অগ্নুৎপাত
নীলুফা আলমগীর
আমি একবিংশ শতাব্দীর এক নারী
আমার নিজস্বতা আছে, আমার
চিন্তা, চেতনাকে আমি প্রকাশ করতে
পারি
অনেক নারীই যা পারে না করতে,
ওরা পারে নাক চোখের জল এক করতে
পারে বেঁচে থাকতেই গুমরে গুমরে মরতে।
অনেকে আমাকে নারীবাদী বলে
কটুক্তিও করে, যদিও তাতে
আমার কিছু যায় আসে না।
আমি গীর্জায় গিয়ে যাজকের কথা শুনি,
মন দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করি মন্দিরে যাই, আরতি দেয়া দেখি
পুজোর ভোগ খাই চেটে পুটে
তখন অনেকেই ভাব মেয়েটিতো
দেখছি একেবারে ঘোর নাস্তিক,
তারাই যখন কাছাকাছি আসে
একে অপরের চেনা জানা হয়
বলে ওমা, এ মেয়েতো নিজ ধর্মীয়
সব আচার অনুষ্ঠান পালন করে
ধর্মীয় বিষয়ে অনেক কিছুই জানে।
কেউ কেউ আবার বলে এ মেয়ের দাম্পত্য জীবন কুরুক্ষেত্রের ময়দান
নইলে স্বামী-স্ত্রীর বিভেদের কথা,
নারী নির্যাতন, নারী দুঃখের বয়ান কেন তার কবিতার পাতায় পাতায়
তাদের সাথে যখন সম্পর্ক হয়
ওরা বলে আরে, এ যে দেখছি
‘সুখী দম্পতি’, এক অনাবিল
আনন্দ সরোবর এদের সংসার।
ওরা যখন আমার দ্রোহের লেখা
পড়ে তখন বলে এই মেয়েটা
নিশ্চয় নিঃসঙ্গ জীবন কাটায়
মেয়ে হয়েও পুরুষের মত প্রতিবাদ,
এত কিছু লেখে কেমন করে
এত সময় পায় কি ভাবে?
তোমরাই বলো তো,
কোন শাস্ত্র বইয়ে কি লেখা আছে
নিরাপদে থাকলেও ধর্ষিতার ব্যাথা, লজ্জা, কান্না অনুভব করা যায় না,
ধার্মিক হয়েও ধর্মীয় কুসংস্কারের
বিরুদ্ধে যুক্তিতর্কের উপস্থাপন করা
ধর্মীয় নিশেধের বিরুদ্ধতা করা?
দূষিত শহরে বসবাস করেও গ্রাম্য
সজীবতা অনুভব করা যায় না
আদর সোহাগের মধ্যে থেকেও
প্রতিবাদ করার ভাষা শেখা যায় না।
হে প্রাণ প্রিয় পুরুষ, যদি তুমি বলো
আমার কাছে তুমি কি চাও?
জবাবে বলবো, রক্তমাখা গলিত
সমাজের বেদনার রঙ বদলে দাও
ভালবাসো নারীর হাতে জড়ানো
লাল নীল চুড়ির রিন ঝিন শব্দ
ভালবাসো কিশোরীর দু’কাঁধে ঝোলানো বেনীর হলুদ ফিতে
আবহমান কালের গন্ডি পেরিয়ে
তোমারই পাশে থাকা নারীকে
ভালবাস হৃদয়ের সবটুকু জুড়ে।
প্রিয়তম, তোমার ভালবাসার সবটুকু
নির্যাস আকন্ঠ গলঃধকরণ করেই
আমি সোচ্চার, আমি স্পষ্টভাষী
আমি জলন্ত অঙ্গার, আমি প্রতিবাদী;
যেখানে অনিয়ম, অবিচার, অত্যাচার
আমার কবিতার প্রতিটি পঙক্তি
সেখানে উদগীরণকৃত অগ্নুৎপাত।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/২০ জুলাই ২০২০/এমএম





