Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: পরিচালক ও প্রযোজক করণ জোহর একবার তার ‘কফি উইথ করণ’ অনুষ্ঠানে কারিনাকে প্রশ্ন করেছিলেন, অভিনেতা হিসেবে কাকে বেশি পছন্দ তার, শাহরুখ খান নাকি শাহিদ কাপুর? করণ ভেবেছিলেন বলিউডে পায়ের নীচের জমি খুঁজতে মরিয়া কারিনা হয়ত কিং খানের নাম বলবেন। কিন্তু সেদিন চমকে দিয়েছিলেন কারিনা। তিনি শাহিদ কাপুরের নাম নিয়েছিলেন। জানিয়ে দিয়েছিলেন, সামনে যত বড় তারকাই থাকুক না কেন, বার বার তিনি শাহিদকেই বেছে নেবেন।

পেশাগত এবং ব্যক্তিগত জীবনে বরাবরই এমন বেবাক কারিনা কাপুর। কেরিয়ারের কথা মাথায় রেখে বাকি নায়িকারা যখন ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে রাখঢাকে ব্যস্ত, সেইসময় নির্দ্বিধায় গোটা দুনিয়ার সামনে শাহিদের প্রতি নিজের ভালোবাসা জাহির করতেন তিনি। কারিনার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কখনো লুকোছাপা করেননি শাহিদও। তা সত্ত্বেও বলিউডের এই ‘দ্য ইট কাপল’-এর সম্পর্ক টেকেনি।

শাহিদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙার জন্য অনেকে কারিনার বর্তমান স্বামী অভিনেতা সাইফ আলি খানকে দায়ী করেন। আবার অনেকে এও দাবি করেন, একাধিক নায়িকার প্রতি শাহিদের আসক্তির জন্যই কারিনা তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পেছনে আসল কারণ কী ছিল, তা নিয়ে আজও নানা জল্পনা রয়েছে।

২০০৪ সালে ‘ফিজা’ ছবির শ্যুটিংয়ের সময়ই কারিনা ও শাহিদ একে অপরের প্রেমে পড়েন বলে শোনা যায়। তারপর থেকে ক্লাব, রেস্তোরাঁ, বিভিন্ন পার্টি এবং অ্যাওয়ার্ড ফাংশনে একসঙ্গে দেখা দিতে শুরু করেন তারা। একে অপরের সান্নিধ্য কতটা উপভোগ করছেন, সংবাদমাধ্যমে সে কথা খোলাখুলি জানাতেও কখনো কুণ্ঠা বোধ করতেন না তারা।

কাপুর পরিবারের মেয়ে হলেও বলিউডে তখনও অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাননি কারিনা। দিদি কারিশমার সঙ্গে লাগাতার তুলনা চলত তার। অন্যদিকে, পঙ্কজ কাপুরের মতো দুর্দান্ত অভিনেতার ছেলে হওয়া সত্ত্বেও শাহিদ আটকে ছিলেন ‘চকোলেট বয়’ ইমেজে। ‘ফিজা’ ছবিতে তার অভিনয় দেখে এক সমালোচক লিখেছিলেন, সস্তার অমিতাভ বচ্চন হওয়ার চেষ্টা করে পুরোপুরি ব্যর্থ শাহিদ।

কিন্তু এই ধরনের সমালোচনাও কারিনাকে শাহিদ বিমুখ করতে পারেনি। বরং শাহিদের সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘চুপ চুপকে’, ’৩৬ চায়না টাউন’, ‘মিলেঙ্গে মিলেঙ্গে’র মতো একের পর এক ছবিতে অভিনয় করতে শুরু করেন তিনি। শোনা যায়, কোনও পরিচালক ছবির প্রস্তাব নিয়ে এলেই তার বিপরীতে শাহিদকে নায়ক করার আবদার জানাতেন কারিনা। একই ভাবে শাহিদও ছবিতে কারিনাকে নেয়ার জন্য সুপারিশ করতেন।

শাহিদ নিরামিশাষী বলে মাছ-মাংস খাওয়াও ছেড়ে দেন কারিনা। কিন্তু এরই মধ্যে শাহিদের সঙ্গে একাধিক নায়িকার নাম জড়ায়। শোনা যায়, ‘ইশক ভিশক’ ছবির সময় অভিনেত্রী অমৃতা রাওয়ের সঙ্গে শাহিদের সম্পর্ক হয়। কারিনার জন্য অমৃতার সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানেন শাহিদ। কিন্তু ‘বিবাহ’ ছবির সময় আবার নাকি একে অপরের কাছাকাছি চলে আসেন তারা। সেইসময় ছবির সেটে কার্যত পাহারা দিতে যেতেন কারিনা।

