বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: দেশের তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ারই প্রথম উয়েফা ‘এ’ লাইসেন্সধারী কোচ মারুফুল হক। বর্তমানে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে চট্টগ্রাম আবাহনীর শিরোপা পুনরুদ্ধার মিশনের কারিগর হয়ে অবস্থান করছেন বন্দরনগরীতে। গত বৃহস্পতিবার দৈনিক ইত্তেফাককে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বললেন দেশীয় ফুটবলের উন্নতিতে করণীয়-বর্জনীয় দিক নিয়ে। উঠে এলো নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নেয়ামত উল্লাহ।শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের মতো টুর্নামেন্ট দেশীয় ফুটবলের উন্নতিতে কেমন সাহায্য করে?জাতীয় দল আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলে। বয়সভিত্তিক ফুটবলে যুবদলগুলোও খেলে। কিন্তু দ্বিতীয় সারির ফুটবলারদের সেই সুযোগ হয়ে ওঠে না। তেমন খেলোয়াড়দের জন্য এ ধরনের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট নিজেকে প্রমাণ করার, নিজেকে পরীক্ষা করার ভালো সুযোগ এনে দেয় বলে আমি মনে করি।
সাম্প্রতিক সময়ে কোচ জেমি ডের অধীনে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ভালো। আট ম্যাচে জয়, দুটি ড্র। ইংলিশ এই কোচের অধীনে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?সম্ভাবনা অবশ্যই ভালো। এই প্রজন্মটা দারুণ। তরুণ ও প্রতিভাবান। তবে আমি মনে করি তাদের মাঠের অ্যাপ্রোচটা আরো ইতিবাচক করতে হবে। যেমন ধরুন এক গোল দিয়ে বিরতিতে আসতে গেলে কিছুটা মানসিক প্রশান্তি নিয়ে মাঠ ছাড়ে, এটা হতে দেওয়া যাবে না। আবার ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়লেও ‘কাজ শেষ’ এমন একটা ভাব দেহভাষ্যে বোঝা যায়। এমন মানসিকতা রাখা চলবে না। ভালো খেলার পাশাপাশি জেতার মানসিকতাটাও থাকতে হবে।
প্রিমিয়ার লিগ দেশীয় ফুটবলে কেমন অবদান রাখছে?
এখন জাতীয় দলে যারা খেলছে, তাদের সবাই কিন্তু এই প্রিমিয়ার লিগ দিয়েই উঠে আসা। এদের অনেকেই আছে, যারা দুই-তিন মৌসুম খেলে জাতীয় দলে এসেছে। পেশাদার লিগ যেহেতু আছে, তার ফলটা তো জাতীয় দল ভোগ করবেই।
পাইপলাইনে আরো ভালো করতে কী করতে হবে?
দেখুন পাইপলাইনে ভালো পানিও আসে আবার নোংরা পানিও আসে। পাইপলাইনে ভালো পানি আসার বন্দোবস্ত করতে হবে আমাদের। সেই ভালো পানির উত্পত্তি হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়। সেখানে যদি সেই মানের ট্রেইনিং না হয়, খেলোয়াড় না থাকে, তাহলে পাইপলাইনে কেবল নোংরা পানিই আসবে। সুতরাং, পাইপলাইন জরুরি না; পাইপলাইনের রিসোর্সটা জরুরি। তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করলেই এটা পাওয়া সম্ভব।
ক্লাব ফুটবলে দীর্ঘদিন ধরে আছেন। এখানে কাজ করতে গিয়ে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে কি পড়েছেন?
বাংলাদেশ ফুটবলে কাজ করবেন আর প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়বেন না, সেটা তো হবে না। প্রতিবন্ধকতা থাকবেই, সেটাকে দক্ষতার সঙ্গে নিজের জ্ঞান-মেধা দিয়েই সামলাতে হবে আপনাকে। প্রতিবন্ধকতা পদে পদেই ছিল আমার সামনে। আমার মেধা আর চেষ্টা দিয়ে, আল্লাহর রহমতেই এতদূর আসতে পেরেছি।
কেমন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিলেন?
এটা বলতে চাই না। প্রতিবন্ধকতা ছিল।
ফুটবলার তৈরির ক্ষেত্রে আপনার অভিজ্ঞতা থেকে কোনো পরামর্শ?
এক্ষেত্রে আমার প্রধান পরামর্শ হচ্ছে তৃণমূল পর্যায় নিয়ে কাজ করা। এই পর্যায়ে প্রচুর কাজ করে খেলোয়াড়দের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এটা করতে পারলে অবশ্যই ভালো ফল আসবে এবং এই কাজটা চার বছর আট বছরের জন্য হলে হবে না। আজ যে বাচ্চাটা জন্ম নিল, ২০ বছর পরে যেন তাকে ভালো ফুটবলার হিসেবে পাই, সেই ব্যবস্থাটা করতে হবে আমাদের। ফুটবলের স্বার্থেই তৃণমূলে উন্নয়ন প্রয়োজন।
দক্ষিণ এশীয় ফুটবলেই আমরা অনেক বছর ধরে পিছিয়ে আছি। সাফ শিরোপা নেই অনেক বছর ধরেই। এর কারণ কী?
এটার কারণ হলো যে অন্যরা এগিয়ে গেছে আর আমরা যেখানে ছিলাম সেখানেই আছি। যদিও আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে। তবে আমাদেরটা গাণিতিক হারে হলে অন্যদেরটা হচ্ছে জ্যামিতিক হারে।
ভারত একটা সময়ে র্যাংকিংয়ে আমাদের কাছেপিঠেই ছিল। তারা এখন র্যাংকিংয়ে একশ’র কাছাকাছি আছে আর আমরা আগের জায়গায় কিংবা পিছিয়ে আছি। এমনটা কেন হচ্ছে?
ভারতের ফুটবলের সংস্কৃতিটা পরিবর্তন করতে পেরেছে, যেটা আমরা পারিনি। ফুটবলের সবগুলো বিভাগেই কাজটা হতে হবে, তখনই ফলটা আসবে।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম উয়েফা ‘এ’ লাইসেন্সধারী কোচ আপনি। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
প্রথমে ভেবেছিলাম উয়েফা প্রো লাইসেন্সটা করব। কিন্তু ব্যাপারটা খুব ব্যয়বহুল আর দুটি মৌসুম অফ থাকতে হবে আমাকে। এ কারণে আপাতত এটা নিয়েই আছি। ভবিষ্যতে এএফসি প্রোটা করার ইচ্ছা আছে।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ২৬ অক্টোবর ২০১৯/এমএম





