষ পর্যন্ত সেই পথচারীকে ধরাশায়ী করে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিত।

তার এ অদ্ভুত নেশার পেছনে ছিল পিতৃভক্তি। আন্তিয়াস পসিডনের স্মৃতি রক্ষা করার জন্য একটি মন্দির নির্মাণ করতে চেয়েছে। এ মন্দির নির্মাণে সে চেয়েছে তার ভিকটিমদের মুণ্ড কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে।আন্তিয়াসকে মনে করা হতো অপরাজেয় কিংবা অপ্রতিরোধ্য। কিন্তু এর মধ্যেও ছোট একটা ফাঁক ছিল। তার শক্তির উৎস ছিল মাতৃরূপী পৃথিবীর সঙ্গে সংস্পর্শ। এ পৃথিবীর সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক হারিয়ে ফেলতে তার কোনো শক্তি অবশিষ্ট থাকত না। হারকিউলিস চাইল আন্তিয়াসকে ধরাশায়ী করতে। হারকিউলিস কৌশল করে আন্তিয়াসকে মাটি থেকে তুলে ফেলল।

তুলে ফেলার পর আন্তিয়াসের পা তার ‘মা’ পৃথিবীর সঙ্গে সংস্পর্শ হারিয়ে ফেলার পর হারকিউলিস তাকে সহজেই খতম করে ফেলে। আন্তিয়াসের মতো পৃথিবীর তাবৎ পরাক্রমশালীদেরও কোনো না কোনো দুর্বলতার জায়গা থাকে। ২০১৯-এ পরাক্রমশালীদের তাণ্ডব বজায় ছিল পৃথিবীর অনেক অংশেই। তাই বলে এ পরাক্রমশালীরা কেউ অমর অক্ষয় নয়।

বিভিন্ন সময়ে অনেক পরাক্রমশালীকে বিদায় নিতে হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে রবার্ট মুগাবে, হোসনি মোবারক, মোয়াম্মার গাদ্দাফি, জায়নুল আবেদিন এবং সাদ্দাম হোসেন। এরা ব্যক্তি হিসেবে অনেক ভালো কাজ করেছেন।তবে আন্তিয়াসের মতো মাটির সঙ্গে সংস্পর্শ হারিয়ে তারা ধ্বংস হয়ে গেছে। আরও পেছনের দিকে গেলে আমরা ফেরাউন-নমরূদদের কথা বলতে পারি। সুতরাং আপাতদৃষ্টিতে কারোর অজেয় শক্তিমত্তা দেখে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।

২০২০-কে সামনে রেখে দার্শনিক কবি ওমর খৈয়ামের কিছু ছত্র মনে জাগে। খৈয়াম লিখেছেন-

‘পূর্ণ করে দাও সখি! পান-পাত্র মোর

অফুরন্ত হয়ে থাক স্বপনের ঘোর;

বার বার মিছে আর বোল না আমায়

কেমনে চরণ তলে

পলে পলে

জীবনের দিন বয়ে যায়!

বিদায় সংকেত বাণী হায়,

নিশিদিন ভীতমনে প্রতিক্ষণে কে শুনিতে চায়

আনন্দ উচ্ছ্বাসে অনুরাগে

আজ যদি বর্তমানই শুধু ভালো লাগে,

কেন তব অকারণে ভেবে তুমি হারাও সংবিত

অনাগত কাল আশে- অথবা যা হয়েছে অতীত!’

(নরেন্দ্র দেব অনূদিত)

কী অপূর্ব অদ্ভুতভাবে দার্শনিক কবি খৈয়াম আমাদের মনের কথাগুলোই বলেছেন! আমরা তো কেউ আমাদের বিদায়ের সংকেত বাণী নিশিদিন প্রতিক্ষণে শুনতে চাই না। যদি বর্তমান হয় আনন্দ-উচ্ছ্বাস ও অনুরাগে ভরপুর তাহলে কী কারণে আমরা সংবিতহারা হব। যে কাল পড়ে আছে আগামীর গর্ভে, অথবা যে কাল অতীত হয়ে গেছে তা নিয়ে অহেতুক ভাবিত না হয়ে বর্তমানের আনন্দ-উচ্ছ্বাসই উপভোগ করতে চায় প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি ভাইবোন।

২.

