Menu

রয়টার্সের জনক ও কয়েকটি কবুতর

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: ১৮৩৩ সালে টেলিগ্রাফ আবিষ্কারের পর যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল।এই টেলিগ্রাফকে একটু ভিন্নভাবে ব্যবহারের ইচ্ছায় পল জুলিয়াস রয়টার স্থাপন করলেন নিজস্ব সংবাদসংস্থা- যা টেলিগ্রাফকে কাজে লাগিয়ে সংবাদ আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে সাংবাদিকতার জগতে এনেছিল বৈপ্লবিক পরিবর্তন। রয়টার্সের জনকের জীবনকথা লিখেছেন –

পল জুলিয়াস ব্যারন ফন রয়টারের জন্ম ১৮১৬ সালের ২১ জুলাই। জার্মানির ক্যাসেলে জন্ম নেয়া রয়টার পারিবারিক সূত্রে ছিলেন ইহুদি ধর্মাবলম্বী। তার বাবা ছিলেন একজন ধর্মীয় আইনজ্ঞ।

মা-বাবা তার নাম দিয়েছিলেন ইজরায়েল বিয়ার জোসাফেত। কিন্তু একটা সময় লন্ডনে পাড়ি জমিয়ে, খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয়ে রয়টার পাল্টে ফেলেন তার পরিবারপ্রদত্ত নামটি। এরপর একটা সময় নিজের যোগ্যতাবলে তার নামের সঙ্গে জুড়ে যায় ব্যারন উপাধিও।

তরুণ বয়সে রয়টার তার চাচার ব্যাংকে কাজ করতেন। জার্মানির গটিঙ্গেনে সেই সময় তার সঙ্গে পরিচয় হয় পদার্থবিদ কার্ল ফ্রেডরিক গাউসের। গাউস তখন তারের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সংকেত প্রেরণ করার উপায় আবিষ্কারের চেষ্টা করছিলেন।

১৮৩৩ সালে বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফ আবিষ্কারের মাধ্যমে গাউসের প্রচেষ্টা বাস্তবতায় রূপ নেয়।১৮৪৫ সালের ২৯ অক্টোবর যেদিন রয়টার প্রথম লন্ডনে পা রাখেন তখন তার বয়স ২৯ বছর। ওই সময় তিনি নিজেকে জোসেফ জোসাফেত বলে পরিচয় দিতেন। একই বছরের ১৬ নভেম্বর তিনি পারিবারিক ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হন।এক সপ্তাহের মাথায় ২৩ নভেম্বর ইডা মারিয়া এলিজাবেথ ক্লেমেনটাইন ম্যাগনাসের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

এই দম্পতি একসময় জার্মান নেতৃত্বের চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়ে পাড়ি জমান ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। সেখানে ক্যারিয়ার গড়তে ব্যর্থ হয়ে তারা ১৮৫০ সালে আবার জার্মানিতে ফিরে আসেন।১৮৫১ সালে নিজের সংবাদসংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। আচেন থেকে ব্রাসেলসে কবুতরের মাধ্যমে সংবাদ আদানপ্রদান করতেন তিনি। পথচলা শুরু হয় রয়টার্সের। ওই বছরই লন্ডনে ফেরত যান তিনি।

লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের পাশে রয়টার্সের একটা শাখা অফিস খোলেন। প্রথমদিকে তার কাজের পরিধি ব্যবসায়িক টেলিগ্রাফ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে দৈনিক সংবাদপত্রের প্রচলন বাড়তে থাকলে তিনি বেশকিছু প্রকাশককে তার সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে রাজি করান।রয়টারের বয়স তখন ৩৩, বাস করছেন জার্মানির আচেনে। ডাচ ও বেলজিয়াম সীমান্তবর্তী শহরটির সঙ্গে তখন বার্লিনের টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপন করা হয়। দূরদর্শী রয়টার সেই টেলিগ্রাফ লাইন ব্যবহার করে সংবাদ প্রেরণের কাজ শুরু করলেন।

কিন্তু একটি ছোট সমস্যা রয়ে যায়। আচেন থেকে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের মধ্যকার টেলিগ্রাফ লাইনটি নিরবচ্ছিন্ন ছিল না। মাঝখানে ছিল দীর্ঘ ৭৬ মাইলের একটি বিরতি।তাই ব্রাসেলস আর বার্লিনের মধ্যে তথ্য সরবরাহের জন্য টেলিগ্রাফ লাইন ব্যবহার করা গেলেও আচেন থেকে ব্রাসেলস পর্যন্ত অংশটুকুর ক্ষেত্রে টেলিগ্রাফের ওপর ভরসা করা যেত না। এখানেই রয়টার শুরু করলেন কবুতরের ব্যবহার।

তখন সাধারণত সংবাদ পাঠানোর জন্য ডাকবিভাগের বিশেষ রেলগাড়িই ব্যবহার করা হতো। কিন্তু রয়টারের ব্যবহৃত কবুতরগুলো ওইসব ট্রেনের চেয়েও দ্রুততম সময়ে সংবাদ সরবরাহ করত।এই দুই ভিন্ন ও বুদ্ধিদীপ্ত উপায় ব্যবহার করে রয়টার প্যারিস স্টক এক্সচেঞ্জের হিসাবনিকাশের খবরাখবর সবার আগে পেয়ে যেতেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রয়টার্স তখন অন্য সব সংবাদসংস্থা থেকে এগিয়ে গিয়েছিল। পরে সম্পূর্ণ পথে টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপিত হলে কবুতরের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়।

ভিন্নধর্মী সংবাদ সরবরাহের জন্য খুব দ্রুতই রয়টার্সের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৬৬ সালে আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে ক্যাবল স্থাপিত হয়। বিস্তৃত হতে থাকে রয়টার্সের যোগাযোগের সীমানা।১৮৫৭ সালের ১৭ মার্চ রয়টার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব লাভ করেন। ১৮৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জার্মানির স্যাক্স-কোবার্গ-গাথার ডিউক পল রয়টারকে ব্যারন উপাধিতে ভূষিত করেন।

পরে ইংল্যান্ডেও তাকে ব্যারন উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ফ্রান্সের নিস শহরে তার নিজ বাড়ি ভিলা রয়টারে ১৮৯৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা / ১১ আগস্ট ২০১৯/ এমএম


Array

এই বিভাগের আরও সংবাদ