Menu

ক্যাসিনো: প্রশংসনীয় অভিযান

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: ক্যাসিনো কী? এদেশের মানুষ আগে জানত না; তবে এখন জেনে গেছে, এটি একটি আন্তর্জাতিক মানের জুয়া। দেশের মানুষ এতদিন জানত, কোটি কোটি টাকা শুধু ব্যাংকে থাকে।

এখন দেখছে, কারও কারও বাসায় টেবিলের ওপরও থাকে। এত টাকা একত্রে ব্যাংকে রাখার মতো জায়গা থাকলেও নিয়ম নেই। একটা প্রাণীর কতটুকু খাদ্যের প্রয়োজন? মূলত পাকস্থলীতে যতটুকু জায়গা থাকে, ঠিক ততটুকু খাদ্যই লাগে। কারও কারও আবার একটু বেশি লাগে, মাত্রাতিরিক্ত। ভালো কী মন্দ, খাবার খেতে খেতে যখন গলা পর্যন্ত হয়ে যায়; তখন আর নড়তে পারে না।অজগর সাপ হয়ে কাঠের গুঁড়ির মতো এক জায়গায় পড়ে থাকে। অতিরিক্ত খাবারটুকু সামনে থেকে সরিয়ে ফেলার শক্তিও পায় না; আর তখনই ‘ধরা’ খায়। দেশে চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান যেন তারই প্রতিচ্ছবি।

ছোট্ট একটা ঘটনা বলি। বেশ আগের কথা; আমি চাকরিতে যোগদান করার দু’তিন বছর পর এক সহকর্মী ছুটিতে গিয়েছিলেন। তার অবর্তমানে কাজের দায়িত্ব পড়েছে আমার ওপর। আমি যথারীতি দায়িত্ব পালন করে চলেছি। কাজ তেমন কিছুই ছিল না; খুবই সামান্য। তবে বিরক্তিকর বিষয় ছিল, তার বিভাগে সংশ্লিষ্ট কাজগুলো করতে যে সময় লাগে; তার চেয়ে বেশি সময় লাগে প্রিন্টআউট করতে।

কম্পিউটারের মেমোরি কম, স্বাভাবিকের চেয়েও অনেক ধীরগতি। একদিন আইটি ইঞ্জিনিয়ারকে বললাম। তিনি বললেন, ‘এই কম্পিউটার চলবে না। ভাইরাসে ছেয়ে গেছে, মাদারবোর্ড পাল্টাতে হবে, অন্য কোনো বিকল্প নেই।’ বিভাগীয় কর্মকর্তাও গুরুত্ব দিলেন না। প্রজেক্টও প্রায় শেষ হওয়ার পথে। এসব কিছু মাথায় রেখে ‘টেনেটুনে’ চলতে লাগল। একদিন আমি নিজেই চালাকি করে সিডিরমে অটোরান ‘এন্টি-ভাইরাস’ প্রবেশ করিয়ে দিলাম।

এক মুহূর্ত দেরি হল না, দ্রুত শ্বাসওঠা মুমূর্ষু রোগীর দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো একটা শব্দ হল এবং সঙ্গে সঙ্গে স্ক্রিন অফ হয়ে লাল অক্ষরে এক লাইনে বিপদ সংকেত ভেসে উঠল। পরে কোনোভাবেই আর সেটাকে রান করাতে পারিনি। আইটি ইঞ্জিনিয়ার আফসোস করে বললেন, ‘বিশ্বাস হল না তো! এর মাঝে ভাইরাস এমনভাবে ছেয়ে গেছে যে, এন্টি-ভাইরাসেও আর কাজ হবে না। ভাইরাসগুলো সংখ্যায় এবং শক্তিতে এত প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এন্টি-ভাইরাসের চেয়েও তারা অনেক বেশি দুর্দমনীয় এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। সুতরাং এতে এন্টি-ভাইরাসের কোনো স্থান নেই। একটাই উপায়- মাদারবোর্ড পরিবর্তন করা।’

