Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: টালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিকের দুই সন্তানকে নিয়েই এখন তার জগৎ। কবীর ও কাব্যকে সামলে তিনি যতই সুগৃহিণী হোন না কেন, এখনো তিনি মা-বাবার আদুরে কোয়েল। মায়ের শাড়িগুলো তার প্রিয়। সম্প্রতি ‘মিতিন: একটি খুনির সন্ধানে’ সিনেমার প্রচারে মায়ের শাড়ি পরেই সাক্ষাৎকার দিতে এলেন কোয়েল মল্লিক।

২২ বছরের অভিনয়জীবন কোয়েল মল্লিকের। কোনো বিতর্ক নেই, কখনো কোনো বেফাঁস মন্তব্য করেননি। কোয়েল মানেই যেন ‘পারফেক্ট’।—এমন প্রশ্নের উত্তরে অভিনেত্রী বলেন, আমি যে খুব ভেবে সব কিছু করি তা নয়। এভাবেই তৈরি হয়েছি। আমার কোনো কথা যদি অন্য মানুষকে কষ্ট দেয়, তাহলে সেই কথাটাই বলি না।

তিনি বলেন, নিজেকে অসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। রাগের মুহূর্তে অনেকে খারাপ কথা বলে ফেলেন। আমার ক্ষেত্রে, রাগের মুহূর্তেও আমি নিজেকে অসম্ভব সহজে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। তাই রাগের চেয়ে দুঃখ তাড়াতাড়ি হয় আমার।

অভিনেত্রী বলেন, আর একটি বিষয়— আমি হঠকারী নই। কেউ তাঁতিয়ে দিল, আর উত্তেজিত হয়ে আমি খারাপ খারাপ কথা বলে ফেললাম, সেটি সহজে কেউ করতে পারেন না আমাকে দিয়ে। তাই আলাদা করে নিজেকে যে এভাবে তৈরি করেছি, তা নয়।

কোয়েল মল্লিকের রাগ আছে, নাকি নেই? উত্তরে কোয়েল বলেন, ধৈর্য খুব বেশি। হঠাৎ করে রেগে গেছি, এমনটি খুব কম হয়েছে। তাই অনেকক্ষণ ধৈর্য ধরে রাখার পর হয়তো বলি। তবে সেটিও যে খুব চেঁচামেচি করে, তা নয়। বলতে পারেন—তখন একটু কড়া হয়ে কথা বলি। খারাপভাবে কখনো কথা বলিনি।

পেশাগত কারণে ধৈর্য প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, পেশা বলে নয়, মানুষের জীবনে এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনো পেশাতেই ধৈর্য দরকার। আমাদের তো বটেই। এটা ছাড়া নিজেকে ভাবতেই পারব না আমি।

নতুন ‘মিতিন’ কোয়েলকে যা শিখিয়েছে, তা হলো আত্মবিশ্বাস। তিনি বলেন, মিতিন খুব দৃঢ়, আত্মবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভরশীল একজন নারী, যে একজন গৃহিণী, সেই সঙ্গে গোয়েন্দাও। কে কী ভাবছে না ভাবছে, তা সহজে বুঝতে পারে।

অভিনেত্রী প্রতিবারই এই চরিত্রটা আমায় উত্তেজিত করে। ‘স্বার্থপর’ সিনেমার হল ভিজিটে গিয়েও সবাই বলছিলেন মিতিন দেখাতে চান। মিতিনের মতো আমিও সহজে মানুষ চিনতে পারি।

অনেকেই বলেন— মেয়েদের ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’ আর ‘ক্যারিয়ার ক্লক’ একটা সময় পরস্পরের সঙ্গে সংঘাত ঘটায়। আপনার সঙ্গে হয়েছে কি কখনো? কোয়েল বলেন, এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। একদিকে যেমন আমার ক্যারিয়ার আছে, ঠিক তেমনই আমার সংসার ও সন্তানদের দেখাশোনা— সেটিও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। তাই সংঘাত শব্দটা আমি ব্যবহার করতে চাই না।

অভিনেত্রী বলেন, ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করাটাও যেমন আমার জীবনের অংশ, ঠিক তেমনই কাব্য-কবীরকে বড় করা এবং বয়স্ক মা-বাবার সুযোগ-সুবিধার কথা ভাবাটাও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ জীবনের। কোনো ক্ষেত্রেই আমি ফাঁকি বা অজুহাত দিতে পারব না।

আর মানুষ হিসাবে অজুহাত ব্যাপারটাও আমার খুব বেশি পছন্দের নয় বলে জানান কোয়েল মল্লিক। তিনি বলেন, তাই দুদিকটাই আমি সমানভাবে দেখার চেষ্টা করি। কবীর যেমন জানে, আমি বাড়িতে থাকলে পুরো সময়টাই ওর জন্য। তখন আমি ফোন বা টিভি দেখছি, তেমন নয়।

অভিনেত্রী বলেন, ‘মি টাইম’ আমার কাছে বিলাসিতা। একদিন কবীরকে বলেছিলাম— আমার ‘মি টাইম’ দরকার। ও ভাবছে এটা নতুন শব্দ। জিজ্ঞেস করল, সেটার মানে কী? তখন ওকে বুঝিয়েছিলাম— আমি একটু নিজে নিজে একা একা থাকতে চাই।

