বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় সরকারি হাসপাতালের পাশে নিয়মবহির্ভূতভাবে ও অবাধে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ইত্যাদি। এসব প্রতিষ্ঠানে সেবা দিয়ে থাকেন সরকারি হাসপাতালে কর্মরত বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞরা।এসব ডাক্তারের আবার রয়েছে নিজস্ব চেম্বার অথবা কোনো বড় ফার্মেসির এক কোণে বসে রোগী দেখার ব্যবস্থা। এভাবেই চলছে দেশের চিকিৎসাসেবা। বিষয়টি অনেকটা ‘রোগীর চেয়ে ডাক্তার বেশি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই সংখ্যাধিক্য ডাক্তারদের কেবল সরকারি হাসপাতালের বাইরেই পাওয়া যায়।
প্রতিষ্ঠিত ডাক্তাররা তাদের কর্মস্থল সরকারি হাসপাতালকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করলেও সরকারি হাসপাতালে সময়ক্ষেপণ করাকে তারা জীবনের মূল্যবান সময়ের অপচয় বলে মনে করেন! তারা মানুষের সেবা করেন না তা নয়।তারা মানুষেরই সেবা করেন, তবে তা বেসরকারি ক্লিনিকে, উচ্চমূল্যের বিনিময়ে। তবে দেশের সব ডাক্তারই এমন নন। কিছু ডাক্তার অবশ্যই রয়েছেন, যারা জনসেবার ব্রত নিয়ে এ পেশায় নিয়োজিত।
বাংলাদেশ একটি দরিদ্র দেশ। এখানে ভেজাল খাবার, আবহাওয়া ইত্যাদি কারণে রোগের পরিমাণও বেশি। দেশের সব উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে এখন আধুনিক হাসপাতাল হয়েছে, আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা হয়েছে, নিয়োগ দেয়া হয়েছে অসংখ্য ডাক্তার।ইতিপূর্বে ডাক্তারদের গ্রামে কর্মস্থলে না যাওয়া বা তাদের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কঠোর পদক্ষেপের কথাও বলেছেন। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বাকিটা ‘যেই লাউ সেই কদুই’ রয়ে গেছে।
দরিদ্র লোকেরা ভালো চিকিৎসার আশায় বড় শহরে গিয়ে নিঃস্ব হয় দালালদের খপ্পরে পড়ে। টাকা ছাড়া সেখানে ভালো কিছু পাওয়ার আশা তারা করতে পারে না- না ভালো ডাক্তার, না কোনো বেড বা ভালো কোনো ওষুধ। সেখানকার ডাক্তাররাই আবার বাইরে ব্যক্তিগত চেম্বারে বা বেসরকারি হাসপাতালে ভুক্তভোগী রোগীদের দেখেন বড় ফি নিয়ে।এই ফি আবার একেকজনের একেক রকম। উপজেলা পর্যায়ে মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও জেলা বা বিভাগীয় শহরে সেটা দ্বিগুণ বা তিনগুণেরও বেশি। সরকার কর্তৃক দ্রুত সহনীয় পর্যায়ে স্তরভেদে নির্দিষ্ট ফি নির্ধারণ ভুক্তভোগীদের সময়ের দাবি।
ডাক্তাররা সরকারি হাসপাতাল এবং নিজ চেম্বারে বসেও ছোটখাটো কারণে রোগীদের নির্দিষ্ট কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠান অনেক টেস্ট দিয়ে। এই সুযোগে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো ইচ্ছামতো চার্জ নেয়। রোগীদের আর্থিক অবস্থা বোঝার সময় নেই ডাক্তার বা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের।সবশেষে ডাক্তাররা নিজ পছন্দের কোম্পানির দরকারি ওষুধের পাশাপাশি কিছু অদরকারি ওষুধও লিখে দেন। আবার ওষুধের দাম নিয়েও রয়েছে কারসাজি। একেক জায়গায় একেক দাম। প্রেসক্রিপশন দেখে ফার্মেসিওয়ালারা ওষুধের দাম ধরেন বেশি। কেননা স্বল্পশিক্ষিত সাধারণ মানুষের পক্ষে ওষুধের প্রকৃত দাম বোঝার ক্ষমতা নেই।
তাছাড়া ওষুধ কোম্পানিগুলোও ক’দিন পরপর ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকার মাত্র ১১৭টি ওষুধের দাম নির্ধারণ করে দিতে পারে। এ সুযোগটিই নিচ্ছে ওষুধ কোম্পানিগুলো।আসলে আমাদের সমাজ আজ মূল্যবোধহীনতায় ভুগছে। অর্থবিত্ত, লোভ আর ক্ষমতার মোহ আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। মানুষের সুকুমার প্রবৃত্তিগুলো পশুশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। তাই সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের বিকল্প নেই।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ২৬ নভেম্বর ২০১৯ /এমএম