অপ্রিয় হলেও সত্য, দেশটা ভরে গেছে দুর্নীতি, লুটপাট, খুন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, ভেজাল পণ্য ও ভেজাল খাদ্যের মতো ছোট-বড় ভাইরাসে। এই ভাইরাস অপসারণ করা বড়ই কঠিন। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এন্টি-ভাইরাস হয়ে একবার দেখিয়ে দিয়েছে, আপাদমস্তক কী পরিমাণ ভাইরাস এই দেশে রয়েছে! তাদের সেই এন্টি-ভাইরাসে পুরোপুরি কাজ না হলেও মোটামুটি একটা ঝাঁকুনি দিয়ে গেছে।

সেইরকম ঝাঁকুনি যদি ধারাবাহিকভাবে চলে, তবে হয়তো আস্তে আস্তে ভাইরাস পুরোপুরি নির্মূল না হলেও অন্তত কমে আসবে এবং বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় নিচের দিকে অবস্থান করবে। এজন্য দেশের মাদারবোর্ড তো আর পাল্টানো যাবে না, যথাসম্ভব এন্টি-ভাইরাসের ওপরই নির্ভরশীল হতে হবে। আর সেই এন্টি-ভাইরাস প্রয়োগকর্তা হল আমাদের দেশের শক্তিশালী প্রশাসন। প্রশাসন চাইলে ছয় মাসের মধ্যেই সম্ভব।

তারা সব পারে, তবে কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে হয়তো আশানুরূপ কিছু করতে পারে না। অপারগ হয়ে তাকিয়ে থাকে বাপের ওপর বসে থাকা দাদা বা দাদাদের দিকে। দাদারাও যদি সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়ে যান, তবে তাকিয়ে থাকতে হয় বড়দাদার দিকে, যিনি শীর্ষস্থানে আসীন রয়েছেন। তিনি অনুমতি দিলেই সবকিছু সম্ভব হয়, অন্যথায় নয়।

সেদিন কথায় কথায় পরিচিত এক নেতা আমার এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘দেশের কোথায় কী হয়, প্রশাসনের লোকজন সবই জানে। চাইলে তারা নিমিষে সব অপকর্মই দমন করতে পারে। কিন্তু আল্লাহর হুকুম ছাড়া যেমন গাছের পাতাও নড়ে না, তেমনই প্রধানমন্ত্রীর হুকুম ছাড়া প্রশাসনও নড়ে না।’

প্রশ্ন হল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি একাই সবকিছু দেখবেন? নিশ্চয়ই না। তার আশপাশে অবস্থানকারী সব মহল তথা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের সবাইকেই সহযোগিতা করতে হবে। আর তার জন্য শীর্ষমহল থেকে সীমাবদ্ধতার সব বাঁধন খুলে দেয়ার নির্দেশ দিতে হবে, যেন চারপাশ থেকে খুব সহজেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া যায়। এ

রই কিছু কিছু নমুনা ক্ষেত্রবিশেষে মাঝে মাঝে দেখা যায়। দেশে বর্তমানে চলমান অভিযান তারই একটা অংশ। তবে এটা ঠিক জেলেদের জাল দিয়ে দীঘি বেষ্টন করে মাছ ধরার মতো নয়; এটা অনেকটা চালনি দিয়ে মাছ ধরার মতো। দৈবাৎ দুই-একটা বড় মাছ ধরা পড়লেও পড়তে পারে; বাকি সবই চুনোপুঁটি।

তবুও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পরিচালিত এমন অভিযান নিঃসন্দেহে অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমরা তার দীর্ঘায়ু কামনা করি। দেশের বিরোধী দলগুলোর উচিত, বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা না করে মন্দ কাজের সমালোচনার পাশাপাশি ভালো কাজের প্রশংসা করা।

কারণ দেশটা কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর নয়। দলমত নির্বিশেষে এ দেশ সবার; এ দেশ ১৭ কোটি মানুষের। দেশ বাঁচলে দেশের মানুষ বাঁচবে। দেশের মানুষ বাঁচলে তবেই আপনাদের দল বাঁচবে। কাজেই ভালো কাজের ক্ষেত্রে উসকানিমূলক বক্তব্য না দিয়ে প্রশংসার মাধ্যমে সহযোগিতা করাই হবে মহত্ত্বের পরিচয়।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯/ এমএম