Menu

বায়াজিদ গালিব, ক্যালগেরি, কানাডা :: সে বছরে ফাঁকা পেনু কিছু টাকা, করিয়া দালাল-গিরি।
করিলাম মন শ্রীবৃন্দাবন, বারেক আসিব ফিরি…….

……. রবীন্দ্রনাথের এ কবিতার মত দালাল-গিরি না করেও অনার্স পরীক্ষার পর আমি ভাগ্যক্রমে, আর অন্যান্য বন্ধুরা তাদের মেধার কারণে সরকারি কিছু অনুদান পেলাম। বেশ কিছু টাকা। কি করা যায় এ টাকা দিয়ে? সবাই মিলে ভারত ভ্রমণ পরিকল্পনা করলাম। যে কথা সেই কাজ। আমরা আগ্রার তাজমহল, কুতুব মিনার, আজমীর শরীফ দেখার স্বপ্নে বিভোর হয়ে রইলাম। দুর্ভাগ্যক্রমে বা তাদের পারিবারিক কারণেও হতে পারে, কয়েকজন হাঁড়ির বন্ধু আমাদের সাথে যোগ দিতে পারলো না। তার পরিবর্তে দুইজন সহপাঠী বন্ধু আমাদের সাথে যাবার ইচ্ছে পোষণ করলো। আমরাও রাজি হয়ে গেলাম, বন্ধু তো বন্ধুই। এবং তাঁরা হাঁড়ির বন্ধুদের সাথে সালাদ হিসেবে যোগ দিল। আমরা যারা হলের খাবার না খেয়ে আলাদা এক হাড়িতে রান্না করা খাবার খেতাম তাদেরকেই হাঁড়ির বন্ধু বলছি।

এই দুই বন্ধুর একজনকে আমি কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করছিলাম, তাঁর মধ্যে কেমন যেন একটা অস্থির ভাব। আচ্ছা ঠিক আছে নাম গোপন করার লক্ষ্যে এই বন্ধুটির একটি নাম দেয়া যাক, আল-আসাদ। ভাবলাম আমাদের মত আসাদও হয়তো অপেক্ষা করছে ঐতিহাসিক স্থান দর্শনের জন্য, তাই তার অস্থিরতা। পরে বুঝলাম তার অস্থিরতার কারণ অন্য। একদিন সে আমাকে বললো, একটা সমস্যার কথা ভাবছি। আমি বললাম,‘কি সমস্যা? তোর বাসা থেকে রাজি হচ্ছে না! চিন্তা করিস না আমরা গিয়ে তাঁদের রাজি করবো’। সে বললো, আরেনা সেরকম সমস্যা না, আমি ভাবছি ইন্ডিয়া তে তো হিন্দিতে কথা বলতে হবে, আমি তো হিন্দি জানি না। “গাছে কাঁঠাল গোফে তেল” । ভারত ভ্রমণ কবে যেতে পারবো, আদৌ যাওয়া হবে কিনা তাঁর ঠিক নাই সে আছে ভাষা নিয়ে। রাতারাতি ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বনে যাবার ইচ্ছা। তবে তাঁর আগ্রহ আর উৎসাহ আমাকে অনুপ্রেরণা দিলো। আমি বললাম, দূর! এতো চিন্তা করিস কেন? আমাদের মধ্যে অনেকেই হিন্দি জানে তারা আমাদের পক্ষ থেকে কথা বলবে, তাছাড়া আমিও কিছু কিছু জানি, যা জানি তা তোকে শিখিয়ে দেব, তুই যতটুকু পারিস চালিয়ে নিবি, চিন্তা করিস না । ও বললো, এখুনি কিছু বল দোস্ত। মহা সমস্যা। এখুনি বলতে হবে! কি আর করা, আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে ওকে হিন্দি শেখানোর প্রস্তুতি নিলাম। এ যেন একজন অর্ধ শিক্ষিত কৃষক, অশিক্ষিত কৃষককে চাষাবাদ শিখাচ্ছে। বললাম, হিন্দিতে অনেক বাংলা শব্দ আছে যেটা উর্দুতে নাই । উর্দুতে যদি তোকে জিজ্ঞেস করি, আপকা ইসমে শরীফ কেয়া হায়? (এই বাক্যটা কোন এক নাটকের ডায়ালগ, ওখান থেকেই আমার শেখা আমিও সুযোগ বুঝে ওর উপর প্রয়োগ করলাম) ও সাথে সাথে বললো, “আজমীর শরীফ”। আমি হাসি সম্বরণ করে বললাম, আরে না, এর মানে হচ্ছে আপনার নাম কি? এ হলো উর্দু। এ কথাই হিন্দিতে হলে, বলতে হবে আপকা নাম কেয়া হ্যায়? এখানে লক্ষ্য কর, “আপনার” হয়ে গেলো “আপকা”, নাম বাংলার মতই নাম, “কি” হয়ে গেলো “কেয়া”, সাথে “হ্যায়” লাগালেই হিন্দি হয়ে গেলো । ও বললো, বাহ্ বেশ তো! সে বুঝলো কথার শেষে “হ্যায়” লাগালেই হিন্দি হয়ে যাবে। আসাদের এই “হ্যায়ের” প্রয়োগের কথায় পরে আসছি। এটুকু