Menu

নাজমুল হক ইমন-এর গল্প: মিস্টার গুগল মিসেস গুগল

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: এলাকায় তাদের ব্যাপক নাম-ডাক। এক নামেই সবাই চেনে। যখন গুগল আসি আসি করছে তার আগে থেকেই তাদের পরিচিতিটা বেশ। তবে গুগল নামকরণের আগে নাম ছিল বিবিসি। কিন্তু বিবিসি ছাপিয়ে পৃথিবীর শক্তিশালী সার্চ ইঞ্জিনের নামেই এখন এই দম্পতির পরিচিতি। এলাকায় গেলে মিস্টার-মিসেস গুগল এর বাসাটা কোথায়? বলা মাত্র যে কেউ ডান হাত বা বাম হাত তুলে যে কোনো আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দেবে বাড়ির গেটের রাস্তাটা। শুধু নিজেদের এলাকায় নয়, আশপাশের এলাকাতেও এ দম্পতির বেশ নাম-ডাক এবং পরিচিতি ভয়ঙ্কর।

সাইট.
আফলাতুন খাতুন যিনি মিসেস গুগল আর আলাল আলী যিনি মিস্টার গুগল। অফিসের সবার আতঙ্ক আলাল নামটি। কারণ পেট ফাটা এই লোকটি কোনো কিছু শুনে চুপচাপ বসে থাকতে পারে না। লাভ বা খারাপ যাই হোক সেটি আর পাঁচ/দশকে বলা না হলে পেটটি ফুলে ফেঁপে ওঠে। কিন্তু আফলাতুন খাতুন মানে মিসেস গুগল একটু ব্যতিক্রম।
তার পরও সবাই তাকে ভয় পায় কারণ এই মানুষটি এলাকার সব বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। তাই তার কাছে এলাকার সব বাড়ির হাঁড়ির নানা ধরনের খবর আছে। কেউ যদি কারো সম্পর্কে শুনতে বা জানতে চায় তাহলে মিস্টার-মিসেস গুগল ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। একেবারে গুগল সার্চের মতো অবস্থা। সেখানে পৃথিবীর সব খবর যেমন থাকে তেমনি এই দম্পতি সেই সাইটটির ব্যতিক্রম একটি রূপ।

পিকচার.
‘বুঝি না, কেমন করে ওই ম্যায়ার ফেস ফর্সা হয়। আগে তো দেখছি কেমন ক্যালা। হাত-পা আর মুখ দেখলেই বোঝা যায় গায়ের রং কেমন’ বলতে বলতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো মিসেস গুগল। শোনেন ভাবী, আমাকে ছবি দেখিয়ে কোনো লাভ নেই কারণ ওর প্রতিদিনের ছবি আমার চোখে ভাসছে। শুধু ওর ছবি না, এলাকার যত মেয়ে আছে তাদের সবাইকে আমার দেখা আছে। তাই রূপের অহংকার আমাকে দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। পাশে বসা অন্যবাড়ি থেকে আসা মহিলা বলেই ফেলল, না ভাবী দুলালি তার রূপের যে অহঙ্কার করে তাই আপনারে বললাম। আর ভাবী এমনিতে কি আপনার কাছে আসি। আমি তো জানি কার কাছে গেলে কাজ হবে। এই এলাকার যে কারো বাড়ির খবর আপনাদের কাছে আছে। কেউ জানুক আর না জানুক আপনি জানবেন। আর তাই আপনার কাছে এলে সবই জানা যায়। বিস্তারিত থেকে সংক্ষিপ্ত সব তথ্যও পাওয়া যাবে।

অডিও.
আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে আসছেন আলাল আলী। অফিসের তাকে কেউ গুগল মামা বা গুগল ভাই বলে ডাকে। কিন্তু তাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে সবাই কথা বন্ধ করে দিয়ে সবাই সবার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কেউ চায় না তাদের কোনো কথা মিস্টার গুগলের কাছে পৌঁছাক। কারণ তার এই অডিও কথাটি সর্বপ্রথম কানে যাবে অফিস বসদের। এরপর পিয়ন থেকে শুরু করে একেবারে অফিসের বাইরের মানুষও জানবে। আর ফোনে যে কত মানুষকে জানানো হবে তা আন্দাজ করা যায় না। সব কিছুই জানেন আলাল আলী কিন্তু তার পরও কানে সব খবরই আসে। না এলেও নিজেদের অডিওবার্তা নিজেরাই পৌঁছে দেন মিস্টার গুগলের কাছে। এটাও তিনি জানেন।

ভিডিও.
অনেকদিন পর একসঙ্গে মিস্টার গুগল আর মিসেস গুগল টিভিতে খেলা দেখতে বসেছে। কিন্তু খেলা দেখার সময় হঠাৎই দেখতে পায় পাশের বাসার দুলালি এক ছেলের সঙ্গে বসে আছে। এই দৃশ্য দেখা মাত্র দুলালির বাবা আর মাকে ফোন করে এই ইনফরমেশন দেয়া শেষ। সঙ্গে ছেলেটির পুরো বায়োডাটাও। শুধু তাদের একটাই কথা, ‘পস্তাবেন ভাবী, পস্তাবেন। সময় থাকতে সাবধান করে দেন মেয়েকে’। এরপর দুলালি কোথায়, কী করে, কী করছে, ভালো না মন্দ এ সব বিষয়ে বিশদ আলাপ। তারপর দুলালিকেও ফোন দিতে বাদ নেই। তার বাবা-মা তাদের মাঠে খেলা দেখার বিষয়টা জানে। তারা জানার পর কী বলল, সেটাও দুলালির কানে দিতে ক্ষণিকের ব্যাপার মাত্র।

বই.
বইমেলা শেষ হয়ে গেছে মাত্র ক’দিন আগে। তাদের বেশ ক’জন বন্ধু বই লিখেছে। বইগুলো পড়ে তাদের ভালোও লেগেছে। তাই কথায় কথায় মিস্টার গুগল আর মিসেস গুগল সেই বইগুলো থেকে নানা ছন্দ কাব্যিক কথাগুলো বলে। আবার কথাগুলো বলার পর কোন বন্ধুর বইয়ে এগুলো লেখা ছিল সেটিও বলে। শুধু যে তাদের কাছে খারাপ-মন্দ তথ্য আছে তাও না। তাদের কাছে এলাকার সব ধরনের সংবাদ আছে। আছে সব বাড়ির হাঁড়ির খবর। তবে মূলকথা, বন্ধুদের সবাই তাদের বাড়িতে সৌজন্য বই পাঠিয়েছেন কারণ তাদের মতো বন্ধু থাকতে এর চেয়ে সহজ উপায়ে এলাকায় প্রচার করার আর দ্বিতীয় কোনো সুযোগ নেই।

অ্যাপ্লিকেশন.
মানুষকে ঘায়েল করার সব রাস্তায় আলাল-আফলাতুল বা মিস্টার-মিসেস গুগল পরিবারের জানা। আর এ কারণে তাদের সঙ্গে কেউ পারতপক্ষে ঝগড়া-ঝাঁটি, আলাপ-আলোচনা কেউ করতে চায় না। এ যেন কান টানলে মাথা আসে এই রকম অবস্থা। তবে তাদের কাছ থেকে কেউ কেউ ফ্রি ডাউনলোডের মতো টিপসও নিয়ে যায় বিভিন্ন পরিবারের। আর এলাকায় কেউ বিয়ে, আত্মীয়তা শুরুর আগে গুগল বাড়ি এসে তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে যায়। ঘটকরা তো পারলে বাড়িতে বসে থাকেন এই অবস্থা।

পুনশ্চ. এই ধরনের দম্পতি কারো কখনো ক্ষতি করে না। কিন্তু তাদের অগোচরে বা ভুল-ভাল তথ্যের কারণে অনেকের ক্ষতি হয়ে যায় কখনো কখনো। তবে হাসি দুঃখ আর বিভিন্ন তথ্য নিয়ে তাদের সংসার। প্রতি এলাকায় বিবিসি বা সিএনএন বা আলজাজিরা দম্পতি আছে, ছিল এবং থাকবে পাশাপাশি গুগল দম্পতিও বিস্তার লাভ করবে আমাদের জীবনে।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯/ এমএম


Array