বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: দুরন্ত কিশোর ফাহিম। সাত-আট হবে বয়স! সেদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে পতাকাওয়ালাকে দেখে দৌড়ে কাছে গেল ফাহিম। ফাহিম বলল- আঙ্কেল বড় পতাকাটার দাম কত?পতাকাওয়ালা বলল- বাবা তুমি এত বড় পতাকা কি করবে! আর এত বড় পতাকা কেনার টাকা তোমার কাছে থাকারও নয়! এই নাও ছোট্ট পতাকাটা তোমাকে ফ্রিতে দিলাম। নাও..!
আঙ্কেল ছোট পতাকা আমার আছে। আমার বড় পতাকা লাগবে। ঘরের ছাদে ওড়াবো। বলুন আঙ্কেল কত দাম? বাবা বড় পতাকাগুলো ২০০ করে বিক্রি করি। তোমার জন্য দেড়শ রাখতে পারব, না হয় বাবা দাম আমার গায়ে উঠবে, পোষাবে না!ঠিক আছে আঙ্কেল। আমার কাছে এখন অত টাকা নেই। আমি জোগাড় করে রাখব। আঙ্কেল আমার বাড়ি ওই পথের ধারে দেয়ালঘেরা বাড়িটা। আগামীকাল বাজার ত্যাগের সময় গেটে দাঁড়িয়ে ফাহিম বলে ডাক দিলে আমি বের হবো। নগদ টাকায় পতাকা কিনে নেবো। জানেন আঙ্কেল কেন নগদে নিতে বলছি? না তো বাবা জানি না, বলো.. কেন?
আমার যেটা মনে হয়! আমার পূর্বপুরুষরা নগদ প্রাণ- রক্ত দিয়ে কিনেছে যেই পতাকার মর্ম গর্ব সেই পতাকার কাপড় আমি বাকিতে কেনাটা উচিত মনে করছি না, লজ্জা মনে করছি!ঠিক বলেছো বাবা। এই পতাকার সার্থকতা কজনই বা বোঝে। তোমাকে একটা কথা বলি?বলেন আঙ্কেল অনুমতি নেওয়ার কি আছে!
বাবা আমি একজন চাকরিজীবী। এই বিজয়ের মাসে চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে পতাকা বিক্রি করি, দেশকে পতাকাকে খুব ভালোবাসি বলে। এসব শুনে ফাহিম আবেগাপস্নুত হয়ে অপলক পথচলা দেখছে পতাকাওয়ালা আঙ্কেলের! আজব মানুষ তো! এমন স্বদেশপ্রেমী বেঁচে আছে!পরদিন ফাহিমের অনুরোধ মতে বাজার ত্যাগকালে পতাকাওয়ালা আঙ্কেল বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ফাহিম বলে ডাক দিল। কিন্তু ফাহিমের এখনো সেই দেড়শ টাকা জোগাড় হয়নি!
ফাহিম বলল- আঙ্কেল আমি অত্যন্ত দুঃখিত, এখনো টাকা জোগাড় করতে পারি নাই! আগামীকাল ইনশাআলস্নাহ জোগাড় হয়ে যাবে। আরে বাবা ফ্রিতে নিয়ে নাও একটাই তো পতাকা। কত টাকা কত পথে অযথা খরচ হয়ে যায়! তুমি আমার ছেলের মতোই! নাও বাবা এটা নাও!না আঙ্কেল আমি ফ্রিতে নেবো না! টাকা দিয়েই নেবো। ফ্রিতে দিলে রাগ করব আঙ্কেল!আচ্ছা বাবা আজ যাই, আগামীকাল আসব।জমানো নাশতার টাকা দিয়ে তারপর দিন নগদে পতাকা কিনে নিল এবং পতাকাওয়ালা আঙ্কেলকে সাধুবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিদায় দিল।
ফাহিম পতাকা কিনতে পেরে খুবই খুশি, দুদিন নাশতা করতে পারিনি তো কি হয়েছে! ফাহিম পতাকা বুকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদলো আর বলতে লাগলো ওহ! কাপড়ের এই পতাকা কিনতে আমার নাশতা ছাড়তে হলো! না জানি এই পতাকার মর্ম-গর্ব সার্থকতা অর্জনে কতই না অনাহারে থাকতে হয়েছে! কতই না প্রাণ-রক্ত দিতে হয়েছে! আজকের এই দিনে অনেক অনেক শ্রদ্ধা-ভক্তি সেই মহান মানুষের প্রতি, যারা নিজের জীবন দিয়ে এই পতাকার মর্ম-গর্ব অর্জন করে দিয়ে গেছেন যার সুবাধে আমরা এই কাপড়ের পতাকাটাও কেনার সুযোগ পেয়েছি! আলস্নাহ ওপারে ওদের উত্তম জায়গা দান করুক। আমি যদ্দিন বেঁচে থাকব এই পতাকা আমার ঘরের ছাদে উড়বেই! এই পতাকা স্বাধীনতার। এই পতাকা বিজয়ের। এই পতাকা আমার আমাদের সবার।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ০২ জানুয়ারি ২০২০ /এমএম





