বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: গুজব রটিয়ে মানুষের প্রাণহানি ঘটানোসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা এ দেশে নতুন নয়। আমাদের অনেকেই বলে থাকেন ‘হুজুগে বাঙালি’।রসিকতা করে বলা হলেও কথাটি যে পুরোপুরি মিথ্যা নয় তা নানাভাবেই প্রমাণিত। কখনও গুজব রটিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছে, আবার কখনও কিছু না বুঝেই সাধারণ মানুষের ব্যাপক প্রচারণায় সৃষ্টি হয়েছে গুজব। বর্তমানে গুজব ছড়ানোয় বড় একটা শক্তি হিসেবে কাজ করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। আমরা বাঙালিরা একবার সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজব থেকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে দেখেছি, আবার পদ্মা সেতুতে কল্লা কাটার গুজবে রাস্তার পাগল থেকে শুরু করে অনেক নিরীহ মানুষকে পিটিয়ে মারতেও দেখেছি। অতি সম্প্রতি পেঁয়াজের দামবৃদ্ধির পাশাপাশি দেখলাম লবণের দাম বাড়ানোর গুজব ছড়াতে।
কীভাবে ছড়াল এ গুজব? সবার মুখে একই কথা- লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে। একজন আমাকে ফোন করে জানাল, কয়েক দিন পর লবণ নাকি ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে! অনেকেই লবণ কিনতে গিয়ে খালি হাতে ফেরত এসেছেন গ্রামগঞ্জের দোকান থেকে।কারণ ৫ কেজি থেকে শুরু করে ১৫ কেজি পর্যন্ত লবণ কিনে রেখে দিচ্ছেন ভোক্তারা। দোকানিরাও কম নয়, ক্রেতাদের হুজুগে টালমাটাল অবস্থা দেখে অনেকেই ৩০ টাকা কেজির লবণ ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছে।এখন বাস্তবতার দিকে তাকানো যাক। পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ার পেছনে ছিল ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ এবং দেশীয় উৎপাদন কম হওয়া। এ ধরনের কোনো কারণ বা প্রভাব কি লবণের ওপর পড়েছে? যারা এসব চিন্তা না করে তড়িঘড়ি লবণ কিনতে বাজারে ছুটে গিয়েছিলেন, তাদের সংখ্যা বর্তমান সমাজে খুব একটা কম নয়।
এখন লবণের বর্তমান অবস্থা নিয়ে দুটি কথা বলা যাক। বর্তমানে দেশে প্রতি মাসে ভোজ্য লবণের চাহিদা কম-বেশি ১ লাখ মেট্রিক টন। অন্যদিকে লবণের মজুদ আছে সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের লবণ চাষীদের কাছে ৪ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন এবং বিভিন্ন লবণ মিলের গুদামে ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ মজুদ রয়েছে। এছাড়া সারা দেশে বিভিন্ন লবণ কোম্পানির ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণ মজুদ রয়েছে। পাশাপাশি চলতি নভেম্বর থেকে লবণের উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়ায় ও মহেশখালী উপজেলায় উৎপাদিত নতুন লবণও বাজারে আসতে শুরু করেছে। কাজেই লবণের ঘাটতি বা সংকট হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। একটি স্বার্থান্বেষী মহল লবণের সংকট রয়েছে মর্মে গুজব ছড়িয়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় লবণের দাম অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে প্রতীয়মান। এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।আমার প্রশ্ন, আর কতকাল এভাবে বিভ্রান্ত হব আমরা? আসুন হুজুগে পাগল হয়ে গুজবে কান না দিয়ে সত্যটা জানার চেষ্টা করি। মাথা থেকে নামিয়ে ফেলি হুজুগের ভূত।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ২২ নভেম্বর ২০১৯ /এমএম