তিনি বলেন, সব শুনে আমার কোলে উঠে বসে গেল। বলল— না না মাম্মা, হবে না। নিজের মতো কথা বলতে শুরু করল। আমার মনে হয়, এটাও একপ্রকার আনন্দ।

মানুষ খুব বেশি সফল হলে তাদের বন্ধু ও বন্ধুত্ব থাকে না। আপনার বন্ধু আছে?—এমন প্রশ্নের উত্তরে কোয়েল বলেন, ছোট থেকে যাদের সঙ্গে আমি বড় হয়েছি, তারা থাকেন। আসলে খুব বেশি বন্ধু আমার কখনো ছিল না। বন্ধুর তালিকা খুব কম। যার সঙ্গে নিবিড় যোগ তৈরি হয়, তার সঙ্গেই যোগাযোগ থাকে।

অভিনেত্রী বলেন, স্কুলের কিছু বন্ধু রয়েছে। কলেজের যে প্রিয় বন্ধু আছে, তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। আমরা একসঙ্গে ক্রিসমাস পার্টিও করলাম। অনেক দিন কথা না হলেও জানি, ও আছে।

বর্তমান ডিজিটাল যুগে মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমা থেকে বাংলা সিনেমার অভিমুখ বদলেছে। আগে জুটির টানে দর্শক ভিড় জমাতেন, আর এখন পুরোটাই বদলে গেছে। তাহলে কি বাংলা সিনেমায় নায়ক-নায়িকার জুটির গুরুত্ব কমে যাচ্ছে?—এমন প্রশ্নের উত্তরে কোয়েল বলেন, না, জুটি জুটির জায়গায় ছিল তখনো, এখনো তা-ই আছে।

তিনি বলেন, আমরা অভিনেতারা আলাদা করে জুটি তৈরি করি না। আমাদের কাছে চিত্রনাট্য, চরিত্র আসে। আমরা ক্যামেরার সামনে অভিনয় করি। দর্শক পর্দায় আমাদের দেখে জুটি তৈরি করে। নিজের চরিত্রের গুরুত্ব বুঝেই বরাবর কাজ করেছি, সব সিনেমার ক্ষেত্রেই।

চলতি ডিসেম্বরে আপনার সিনেমা ছাড়া আরও দুটি সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। এই বক্স অফিসে লাভ-ক্ষতির হিসাব, সামাজিক মাধ্যমে তর্ক-বিতর্কের খোঁজ রাখা প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, আমার জীবনে আরও অনেক কিছু আছে, যেগুলোতে মনোযোগ দিতে হয়। আমার স্বামী, উনি সিনেমার প্রযোজক। ওকে যেমন খোঁজ রাখতে হয় ইন্ডাস্ট্রির খুঁটিনাটি, ঠিক তেমনই আমি সৃজনশীল মানুষ। আমি সেই দিকটা ভালো বুঝি।

তিনি বলেন, তবে একই সঙ্গে আমি এটিও দেখি— কোন সিনেমা দর্শকদের বেশি পছন্দ। সেটা আমি বরাবরই দেখি। এমনটি নয় যে, প্রযোজককে বিয়ে করেছি বলে ভাবছি। এটি বাবাই আমার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন, যে নিজের জায়গাটাও যেমন আমি দেখব, ঠিক তেমনই যেন প্রযোজকের কথাও ভাবি, যা বিনিয়োগ করা হচ্ছে, তার অনেকটাই যেন তিনি ফেরত পান। শিল্পী হিসাবে সেই দায়িত্ব আমার রয়েছে বলে জানান কোয়েল মল্লিক।

প্রযোজক নিসপাল সিং রানে আপনার স্বামী। আপনি ওর থেকে পারিশ্রমিক নেন কিনা জানতে চাইলে কোয়েল বলেন, অবশ্যই নিই! এমনই এমনই নাকি! সেদিক থেকে আমি আর রানে দুজনেই খুব পরিষ্কার।

অভিনেত্রী বলেন, ২২ বছরের অভিনয়জীবন আমার। আর আমরা বিয়ে করেছি ১২ বছর হলো। ১২ বছর পারিশ্রমিক ছাড়া তো আর চলবে না। আমার আত্মসম্মানবোধ মারাত্মক। নিজের ব্যাংকে টাকা, ব্যাংকের বই— সব কিছুর হিসাব আছে আমার কাছে।

তিনি বলেন, আর আমার মনে হয়, আমি অর্থনৈতিক দিক থেকে খুবই বুদ্ধিমতী। সব নারীকে বলছি— আপনাদের অর্থনৈতিক সব হিসাব বাবা দেখছেন বা স্বামী দেখছেন, দয়া করে এমন করবেন না। কারণ নিজের জায়গাটা বুঝে রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২০ বছর বয়সে প্রথম পারিশ্রমিক পাই। তখন থেকে আমার কাছে হিসাব-নিকাশ খুব পরিষ্কার বলে জানান কোয়েল মল্লিক।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ /এমএম


Array