শুধু অমৃতাই নয়, ‘কিসমত কানেকশন’ ছবির শ্যুটিংয়ের সময় বিদ্যা বালনের সঙ্গেও শাহিদের ঘনিষ্ঠতা হয় বলে শোনা যায়। একই সঙ্গে কারিনার ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বী বলে পরিচিত প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সঙ্গেও শাহিদের ঘনিষ্ঠতার মুখরোচক কাহিনি ফলাও করে সংবাদমাধ্যমনে বেরোতে শুরু করে। তার জেরেই দুজনের সম্পর্কে ফাটল ধরতে শুরু করে বলে শোনা যায়।

কিন্তু এত কিছুর পরও আগের মতোই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একসঙ্গে দেখা যেত কারিনা এবং শাহিদকে। তার পরিবারের লোকজন শাহিদকে কতটা আপন করে নিয়েছেন, তাও জানান কারিনা। বাবা রণধীর কাপুর শাহিদকে ‘ডোডো’ নামে ডাকেন বলেও জানান তিনি।

কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, একের পর এক নায়িকার সঙ্গে শাহিদের ঘনিষ্ঠতার খবরে কারিনার মা ববিতা এবং দিদি কারিশমা কাপুর যথেষ্ট বিরক্ত ছিলেন। কারিনাকে অনেক বার সতর্কও করেন তারা। তার মধ্যেই ইমতিয়াজ আলির পরিচালনায় ‘জব উই মেট’ ছবির প্রস্তাব পান কারিনা। ছবিতে কারিনার বিপরীতে ববি দেওলকে নেবেন বলে স্থির করেছিলেন ইমতিয়াজ।

কিন্তু ববিকে বাদ দিয়ে শাহিদকে নিতে হবে বলে সেইসময় জেদ ধরে বসেন কারিনা। শেষমেশ তার ইচ্ছেই পূরণ হয়। ববিকে বাদ দিয়ে শাহিদকে ছবির নায়ক করা হয়। যাতে একে অপরের কাছাকাছি থাকতে পারেন, আরও ভালো ভাবে দু’জন দু’জনকে বুঝতে পারেন, তার জন্যই কারিনা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে শোনা যায়।

কিন্তু ‘জব উই মেট’-এর শ্যুটিং চলাকালীনই যশরাজের ব্যানারে ‘তশন’ ছবির শুটিং করছিলেন কারিনা। সেখানে সহ অভিনেতা সইফের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। শোনা যায়, শাহিদের জন্য নিজেকে পাল্টাতে পাল্টাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন কারিনা। জোড়াতালি দিয়ে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারছিলেন না আর। সেইসময় তাকে সামলান সাইফ। তাতেই পরস্পরের কাছাকাছি চলে আসেন তারা।

সাইফের মতো একজন পরিণত মানুষের সঙ্গে ভবিষ্যৎ কাটানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন কারিনা। ‘জব উই মেট’-এর শ্যুটিংয়ের মধ্যেই খোলাখুলি শাহিদকে সে কথা জানান তিনি। সেখানেই সম্পর্কে ইতি টানেন। সম্পর্ক ভেঙে গেলেও ‘জব উই মেট’-এর শুটিংয়ে কোনও বিঘ্ন ঘটতে দেননি কারিনা-শাহিদ। কিন্তু ছবির প্রোমোশন শুরু হলে, তাদের বিচ্ছেদের কথা আর চাপা থাকেনি। ওই একই সময় সাইফের সঙ্গে র‌্যাম্পে হেঁটে নতুন সম্পর্কে সিলমোহর দেন কারিনা।

এরপর ২০১২ সালে সাইফের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন কারিনা। ২০১৫ সালে বাড়ির পছন্দে মীরা রাজপুতকে বিয়ে করেন শাহিদ। কারিনা এবং সাইফের একটি ছেলে রয়েছে। দ্বিতীয় বার মা হতে চলেছেন কারিনা। শাহিদ ও মীরার দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে।

সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন একে অপরের সঙ্গে কাজ করেননি কারিনা ও শাহিদ। তবে ২০১৬ সালে ‘উড়তা পাঞ্জাব’ ছবিতে ফের একসঙ্গে কাজ করেন তারা। যদিও ছবিতে দু’জনের একসঙ্গে কোনও দৃশ্য ছিল না। তবে ছবির প্রোমোশনে একই মঞ্চে দেখা যায় তাদের। ‘উড়তা পাঞ্জাব’ ছবিতে কারিনাকে নেয়ার জন্য শাহিদই পরিচালককে অনুরোধ করেছিলেন বলে শোনা যায়। শুধু তাই নয়, ২০১৭ সালে ‘রেঙ্গুন’ ছবিতে কারিনার স্বামী সাইফের সঙ্গে একসঙ্গে অভিনয় করেন শাহিদ।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/০১ নভেম্বের ২০২০/এমএম


Array