বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: বৃদ্ধাশ্রম মানে বৃদ্ধদের আশ্রয়স্থল। বর্তমানে এর অর্থ দাঁড়িয়েছে- বৃদ্ধ পিতা-মাতার জন্য পরিবার ও স্বজনদের কাছ থেকে আলাদা থাকার আবাসস্থল। ছোটবেলায় যে বাবা-মা ছিলেন সবচেয়ে আপন, যাদের ছাড়া সন্তানরা কিছুই করতে পারত না, যারা নিজেদের আরাম হারাম করে সন্তানদের মানুষ করেছেন, সেই বাবা-মায়ের শেষ বয়সের ঠিকানা এখনকার বৃদ্ধাশ্রমগুলো। এক-দু’দশক আগেও আমাদের দেশে বৃদ্ধাশ্রম তেমন একটা ছিল না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে।
যারা জীবনের সর্বস্ব দিয়ে গড়েছেন সন্তান ও সমাজ, আজ তাদের ঠাঁই হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে, যা সত্যিই এক ট্রাজেডি। পরিবার-পরিজনহীন অযত্নে-অবহেলায় জীবন কাটাতে হয় প্রবীণদের। এই সমাজ, রাষ্ট্র ও আইনের কাছে তাদের নেই কোনো অভিযোগ কিংবা চাওয়া-পাওয়া।
পরিতাপের বিষয়, সন্তানদের জন্য এত ত্যাগের পরও অনেক প্রবীণকে শেষ বয়সে এসে লাঞ্ছিত-অবহেলিত হতে হয় সন্তানদের দ্বারা। এমনকি কারও কারও ক্ষেত্রে জীবনের শেষ সম্বল স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি দিলেও ঠাঁই মেলে না সন্তানদের পরিবারে। ফলে শত কষ্ট, অযত্ন-অবহেলা সহ্য করতে না পেরে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত ও সামান্য সেবার জন্য ঠাঁই নেন বৃদ্ধাশ্রমে।
অথচ একসময় তারা ছিলেন নামিদামি বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক কিংবা চাকরিজীবী। বর্ণাঢ্য ছিল তাদের জীবন। বৃদ্ধ বয়সে এসে নিজ সন্তানদের অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়ে বহু পিতামাতা এখন বৃদ্ধাশ্রমের স্থায়ী বাসিন্দা হতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিবার, সন্তান থেকেও সন্তানহারা জীবনযাপন করছেন তারা।
দুঃখের বিষয়, সন্তানরা বা পরিবারের সদস্যরা তাদের ভুলে গেছে। কিন্তু বৃদ্ধাশ্রমে আসার পরও প্রবীণরা কি ভুলতে পেরেছেন তাদের পরিবার-পরিজনের কথা? প্রবীণরা সন্তান ও প্রিয়জনের জন্য তখনও কাঁদেন।তখনও তাদের কোনো অভিযোগ থাকে না। তারা শত কষ্টেও চান না কোনো অধিকার কিংবা বিদ্যমান অবস্থার প্রতিকার। তাই বলে প্রবীণদের জীবনে কি ফিরবে না মানবতা? রাষ্ট্র কি নেবে না কোনো দায়?
বৃদ্ধাশ্রম এক অর্থে মানবতাহীন এক কারাগার, বৃদ্ধ পিতা-মাতার প্রতি এক নির্মম উপহাস। এটা যেমন সত্য তেমনি এও সত্য যে, বৃদ্ধাশ্রম বর্তমান সময়ের এক তিক্ত বাস্তবতা। সামাজিক, মানসিক ও আদর্শিক নানা পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে একান্নবর্তী বা যৌথ পরিবারব্যবস্থা ক্রমেই ভেঙে যাচ্ছে।
অবহেলিত হচ্ছেন বৃদ্ধ পিতা-মাতা। এতে করে তারা তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিকার অর্থাৎ আশ্রয় ও বাসস্থান হারাচ্ছেন। একপর্যায়ে তাদের বাধ্য হয়ে ঠাঁই নিতে হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে, যা কাম্য নয়।প্রবীণরা সবার শ্রদ্ধাভাজন। বার্ধক্যে প্রবীণদের দায়িত্ব নেয়া প্রত্যেকের কর্তব্য। এ কোনো করুণা নয়, এটি তাদের প্রাপ্য। এই সত্যটা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। আর আমাদের এই ভুলের মাশুল দিতে হয় প্রবীণদের।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯ /এমএম