২০১৯ আমাদের জন্য হয়তো খুব আনন্দের ছিল না। এ বছর প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.১৫ শতাংশ। মাথাপিছু আয় হয়েছে ১ হাজার ৯০৯ ডলার। কিন্তু নিচের ৪০ ভাগ মানুষ বঞ্চনার তিমিরেই রয়ে গেছে।

তাদের পক্ষে বিদ্যমান ধারায় চললে ওপরের ৫ বা ১০ শতাংশের কাছাকাছি যাওয়া কোনোকালেই সম্ভব হবে না। এ বছরেই ফেব্রুয়ারিতে বিডা ১৫টি সেবা নিয়ে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করে। একই বছর অক্টোবরে বেজা একই ধরনের সেবা চালু করে। যদিও এসব সেবার অনেকগুলোই চালু করা সম্ভব হয়নি। কথা ছিল এসব সেবা সরাসরি অনলাইন থেকে পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশন চামড়া শিল্পনগরের কাজ শেষ করতে পারেনি এবং রাসায়নিক শিল্পপার্ক, প্লাস্টিক শিল্পনগরের মতো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটেছে বিরক্তিকরভাবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নিয়ে বলেছিলেন, খেলাপি ঋণ বাড়বে না। কিন্তু খেলাপি ঋণ ২২ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে গিয়ে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

এর জন্য মূলত দায়ী বড় ঋণখেলাপি-পছন্দ নীতি। ঋণের সুদের হার হওয়ার কথা ছিল ৯ শতাংশ এবং আমানতের সুদের হার হওয়ার কথা ছিল ৬ শতাংশ। এরূপ ঘোষণা দেয়া হয়েছিল ২০১৮ সালে। ২০১৯ পার হয়ে গেল। এখনও পর্যন্ত ৯-৬ এর দেখা নেই। কী করে দেখা মিলবে? বিশাল খেলাপি ঋণের বোঝায় ন্যুব্জ ব্যাংকগুলোর পক্ষে এ নীতি কার্যকর করা প্রায় অসম্ভব।

রান্নায় ব্যবহৃত একটি মসলাজাতীয় উপাদান পেঁয়াজ চোখে জলের ধারা সৃষ্টি করেছে। সরকার বুঝতেই পারেনি প্রিয় বন্ধু ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে বাংলাদেশের জন্য এমন বেহাল অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। ২০১৯-এর কোরবানির ঈদে পশুর চামড়ার বাজার বলতে কিছুই ছিল না। পানির দামে চামড়া বিক্রি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও গরিব মানুষ।

ধানের বাজারেও ছিল একই ধরনের দুরবস্থা। বছরের শুরুতে বোরো মৌসুমে কৃষক ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন। ধানের দাম এতই কম ছিল যে, কামলার মজুরি দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ২০১৯-এ পাটকলের শ্রমিকরা আন্দোলনে নামে। তারা অনশন কর্মসূচি পালন করে। তীব্র শীতে দুই শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে। সরকার প্রদত্ত আশ্বাস সত্ত্বেও সমস্যাটির ফয়সালা হয়নি। ২০১৯ বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সৃষ্টি হল আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। সিদ্ধান্তটি এখনও প্রক্রিয়াধীন।

দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা যখন সংকটে তখন বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন দিল বেঙ্গল কমার্শিয়াল, পিপলস ও সিটিজেন নামে নতুন তিনটি ব্যাংকের। দেশে এত ব্যাংক, তারপরও কেন আরও তিনটি নতুন ব্যাংক অনুমোদন দিতে হবে? ২০১৯-এ টেলিযোগাযোগ খাতে বিশাল আর্থিক বিরোধ দেখা গেছে। নিরীক্ষার হিসাবে ২ অপারেটর থেকে ১৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা আদায়ে কয়েকটি পদক্ষেপ নেয় বিটিআরসি। বিষয়টির সুরাহা হয়নি।

আদালতে বিচারাধীন। তবে সমস্যাটি একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় পরিণত হওয়ার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। এসব দুঃসংবাদের পাশাপাশি আরও দুঃসংবাদ ছিল লবণ নিয়ে হুজুগ, সঞ্চয়পত্রে অনাগ্রহ এবং রফতানির হতাশা। সুখবরও কিছু আছে বটে। বিশ্বব্যাংকের সূচক অনুযায়ী সহজে ব্যবসা সূচকে বাংলাদেশ ৮ ধাপ উন্নতি করেছে। ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে ১৬৮তম।

অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে যখন সুসংবাদের চেয়ে দুঃসংবাদের প্রাবল্য, তখন এই ৮ ধাপ উন্নতির অনুভবযোগ্য কী পরিবর্তন হবে? আরেকটি সুখবর হল প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধি। চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ৭৭১ কোটি ডলার। এটা সম্ভব হয়েছে ডলারে ২ শতাংশ বাড়তি বিনিময় হার প্রদানের ফলে, অর্থাৎ এক ধরনের প্রণোদনা। আরও সুখবর হল অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিনিয়োগ প্রস্তাব এক হাজার ৮০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এ অঙ্কটি অনেক দেশের তুলনায় সামান্যই বটে। তবে দেখতে হবে প্রস্তাব কত দ্রুত বাস্তবায়িত হয়।

অর্থনীতিতে বড় দুঃসংবাদ হল রাজস্ব আয় লক্ষ্য বড় হলেও ঘাটতিও বিশাল। এ ঘাটতি সরকারকে বাধ্য করেছে অনেকটা নজিরবিহীনভাবে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিতে। সবচেয়ে বিপজ্জনক হল কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ। এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি ঘটার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন আভাস দিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. জাহিদ হোসেন।

সার্বিকভাবে বিশ্ব অর্থনীতি সর্বনিু প্রবৃদ্ধির পথে। এর একটা বড় কারণ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শাতাংশে নেমে আসা। যদিও স্বাভাবিক নিয়মে চীনের প্রবৃদ্ধি কমে আসার কথা ছিল, তা আরও প্রকট হয়েছে চীন-মার্কিন বাণিজ্য-যুদ্ধের ফলে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অদূরদর্শী পদক্ষেপের ফলে বিশ্বায়ন আজ বাধাগ্রস্ত।

বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া যে বিশ্ব প্রবৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করেছিল তা আজ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। পুঁজিবাদ তার সৃষ্ট প্রক্রিয়াকে নিজেই বাধাগ্রস্ত করছে। বিশ্বায়ন সম্পর্কে মার্কস্ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, পুঁজিবাদ বিশ্বায়নের পথে যাবে, আবার পুঁজিবাদই বিশ্বায়নের পথে বাধার দেয়াল সৃষ্টি করবে। আরেক বড় অর্থনীতির দেশ ভারত প্রচণ্ড স্থবিরতার মধ্যে পড়ে গেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিন্দুত্ববাদ জারিত অস্থিরতা। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের শাসক মহল ২০২০ নিয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির গল্প কতটা শোনাতে পারবে তা নিয়ে সংশয় জাগে।

অর্থনীতির ক্ষেত্রে কিছু সাফল্য এবং ব্যাপক ব্যর্থতার সঙ্গে ২০১৯ ছিল অকল্পনীয় দুর্নীতির কিচ্ছা কাহিনীর বছর এবং অমানবিকতার বছর। নানা কাণ্ডের দুর্নীতি সমাজদেহে ঘুণ পোকার মতো বিস্তার লাভ করেছে। গুম, খুন, ধর্ষণ ও সীমান্ত হত্যার পাশাপাশি বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা দেশবাসীর মনোজগতে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছে।

ফাহাদ হত্যার স্মৃতি মলিন হতে না হতেই ডাকসু ভিপি নূরসহ অনেকেই আক্রান্ত হয়েছে। সরাসরি আক্রমণকারীদের ভূমিকার চেয়েও বেদনাদায়ক হল প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত এক গুচ্ছ অভিযোগ।

২০১৯-এ আমাদের অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় দারুণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। এর সবই আমাদের ২০১৯-এর বিষাদ স্মৃতি! এতসব বিষাদ স্মৃতি থাকা সত্ত্বেও আমরা দার্শনিক কবি ওরম খৈয়ামের ভাষায় আশা করব : ভোল ভোল বিষাদ স্মৃতি এমনি প্রভাত আসবে যে খুঁজতে মোদের এইখানে ফের করবে করুণ নয়নপাত।

আশা করব ২০২০-এর প্রভাত ২০১৯-এ যা কিছু অন্ধকার ছিল তাকে বিদীর্ণ করে নতুন সূর্য নিয়ে আসবে নতুন প্রভাত। যার আলোয় ঝলমল করবে বঙ্গভবনের গম্বুজ থেকে গরিবের পর্ণকুটির। যেমনটি ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াতের অনুবাদ করে এডওয়ার্ড ফিট্জজেরাল্ড লিখেছেন-

Dreaming when Dawn’s left hand was in the sky

I heard a voice within the tavern cry

Awake my little ones and fill the cup

Before life’s liquor in its cup be dry

ড. মাহবুব উল্লাহ : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ০২ জানুয়ারি ২০২০ /এমএম


Array