Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌ ‘পাঁচ দিন অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বন্ধ ছিল। বলা হয়েছে সহজ অ্যাপস চালু হলে অনলাইনে মানুষ আরও দ্রুত ট্রেনের টিকিট কাটতে পারবে। ফলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমে যাবে। কিন্তু তা উল্টো হয়েছে।’-ট্রেনের টিকিট কাটতে গিয়ে ভোগান্তির অভিজ্ঞতা জানিয়ে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে চিৎকার দিয়ে কথাগুলো বলছিলেন যাত্রী তানভীর রহমান।

তানভীর বলেন, আমি গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে সহজ অ্যাপসে ঢুকি জামালপুরের ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য। কিন্তু কোনো টিকিট পাওয়া যায়নি। পরদিন সকাল ৮টা ২০মিনিটে আবারও চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। তারপর আরও কয়েকজনের সহযোগিতা নিতে গিয়ে দেখি সবাই ব্যর্থ হয়েছেন।’

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিভিন্ন খাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে সরকার। তবে প্রযুক্তিতে এখনও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ট্রেনের টিকিট বিক্রি করতে পারছে না সরকারি সংস্থাটি। প্রতিনিয়ত বাড়ছে যাত্রীদের ভোগান্তি। যাত্রীদের হয়রানি কমাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমের মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু করলেও যাত্রীরা টিকিট পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন।

গত ২৬ মার্চ থেকে অনলাইনে যুক্ত হয় সহজ ডটকম। তবে রেলওয়ের টিকিট বিক্রি শুরু করলেও অবকাঠামোগত প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করায় সহজ অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট কেনা মূলত সহজ হচ্ছে না।যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ রয়েছে, অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিটের টাকা পরিশোধের সময় পরিচয় যাচাইয়ের (ভেরিফাই) কোনো পদ্ধতি রাখা হয়নি, বিস্তারিত তথ্য দেখার জন্য নেই ড্যাশবোর্ড ব্যবস্থা, ট্রেনের সময়সূচি দেখার সুবিধা নেই, সিট একবার চিহ্নিত করার পর বাদ দেওয়া যায় না, যাত্রীর প্রোফাইল এডিট করার সুযোগ নেই।

এছাড়াও নতুন ই-টিকেটিং ওয়েবসাইটে ওটিপি কোড সময়মতো আসে না। পেমেন্ট সিস্টেমে মোবাইল ব্যাংকিংগুলোর মধ্যে বিকাশ ছাড়া অন্যগুলোর অপশন নেই। পেমেন্ট সফল হওয়ার পরও অনেক ক্ষেত্রে আসছে না টিকিট। ফলে যাত্রীরা মনে করেন নতুন এ উদ্যোগ সফল হয়নি।

সহজ ডটকমকের আগে ট্রেনের অনলাইন টিকিট ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিএনএসবিডি। সেটির বিরুদ্ধেও হয়রানির নানা অভিযোগ ছিল। তবে আগের হয়রানির চেয়ে সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে সহজ। সহজের সার্ভার ডাউনের কারণে ওয়েবসাইটেই ঢোকা যায় না। স্টেশনে টিকিট কাউন্টারে গিয়েও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের।

যাত্রী তানভীর রহমান  বলেন, আমার দেশের বাড়ি জামালপুর, আমি প্রায় সময় ট্রেনে বাড়িতে যাই। সবসময় ট্রেনে যাতায়াত করতে মহাবিপদে পড়তে হয় আমার। একটা না একটা সমস্যা দেখা দেয়। আমি এখন আসছি অফলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটতে। এখানে এসেও শান্তিতে টিকিট করতে পারছি না। এক ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি টিকিট কাউন্টারের সামনে।

যাত্রী মিজান রহমান বলেন, আমি ময়মনসিংহ যাবো। ট্রেনের টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই অফলাইনে টিকিট কাটতে আসছি। তবে দীর্ঘসময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। আমরা যারা আজকে ট্রেনের টিকিট কাটতে আসছি, আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।মনিরুজ্জামান মনির  বলেন, সহজে টিকিট কাটতে না পেরে কমলাপুর রেলস্টেশনে আসছি। রেলস্টেশনেও মানুষের ভিড়ের জন্য দীর্ঘ সময় ব্যয় হচ্ছে।

যাত্রী রোকসানা জামান বলেন, আমি রংপুর যাবো। সহজে নেই টিকিট। কমলাপুর রেলস্টেশনে মানুষের ভিড়, তারপরও ভিড়ের মধ্যে রোজা রেখে দাঁড়িয়ে আছি টিকিট কাটার জন্য। আর কাউন্টারের লোকজনও দেখা যায় যাত্রীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে দীর্ঘ সময় কাউন্টারে উপস্থিত নাই। এসব দেখে খুব কষ্ট লাগে।

হেনা আক্তার নামে আরেকজন বলেন, সহজে নেই ট্রেনের টিকিট। এই রমজান মাসে যানজট পেরিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে আসলাম কমলাপুর রেলস্টেশন। ভাবলাম রেলস্টেশনে গিয়েই নিয়ে আসতে পারবো টিকিট। কিন্তু খুব খারপ অবস্থা চলছে কমলাপুর রেলস্টেশনে। সময় যত যাচ্ছে ততই মানুষ বাড়ছে স্টেশনে। বেলা ১২টার সময় এসেছি, এখন প্রায় দেড়টা বাজে, লাইনেই দাঁড়িয়ে আছি।হেনা বলেন, সকাল ৮টায় অনলাইনে টিকিট ছাড়ে। ৮টা ১০মিনিটের পরে আর টিকিট পাওয়া যায় না। আমরা যদি অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটতে না পারি তাহলে অনলাইনে টিকিট কাটা সহজ বলে প্রচার করা হয় কেন?

কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারে কর্তব্যরত আবির হোসেন বলেন, মানুষ অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটতে না পেরে স্টেশনে আসছে। যত সময় যাচ্ছে মানুষের ভিড় বাড়ছে। ট্রেনের টিকিট ৫০ শতাংশ অনলাইনে এবং ৫০ শতাংশ কাউন্টারে বিক্রি হয়।রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, প্রথম অবস্থায় নতুন অ্যাপস সহজের কিছু জটিলাতার কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে। যথাযথ প্রক্রিয়ায় সহজ ডটকমকে রেলের টিকিট বিক্রির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার সমাধান হবে।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২১ এপ্রিল ২০২২ /এমএম

 


Array

এই বিভাগের আরও সংবাদ