শিখেই বেশ মজা পেয়ে গেলো, বললো, আরো কিছু বল । আমি বললাম আমি তোকে কিছু ফর্মুলা শিখিয়ে দিচ্ছি। যেমন, “আপনার জন্য” আপ কে লিয়ে, “আজকের জন্য” আজ কে লিয়ে, “কালকের জন্য” কাল কে লিয়ে। এবার সে বেশ উত্তেজিত হয়ে বললো আর বলতে হবে না এ তো দেখছি পানির মতই সহজ, এইবার বুঝলাম , তাহলে দাঁতের জন্য হবে দাঁত কেলিয়ে। তার মতে দাঁত কেলিয়ে হাসা হচ্ছে হিন্দিতে হাসা । আমাকে বলার সুযোগ না দিয়েই সে উঠে গেলো , হিন্দি শেখার আনন্দে। আমি যাযাবরের “দৃষ্টিপাত” পড়েছিলাম অনেক আগে। সেখানে শুরুতেই “পুরাণে পুস্পক রথের কথা আছে। তাতে চেপে স্বর্গে যাওয়া যেত। আধুনিক বিমান, রথের গন্তব্য স্থল মর্ত্যলোক। কিন্তু সারথি নিপুন না হলে, যে কোনো মুহূর্তে রথীদের স্বর্গপ্রাপ্তি বিচিত্র নয়”। আমি সারথি হিসেবে অবশ্যই নিপুন না । তা না হলে আমার অল্প হিন্দি জ্ঞানে স্বর্গে পাঠাতে না পারলেও স্বর্গ অনুভব করাতে পেরেছি তাকে। সত্যি কথা বলতে কি আমি হিন্দি একেবারেই বুঝি না। ওকে যা শিখিয়েছি সবই আমার অনুমান। তাহলে তো তাকে আমি আনুমানিক জ্ঞান দিয়েছি! না এ ঠিক হলো না। কথায় আছে না অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী।

যা হোক, আমরা ভারত যাত্রার আনন্দে নেমে পড়লাম যাত্রার আয়োজনে। আমাদের কারো পাসপোর্ট নেই। আমরা কাজ ভাগ করে নিলাম । এক গ্রূপ পাসপোর্ট করতে যাবে, এক গ্রূপ যশোরের টিকেট কিনতে যাবে। পাসপোর্ট হলে আরেক গ্রূপ ডলার এন্ডোর্স করে ভারতীয় হাইকমিশন থেকে ভিসা করতে যাবে । আমাদের এক বন্ধুর ভগ্নিপতি পাসপোর্ট ডাইরেক্টর, তাই তার সহায়তায় পাসপোর্ট পেতে দেরি হলো না । সবাই তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করলো। যশোরে মাসুমদের বাড়িতে রাত কাটিয়ে পরদিন বেনাপোল হয়ে কলকাতা যাত্রা, এই ছিল আমাদের পরিকল্পনা। এক রাতে হৈচৈ করে আমরা রাতের আরামদায়ক বাসে যশোরের উদ্যেশে রওনা হলাম। সে কি উত্তেজনা আর আনন্দ, সে আর ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। বন্ধু মাসুমের বাসায় থাকা আমাদের জন্য ছিল এক বিশাল আনন্দের ব্যাপার। ওর বাবা-মা ভাইবোন সবাই নিমেষে আমাদের খুব আপন করে নিলেন। তাদের আন্তরিক ইচ্ছায় আমরা আরো দুইদিন যশোরে ছিলাম।
একদিন সকালে ঘটা করে, তারুণ্যের উচ্ছলতা নিয়ে ভারতের উদ্যেশে যাত্রা শুরু করলাম। দু’দেশের মধ্যে একটা করিডোর থাকে যাকে বলা হয় ‘NO-MAN’S-LAND’ আমরা সেখানে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে বললাম এখন আমরা কোন দেশেই নাই। না ভারত না বাংলাদেশ। ভারতের অংশ হচ্ছে বেনাপোল। যশোর আর বেনাপোলের আঞ্চলিক ভাষা একই। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেক বেশী। রাস্তার ধারে ওদের শত বছরের গাছ গুলি মাথা উচুকরে দাঁড়িয়ে পথিককে ছায়া দিচ্ছে। আর বাংলাদেশের অংশে গাছপালা কেটে ছাফ। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় ওরা বেশ সচেতন।
আমরা বেনাপোলে ভারতীয় ইমিগ্রেশন অফিসে দাঁড়ালাম। আমাদের সবগুলো পাসপোর্ট একসাথে দিলাম।
“আপনারা কি সব একসাথে” আমি বললাম, “হ্যা দাদা” আমাদের পাসপোর্টে ভিসা পরীক্ষা করে বললো সব গুলো ঠিক আছে কিন্তু এই দুটো পাসপোর্টের ভিসা ঠিক আসল মনে হচ্ছে না।
আমরা একটু অবাক হলাম, এ কি বিপদ!
