Menu

বাংলানিউজ সিএ ডেস্ক :: আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চার স্তরের নিরাপত্তা ভেদ করে একজন যাত্রী কীভাবে অস্ত্র নিয়ে বিমানে উঠতে পেরেছেন, জাতীয় সংসদে সে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজী। তিনি বিমান ছিনতাইচেষ্টার ঘটনা তদন্তে সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি গঠন করার দাবি জানিয়েছেন।

সোমবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় রুস্তম আলী ফরাজী এই দাবি জানান।

আর আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদল বলেছেন, তিনি বিমানের ওই ফ্লাইটের যাত্রী ছিলেন না। তিনি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ছিলেন। তিনি ওই বিমানের পাইলট ও ক্রুদের পুরস্কৃত করার দাবি জানান।

পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘বিমান নিয়ে প্রায়ই এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। কখনো দেখি বিমানের ভেতরে পাখি ঢুকে যাচ্ছে, কখনো দেখি চোখ বন্ধ হয়ে গেছে। কখনো দেখি বিভিন্নভাবে দুর্ঘটনার শিকার হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। আসলে এই যে ব্যক্তিটি গেলেন। চারটি ধাপে চেক করে তারপর ভেতরে ঢুকতে হয়। তারপরও একটি লোক অস্ত্র নিয়ে কী করে গেলেন?’

রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘তদন্ত কমিটি একটা ফরমাল প্রসেস। এটা করে। কখনো রিপোর্ট বের হয়, কখনো বের হয় না। এটা নিয়ে আসল তথ্য বের হবে না। কেন ঘটছে? মন্ত্রণালয়, সিভিল এভিয়েশন তাদের দায়িত্বটা কি পালন করেছে? কেমন করে অস্ত্র নিয়ে ঢুকল? প্রধানমন্ত্রী বিমান থেকে নামলেন, তারপরই এই ঘটনা। এটাকে সহজভাবে নিতে পারি না। উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হওয়া দরকার। ’

সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের সদস্যদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করার দাবি জানিয়ে ফরাজী বলেন, তদন্ত করে সংসদকে জানাতে হবে। আর মন্ত্রীকে বলতে হবে, প্রতিশ্রুতি দিতে হবে আর কখনো এমন ঘটনা ঘটবে না। না হলে বিমানে মানুষ উঠবে না, লোকসান হবে।

পাইলট ও ক্রুদের পুরস্কৃত করার দাবি
পয়েন্ট অব অর্ডারে মইন উদ্দীন খান বাদল ফ্লোর নিয়ে বলেন, ‘পত্রপত্রিকায় আর টেলিভিশনে এসেছে আমি ওই বিমানে ছিলাম। আমি ওখানে ছিলাম না। প্রধানমন্ত্রীর একটা অনুষ্ঠানে ছিলাম। তারপর আমি ওখানে ছিলাম ঢাকায় আসার জন্য। এয়ারপোর্টে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম লোকজন দৌড়াদৌড়ি করছে। বলল, একটা প্লেন হাইজ্যাক হয়েছে। বলতে বলতে প্লেনটি ল্যান্ড করল। এই প্লেনটাতেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন।’

মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়কমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিংও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা মনে করেছেন সেখানে থাকা তাঁদের নৈতিক। তিনি টারমার্কে চলে যান। তাঁকে টারমার্কে দেখে হয়তো অনেকে ভেবেছেন তিনি ওই বিমানের যাত্রী ছিলেন।

ঘটনার শেষ পর্যন্ত বিমানবন্দরে ছিলেন জানিয়ে জাসদের সাংসদ বাদল বলেন, ‘নানা কাহিনি বিস্তার লাভ করেছে। মোদ্দা কথা হলো, একজন অস্ত্রধারী ব্যক্তি পেছন থেকে দৌড়ে এসে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করছিল। পাইলটকে দরজা খোলার জন্য বলছিল। পাইলট দরজা খোলেনি। কতগুলো পত্রিকায় দেখলাম পাইলটের সঙ্গে তার মল্লযুদ্ধ হয়েছে। এসব কিচ্ছু হয়নি। কেউ কেউ বলছে, তখন সে একটা গুলি করেছে। ভেতরে যাত্রী ছিল। পাইলট কখনো দরজা খোলেনি। পাইলট তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে। তখন সে বলেছে “আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলতে চাই।” পাইলট তাকে এনগেজ করে বলেছে, “নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী কথা বলবেন, একটু সময় লাগবে।”’

পাইলট ও ক্রুদের ভূমিকার প্রশংসা করে মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, পাইলট ছিনতাইকারীকে ‘এনগেজ’ রেখেছিলেন। পাইলট চট্টগ্রামের বিমানবাহিনীর কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পাইলট ঠান্ডা মাথায় অত্যন্ত দূরদর্শিতা ও সাহসিকতার সঙ্গে চট্টগ্রামে প্লেনটি ল্যান্ড করান। বিমানের ক্রু নিম্মি, হোসেনে আরা, রুমা, সাগর ও সাকুর, তাঁরাও যাত্রীদের আশ্বস্ত করার জন্য ভূমিকা রেখেছেন। তাঁরা বিজনেস ও ইকোনমি ক্লাসের পর্দা টেনে দিয়ে দরজা খুলে দেন, যাতে যাত্রীরা নেমে যেতে পারেন।

মইন উদ্দীন খান বলেন, ‘আমাদের দেশে রিয়েল হিরোরা স্বীকৃতি পায় না। আমি উপস্থিত থেকে দেখেছি ক্যাপ্টেন গোলাম শফি, ফার্স্ট অফিসার মুনতাসীর মাহবুব ও ৫ জন ক্রু; এই বাঙালি ছেলে-মেয়েরা অসম সাহসিকতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাব, এদের যথাযথভাবে পুরস্কৃত করা উচিত। ২ ঘণ্টা ৩২ মিনিটের মাথায় বিমানবন্দর খুলে দেওয়া হয়। দুনিয়ার বহু জায়গায় সারা দিন বিমানবন্দর বন্ধ থাকে।’


Array