প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: দেশের বাজারগুলো ভেজাল পণ্যে সয়লাব হয়ে যাওয়ার তথ্য নতুন নয়। গতকাল বিশ্ব মান দিবস উপলক্ষ্যে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে-গণমাধ্যম ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। প্রথমে খাদ্য প্রসঙ্গে আসা যাক। পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকার হলেও বর্তমান বাজার চিত্র দেখলে শিউরে উঠতে হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য থেকে শুরু করে ফলমূল, মসলা, এমনকি শিশুখাদ্য-কোনো কিছুই যেন আজ ভেজালমুক্ত নয়। সুস্বাস্থ্যের জন্য চাই স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ খাদ্য। ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে ক্যানসার, হেপাটাইটিস, কিডনি, লিভার ও ফুসফুসসংশ্লিষ্ট রোগীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। অনেক গর্ভবতী নারী বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিচ্ছে। বলা যায়, ভেজাল খাদ্য পুরো জনস্বাস্থ্যের জন্যই এক নীরব ঘাতক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বস্তুত খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল এক ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি। গুঁড়া মসলায় ক্ষতিকর রং, ইট বা কাঠের গুঁড়া মেশানো হচ্ছে। দুধে মেশানো হচ্ছে পানি ও ক্ষতিকর পাউডার। মাছ ও ফলমূল তাজা দেখাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফরমালিন, কার্বাইডের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক। এমনকি জীবন রক্ষাকারী ওষুধও ভেজালের থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ভেজাল চক্রের কাছে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে, আর জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে বহুগুণে।
শুধু যে খাদ্যদ্রব্যই ভেজাল হচ্ছে তাই নয়, বাজারে কসমেটিকস থেকে শুরু করে নিত্যব্যবহার্য প্রায় প্রতিটি পণ্যই নকল হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে কিছু অসাধু চক্র। খাদ্য ও পণ্য ভেজালকারী এসব চক্রকে দমন করা অত্যন্ত জরুরি। এ লক্ষ্যে নিয়মিত বাজার তদারকি এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, নকল কারখানার মালিক ও ভেজাল পণ্য বাজারজাতকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে একাধিক সরকারি সংস্থা অভিযান চালালেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো দৃষ্টান্ত নেই। এ কারণে ধরা পড়ার পর জরিমানা ও কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ হলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই পুনরায় তারা একই ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। এর বাইরে অবশ্য প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেকেই নির্বিঘ্নে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। সব মিলে নকল ও ভেজাল পণ্যের কারবারিদের কিছুতেই যেন দমন করা যাচ্ছে না।
তবে আমরা মনে করি, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে নকল ও ভেজালকারীদের অবশ্যই দমন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারি তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথার্থই সক্রিয় হতে হবে। তাদের কাজ হবে দেশের সর্বত্র বাজার ও দোকানগুলো নিয়মিত তদারক করা। ভেজাল তৈরির কারখানাগুলো খুঁজে বের করা। প্রয়োজনে এ কাজে গোয়েন্দা নিয়োগ করা। তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। কারণ ‘সরষের ভেতর ভূত’ থেকে গেলে ভেজাল প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। খাদ্য ও অন্যান্য পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়া ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ ভেজাল মেশালে এবং তা ধরা পড়লে তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে ভেজালকারীরা যাতে ধরা পড়ে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করাই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সরকারকে এদিকটিতে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। যেভাবেই হোক, খাদ্য ও পণ্যে ভেজাল রোধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এটি ভোক্তার অধিকার রক্ষার বিষয়।
প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ১৬ অক্টোবর ২০২৫ /এমএম