আমি বললাম, দাদা একটা গল্প বলবো?
সে সবাইকে ডেকে বললো, “এই এদিকে এসো, জয় বাংলার দাদা আমাদের গল্প সোনাবেন”।
আমি বলা শুরু করলাম, ‘দাদা পাগলা কুত্তায় কামড়ালে কি হয় জানেন’?
সে কি কতা! পাগলা কুকুর এলো কোত্তেকে ! এ কতা বলচেন কেন? আমাদের অপমান করচেন?
আমি বললাম, “না রে দাদা, পাগলা কুত্তায় কামড়ালে পেটে চৌদ্দটা ইনজেকশন দিতে হয়”।
“সে তো জানা আচে, তারপর কি বলুন না”।
আমাদের দেশে এই ইনজেকশন সরকার থেকে ফ্রি দেয় কোনো টাকা পয়সা দিতে হয় না। এক লোক ইনজেকশন দিতে গেলো হাসপাতালে। নার্সকে বললো, সিস্টার, নকল ইনজেকশন দিয়েন না কইলাম, আসল টাই দেবেন”।
নার্স বললো, ইনজেকশন সরকার থেকে ফ্রি দেয়, এর আবার নকল হয় নাকি?
ভারতীয় সরকার ভিসার জন্য কোনো টাকা পয়সা নেয় না এর আবার আসল নকল কি?
“ধুর মশায় যান যান আর গল্প শোনাতে হবে না”, আমাদের পাসপোর্টে সিল দিয়ে ছেড়ে দিলেও এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট আবদার করেই নিলো। আমরাও খুশি মনেই দিলাম। উল্লেখ্য, সেই সময় ভারতের ভিসার জন্য কোনো ফি দিতে হতো না।
আমরা রাস্তা দিয়ে হাটছি। উদ্দেশ্য কোনো দোকানে চা পান করবো। এমন সময় একটি গরু মূত্র ত্যাগ করলো এবং ওর ছিটা এসে আসাদের প্যান্ট ভিজিয়ে দিলো। আসাদ বিরক্ত হয়ে বললো, এহ ! গরু চোনাইছে। আমরা সবাই হেসে উঠলাম। আমি বুঝি না গরুর মূত্রকে চোনা আর মানুষের মূত্রকে প্রস্রাব বলা হয় কেন?
