বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: প্রাপ্তবয়স্কদের পর এবার দেশের শিশুদেরও স্মার্টকার্ড প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দেশের সব নাগরিককে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে এরইমধ্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী এই সংস্থাটি। এক্ষেত্রে জন্মের পর এক বছর বয়স পূর্ণ হলেই শিশুদের সব তথ্য নিয়ে রাখা হবে। এরপর ছয় বছর বয়স পূর্ণ হলে তার আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ নিয়ে দেয়া হবে স্মার্টকার্ড। তবে তারা ভোটার হবে প্রাপ্তবয়স্ক হলেই। ১৮ বছর পূর্ণ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তারা ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়ে যাবে।
ইসি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের সব নাগরিককে স্মার্টকার্ড দেয়া সংক্রান্ত কমিটি সম্প্রতি এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই কমিটির সুপারিশ কমিশনে অনুমোদন হলেই পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হবে।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, সব নাগরিককে এনআইডি সরবরাহের কার্যক্রম চালু করতে এক বছর বয়সী শিশুদের তথ্য নেবে নির্বাচন কমিশন। তাদের দশ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেবে ছয় বছর বয়স পূর্ণ হলে। কেননা, ছয় বছরের আগে আঙ্গুলের রেখা স্পষ্ট হয় না। তাই ছয় বছর বয়স পূর্ণ হলে তথা ছয় বছর প্লাস শিশুদের স্মার্টকার্ড দেয়া হবে। এ কার্যক্রমের জন্য ওই কমিটি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনার সুপারিশ করেছে। এতে সফলতা এলে তা দেশের সব উপজেলায় ছড়িয়ে দেয়া হবে। এভাবে স্মার্টকার্ড সরবরাহ করার পর যাদের বয়স যখন ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তখনই তারা ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন।
ইসি কর্মকর্তারা বলেন, ১৮ বছরের কম বয়সীদের এনআইডি না থাকার কারণে বিভিন্ন সেবা সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে পাসপোর্ট, ভিসা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ফটো আইডি সংক্রান্ত পরিচিতি নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি কাজে এনআইডি খুব কাজে দেয়। এসব বিবেচনায় সব বয়সীদের এনআইডি দিতে চায় সংস্থাটি। বর্তমানে ১৪ বছর বয়সীদের তথ্য নেয়া হচ্ছে। যারা ১৮ বছর পূর্ণ হলে ভোটার তালিকায় যুক্ত হবে। এ বিষয়ে ইসির একজন অতিরিক্ত সচিব জানিয়েছেন, সব বয়সীদের এনআইডি সরবরাহে কার্যক্রম চালু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটি কাজ করছে। কমিশন সিদ্ধান্ত দিলেই কার্যক্রম শুরু হবে।
উল্লেখ্য, এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে। পরবর্তীতে সে তালিকার ভিত্তিতেই সে সময়কার ৯ কোটি ভোটারকে লেমিনেটিং করা কাগজে এনআইডি সরবরাহ করা হয়। হুদা কমিশন ২০১১ সালে নাগরিকদের স্মার্টকার্ড দেয়ার জন্য বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় একটি প্রকল্প হাতে নেন। দেশের ১০ কোটি ভোটারকে স্মার্টকার্ড দিতে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিয়া)’ নাসের ওই প্রকল্পের আওতায় ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে স্মার্টকার্ড উৎপাদন-বিতরণে অবার্থুর টেকনোলজিসের সঙ্গে চুক্তি করে ইসি।
প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের জুনে। পরে মেয়াদ ১৮ মাস বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপির সহায়তায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ছিল; ২০১১ সালের তাদের সঙ্গে ইসির চুক্তিও হয়। কিন্তু দেরির কারণে ফরাসি কোম্পানিটির সঙ্গে ইসি চুক্তি বাতিল করায় এই প্রকল্পে অর্থায়নে অনাগ্রহ দেখায় বিশ্বব্যাংক। ফলে দেখা দেয় জটিলতা। ১০ কোটি ১৮ লাখের বেশি ভোটারের মধ্যে তিন কোটি ভোটারের হাতেও স্মার্টকার্ড দিতে পারেনি ইসি। তবে যারাই স্মার্টকার্ড পেয়েছেন কিংবা পাচ্ছেন তারা আইডিয়া নামের এই প্রকল্পের মাধ্যমেই পাচ্ছেন। আগামী ডিসেম্বরে এ প্রকল্পটি শেষ হবে। এরপর সরকারি তহবিল থেকে প্রকল্প নিয়ে শিশুদের স্মার্টকার্ড সরবরাহের কার্যক্রম চালাবে ইসি।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯/ এমএম





