প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: বইমেলা পার করেছে মাত্র আট দিন। এরই মধ্যে বইয়ের বিক্রি জমে উঠেছে। প্রকাশকদের মুখে হাসি ফুটছে। মেলার যেসব স্টল বা প্যাভিলিয়ন সুবিধাজনক জায়গায় থাকে তারা সাধারণত বেশি পাঠক পায় এবং তাদের বিক্রিও বেশি হয়। তবে এবার অপেক্ষাকৃত কম সুবিধাজনক জায়গায় স্টল বা প্যাভিলিয়ন পড়েছে, তারাও ভালো বিক্রি করছেন।
বুধবার মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বলেন, করোনার গত দুই বছরের তুলনায় নিঃসন্দেহে বইয়ের বিক্রি এবার বেশ ভালো। একেবারে চমকে দেওয়ার মতো না হলেও বই বিক্রির এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে সব প্রকাশনাই মেলা শেষে হাসিমুখেই বাড়ি ফিরতে পারবেন।
এতিহ্য’র ম্যানেজার আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, এবার ২১ ফেব্রুয়ারির দিনে যে পরিমাণ মানুষের সমাগম মেলায় হয়েছে সেটা আমার জন্য অন্যরকম অভিজ্ঞতা। গত ৫ বছরে ২১ ফেব্রুয়ারিতে এত মানুষ আসতে দেখিনি। বইয়ের বিক্রিও খুব ভালো। বিক্রির এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। বলাকা প্রকাশনীর বয়স এখন ২৭ বছর। অন্যান্যবারের মতো এবারও তারা একটি স্টল নিয়ে বইয়ের পসরা সাজিয়েছে। বলাকার প্রকাশক শরীফা বুলবুল বলেন, যারা সুবিধাজনক জায়গায় স্টল বা প্যাভিলিয়ন পেয়েছেন তাদের বিক্রি বেশি। আমাদের স্টলটি খুব সুবিধাজনক জায়গায় না পড়লেও এখন পর্যন্ত বইয়ের বিক্রি ভালো। সামনের দিনগুলোতে এটা আরও বাড়বে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।
মঞ্চের আয়োজন : এদিন বিকালে মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর : বঙ্গবন্ধু-চর্চা শীর্ষক’ আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আসলাম সানী, মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক এবং মামুন সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ একই সূত্রে গাঁথা। তাই এ তিন ক্ষেত্রে অধ্যয়ন ও চর্চা একযোগে, সমানতালে হতে পারে। অভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিংবা ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও হতে পারে। হয়তো একজন সাধারণ মানুষের ঘরেই রয়েছে একটি মূল্যবান মুক্তিযুদ্ধের বা বঙ্গবন্ধুবিষয়ক উপাদান বা দলিল অথবা একজন সাধারণ নাগরিক সাহায্য করতে পারেন অসাধারণ ইতিহাস রচনায়। এর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর পারস্পরিক সংযোগ দরকার। মনে রাখতে হবে এ কাজ কোনো ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়, এ বিশাল দায়িত্ব প্রত্যেক বাঙালির।
এদিন লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন ঝর্না রহমান এবং খায়রুল আলম সবুজ।অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মনজুরুর রহমান ও মতিন রায়হান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী অনন্যা লাবনী পুতুল, শহীদুল ইসলাম নাজু ও নাজমুল আহসান। সাংস্কৃতিক পর্বে ছিল সিদ্দিকুর রহমান পারভেজ পরিচালিত আবৃত্তি সংগঠন ‘মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র’, সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী’ এবং ‘শিল্পীবৃত্ত’-এর পরিবেশনা।ভাষাশহিদ মুক্তমঞ্চের অনুষ্ঠান : বিকালে এই মঞ্চে শুরু হয় কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ। স্বরচিত কবিতাপাঠে অংশ নেন ২৫ জন কবি। বিকালে প্রদর্শিত হয় মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘আমার বন্ধু রাশেদ’।
নতুন বই : বুধবার মেলায় নতুন বই এসেছে ১২২টি। আগামী থেকে প্রকাশ হয়েছে ড. নেহাল করিমের সংকলন ও সম্পাদনায় ‘আহমদ শরীফ : শতবর্ষ স্মারকগ্রন্থ’, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে সুফিয়া বেগম রচিত ‘ফজিলাতুননেছা মুজিবের রাজনৈতিক দর্শন ও একুশ শতকের নারীর ক্ষমতায়ন’, প্রথমা থেকে মহিউদ্দিন আহমদ রচিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম : শান্তি বাহিনী জিয়া হত্যা মনজুর খুন’, কবি প্রকাশনী থেকে খান মাহবুব রচিত ‘বিদ্রোহীর শতবর্ষ : নজরুল পুনর্পাঠ’।
নতুন প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে আরও আছে, আগামী প্রকাশনী চিত্তরঞ্জন দাসের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস ‘কাঁটাতারের বেড়া’, সময় প্রকাশন থেকে আমিনুল ইসলাম ভুঁইয়ার অনুবাদ গ্রন্থ ‘পনেরোটি দার্শনিক প্রবন্ধ’, অন্যধারা থেকে ড. মো. আনোয়ারুল ইসলামের উপন্যাস ‘গল্প কথায় ইতিহাস’ ও সাইমন জাকারিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থ ‘পুথিকাব্য বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’, য়ারোয়া বুক কর্নার থেকে প্রদীপ মিত্রের কাব্যগ্রন্থ ‘সংগ্রামের বাঁশপাতা’, জোনাকি প্রকাশনী থেকে সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ‘গাছটির ছায়া নেই’ ও মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস ‘বধ্যভূমিতে বসন্ত বাতাস’, আদর্শ থেকে আনজীর লিটনের উপন্যাস ‘নীল ঘোড়ার খেলা’ ও কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ ‘নির্বাচিত কবিতা’, অনুভব প্রকাশনী থেকে মামুন মুস্তাফার প্রবন্ধ ‘বাংলা কবিতা : আধুনিকতার অনুসৃতি’, সৃজনী থেকে মুহম্মদ নূরুল হুদার কাব্যগ্রন্থ ‘মা করো এই প্রেমদাসে’, মিজান পাবলিশার্স থেকে আলী ইমামের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার মহানায়ক’, কিংবদন্তী পাবলিকেশন থেকে নির্মলেন্দু গুণের কাব্যগ্রন্থ ‘যখন আমি বুকের পাঁজর খুলে দাঁড়াই’ ও ‘আবার একটু ফুঁ দিয়ে দাও’, গ্রাফোসম্যান পাবলিকেশন থেকে আবু হেনা মোস্তফা কামালের ছোটোগল্প ‘স্বচ্ছন্দচারীর ডায়েরি’, অন্যধারা থেকে দীন মুহাম্মদের কাব্যগ্রন্থ ‘স্বপ্নচাষি’ উল্লেখযোগ্য।
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ /এমএম