সন্ধ্যা নাগাদ পৌছালাম কলকাতায়। এই কলকাতার কত সুনাম শুনেছি আমার বাবার কাছ থেকে। সুন্দর রাস্তা ঘাট, নামি দামি হোটেল। বাবা দের সময় বাংলাদেশে ঢাকায় সবচেয়ে অভিজাত হোটেলছিল হোটেল শাহবাগ। চৌরঙ্গীর কথা বলতে বাবার মুখ উজ্জ্বল হয়ে যেত। বাঙালি ঔপন্যাসিক শংকর চৌরঙ্গী নামে একটি উপন্যাস রচনা করেছিলেন। উপন্যাসটি প্রকাশ মাত্রই জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৫০-এর দশকের কলকাতার পটভূমিকায় রচিত এই উপন্যাসটি চৌরঙ্গী তথা কলকাতার অন্যতম বৃহৎ হোটেল শাহজাহানের কর্মচারীও অতিথিদের অন্তরঙ্গ জীবনের গল্প। হোটেলের প্রাণোচ্ছল ম্যানেজার মার্কোপোলো, সংস্কৃতিবান রিসেপশনিস্ট স্যাটা বসু, দুঃখিনী হোস্টেস করবী গুহ এই উপন্যাসের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র। এ উপন্যাস পড়ে কলকাতা দেখার আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিলো। কলকাতা দেখে বেশ হতাশ হলাম আমি। আমার বাবার গল্প আর বইয়ের বর্ণনা মিলাতে পারলাম না।
কলকাতা আমার কাছে মোটেও বিদেশ মনে হচ্ছিলো না কারণ ভাষা এক। শুধু মাত্র মুদ্রার ভিন্নতায় বুঝতে পারছিলাম এটা ভারত। সমস্যা দেখা দিল আমাদের থাকার জন্য কোনো হোটেলই খুঁজে পাচ্ছি না। কোনো হোটেলেই কোনো রুম খালি নেই। সব হোটেলই পূর্ণ । অবশেষে মিললো “হোটেল পূর্ণ”। কিন্তু এ হোটেলও নামের সাথে মিল রেখেই পূর্ণ। তবে হোটেলের মালিক বেশ আন্তরিক ছিলেন। মালিক আমাদের তুমি করে সম্বোধন করলেন। ‘তোমরা কি বাংলাদেশ থেকে এসেছো’? এখানে সবাই আমাদের বলে ‘দাদারা কি জয় বাংলা থেকে আসছেন’? কিন্তু এই ভদ্রলোক বলছেন বাংলাদেশ। উনি বললেন, আজ আমার হোটেলে কোনো রুম খালি নেই তবে আমি তোমাদের জন্য আজ রাতে থাকার ব্যবস্থা করতে পারি। আমরা যেন পায়ের নিচে মাটি ফিরে পেলাম। আমার বাড়িতে তোমরা অনায়াসেই আজ রাত কাটাতে পারবে। তারপর আমাদের মনে সন্দেহ। আবার কোনো ঝামেলা করে কি না। শুনেছি এখানে অনেক ধান্দাবাজি হয়। আমাদের মনের অবস্থা বইয়ের মতোই পড়ে ফেললেন ভদ্রলোক। বললেন, আমার বাড়ি বাংলাদেশের নরসিংদী। তোমরা আমার দেশের লোক। আমার বাবা মায়ের হাত ধরে এখানে এলেও আমার মন জুড়ে এখনো বাংলাদেশ। না কোনো ঝামেলা হয় নি। ভদ্রলোক তার বিশাল ড্রইং রুমে ঢালাও বিছানা করে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। স্বাগত জানিয়েছিলেন চানাচুর-ঝাল মুড়ি আর চা দিয়ে। আর রাতের ডিনার ছিল মুরগির মাংস আর ডাল ভাত। ওই রাতে তার বাসায় আমাদের থাকার ব্যাপারে বেশ আন্তরিক ছিলেন। সেই রাতে প্রথম হিন্দি সিনেমা দেখলাম বড় পর্দায়, সে কি উত্তেজনা।
আমাদের ভারত ভ্রমণের মোটামোটি একটা পরিকল্পনা আগে থেকেই করেছিলাম। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম ছিল আগ্রা ভ্রমণ। ক্যালকা মেইল কলকাতা থেকে দিল্লি যায় দুই দিনে। আমাদের ট্রেনের টিকেট পেতে দালাল ধরতে হলো। এখানে অবশ্য দালালকে অতিরিক্ত খুব বেশি পয়সা দিতে হয় না। ভারতের রেলগাড়ি যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভালো। আমরা হৈহুল্লোড় করে সবাই ট্রেইনে উঠে যার যার বাঙ্কার দখল নিলাম। লম্বা রেল ভ্রমণের পর একদিন সকালে পৌঁছালাম দিল্লিতে। সবাই ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত। রেল স্টেশনের পাশেই বিশাল এক রেসটুরেন্ট। ওখানে পাতলা চাপাতি ও ডাল সাথে সবজি। আমরা গোগ্রাসে গিললাম। আমাদের দিকে প্রায় সবাই তাকিয়ে ছিলো। তবে এখানে কোনো যাত্রী খাচ্ছে না তা লক্ষ্য করলাম। পরে বুঝতে পেরেছিলাম এটা আসলে কুলিদের রেস্টুরেন্ট। খাবার তো খাবারই, ক্ষুধা পেটে গোগ্রাসে গিলছিলাম। সে তো সবার জন্যই। ক্ষুধার্তদের কোনো শ্রেণী ভেদ নাই।
আমরা দিল্লীতে আমাদের ঘাঁটি স্থাপন করলাম। ওখানে হোটেল সহজেই পাওয়া গেলো। বিশ্ব ঐতিহ্য সনদের বর্ণনা অনুযায়ী এইস্থান গুলি সাংস্কৃতিক অথবা প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের দিক থেকে বিশেষ গুরু ত্বসম্পন্ন। মুঘল সম্রাজ্যের মনোহর স্থাপনাসহ অনেক কিছুই দিল্লি এবং এর আশেপাশের অঞ্চলকে সমৃদ্ধ করেছে। ভারতে রয়েছে বিশ্বের প্রায় সবদেশের আবহাওয়ার ছোঁয়া। এক ভ্রমণে এতকিছু দেখা প্রায় অসম্ভব। আমরা দিল্লীর জামে মসজিদ, কুতুবমিনার সহ বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান দেখলাম প্রথম দিন। দ্বিতীয়দিন আগ্রার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম আমাদের স্বপ্নের তাজমহল দেখতে।
তাজমহল ! একি বিশাল কান্ড! কি তার স্থাপত্য আর নির্মাণ শিল্প। তাজমহলকে মুঘল স্থাপত্য শৈলীর একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয়, যার নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্য শিল্পের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। যদিও সাদা মার্বেলের গম্বুজাকৃতি রাজকীয় সমাধীটিই বেশি সমাদৃত, তাজমহল আসলে সামগ্রিক ভাবে একটি জটিল অখণ্ড স্থাপত্য। ভালোবাসার জন্য একজন কতকিছু করতে পারে। ১৮৫৭সালের সিপাহী বিপ্লবের সময় ইংরেজ সৈন্যরা তাজমহলের বিকৃতি সাধন করে আর সরকারি কর্মচারীরা বাটালি দিয়ে তাজমহলের দেয়াল থেকেমূল্যবান ও দামী নীলকান্ত মণি খুলেনেয়।
তাজমহল দেখে আমাদের এক বন্ধু মন্তব্য করেই বসলো, ‘আগেকার রাজা বাদশাদের অগাধ ধনসম্পদ ছিলো, পত্নী, উপপত্নী, প্রতিপত্তি সবই ছিলো। মনে ছিল ফুর্তি।আমার থাকলে আমিও করতে পারতাম রে।
দিল্লি ফিরে বন্ধু আসাদের শরীর খুব খারাপ করলো। জ্বর আর কাশি। আমরা তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম, সে হিন্দিতে বললো, ডাক্তার মেরে দেমাগ খারাপ হ্যায়। ওর হিন্দি শুনে আমরা অবাক! ডাক্তার হতাশ। ডাক্তার হিন্দির বেইজ্জতির ভয়ে তাকে ইংরেজিতে বলতে বললো। আসাদ এবার বললো, ‘My body is how how does’. ইংরেজি শুনে আমাদের হাসি পেলো, একজন বললো, তুই কি বলতে চাচ্ছিস, আমাদের বাংলায় বল। ও বললো, আমার শরীর কেমন কেমন করছে। এটিকে ইংরেজিতেই তো বললাম। হায়রে বাংরেজী!
ভারত বর্ষ এত বিশাল যা এক মাসে ঘুরে দেখা সম্ভব নয়। না দেখার মানসিক যন্ত্রনা নিয়েই আমরা কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। চোখে রাজ্যের ঘুম। বাঙ্কারে শুয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। এক সময় আমার হালকা ঘুম ভেঙ্গে গেলো। চোখ মেলে দেখলাম আসাদের পাশের ভদ্রলোকের সাথে আলাপ জমানোর চেষ্টা করছে। সে কি বলছে তা পাশের ভদ্রলোক বুঝতে পারছেন না আর পাশের ভদ্রলোক কি বলছে তা আসাদ বুঝতে পারছে না। আসাদ কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার চেষ্টা চালালো, আমার দিবা নিদ্রা ততক্ষন ছুটে গেছে। আমি স্পষ্ট শুনলাম, পাশের ভদ্রলোককে আসাদ আবার হিন্দিতে বলার চেষ্টা করছে, এই যে ভাই আপনি কি কলকাতা যাচ্ছেন হায় ? আসাদের বাংলা ভাষায় হিন্দি শুনে আমি আর নিজেকে হাসি থেকে বিরত রাখতে পারলাম না। আমি প্রাণ ভরে অট্টহাসি দিলাম আমার হাসিতে প্রায় সবার ঘুম ভেঙে গেলো। বেচারা হিন্দি ভাষী আসাদ বিব্রত।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০/এমএম


Array