Menu

বায়াজিদ গালিবের কবিতা

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::

নিষিক্ত মৃত্যু নিয়ে ভ্রূণজলে সাঁতার কাটছে মানুষ

নিষিক্ত মৃত্যু নিয়ে ভ্রূণজলে সাঁতার কাটছে মানুষ ।

সাঁতরে সাঁতরে সে খুঁজে পায়- জীবন– যুদ্ধবাজ এক ভুবন-ডাঙা ।

সবুজ তৃণের বিছানায় হামাগুড়ি খায়; শিশুতোষ কল্পনায় পায়ের পাতায় পদ্ম;

স্বাপ্নিক নারীদের স্তনবোঁটা শুকিয়ে এলে

ঝিঙার বিচির মতো দুধদাঁত ভেঙে যায় ; স্থবির পৃথিবীর উঠোনের কোণে

এক্কা-দোক্কা , চিঁ-কুতকুত , চোখপাড়ানি চিনা জোঁক– খেলে একটি শিশু

খেলতে খেলতে শেখে ’পরিচয়’– কী করে তুলতে হয় বিবেধের দেয়াল–

শেখে কিভাবে ছুড়তে হয় সহশিশুটির মুখে এক দলা থুতু!

খেলতে খেলতে শেখে– কী করে নিন্দে করতে হয় সবচেয়ে সুন্দর– কালো বালিকার

খেলতে খেলতে শেখে– কী করে নিজের মায়ের উদ্দেশ্যে ছুড়ে দিতে হয় বর্ণ-ভাষা-ঢিল–

জননীর আঁচলে কিরিচ ফুঁড়ে দিয়ে সে উচ্চারণ করে শ্লোক:

‘ওই চুতমারানী , ভাত দে!’

নিষিক্ত ভ্রূণগুলোই– সে এক গোত্র অথবা যুদ্ধবাজ শয়তান হয়ে ওঠে

প্রত্যূষে অথবা রহস্যময় সন্ধ্যায়– যেখানে জ্বলজ্বল করেছিল সহস্র নক্ষত্রের অলীক আগুন।

এক হাতে হিরোশিমা , আরেক হাতে নাগাসাকি–

পারমাণবিক ব্যাঙের ছাতার নিচে এসে ভ্রূণগুলো কী-রকম কিলবিল করে !

পারলৌকিক বিশ্বাস জমাট বেঁধে উঠলে ধড়ফড়িয়ে গড়গড়িয়ে নেমে আসে

’সোনার মদিনা’ থেকে বাংলাদেশ–

’লড়কে লেঙ্গে’ থেকে ’আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি !’

কহর দরিয়া থেকে পশ্চিম তীর কিংবা ইউক্রেনের শীতল অরণ্য– সর্বত্র

’ভালোবাসা’ ’ভালোবাসা’ বলে কফিন-চুম্বনে চোখ বুঁজে থাকে

বারো দিনের শিশুরা ।

সৌভাগ্যক্রমে এই শিশুদের জীবনের কোনো স্মৃতি নেই ;

’জীবন কী ?‘– এই প্রশ্নের উত্তরে তাহারা বুক পেতে কুড়িয়ে নিয়েছে নিরুত্তর মৃত্যুর পাহাড় ।

হেরা পর্বতের সিঁড়ি বেয়ে ,

ডাকাতিয়ার কিনারে এসে পাললিক মাটি ঘেঁষে গুণ টেনে হেঁটেছিল যাঁরা–

তাহারা– কৃষকের শ্রমিকের– মগজ আগুনতপ্ত তাফাল– টগবগিয়ে ফুটছে ;

লক্ষ্মীবিলাস ধানের বদলে মানুষের মাংসের পদ রান্না করছেন রাজনীতিবিদগণ–

কলিজা-পোড়া গন্ধে গণভবনের গোলাপজামের বাগানটি ম’ ম’ করছে !

ভ্রূণে নিষিক্ত মৃত্যু নিয়ে ভ্রূণজলে সাঁতার কাটছে মানুষ ।

 

মেষ গবেষণা ফিল্ড

আমি কি তোমারে দিছি ভোট? বলো, দিছিলাম?

দেখাও তাহলে একবার সেই নীল দাগ

দেখোনি নখের আয়নায়– বিদ্রোহ , রাগ?

প্রতিবাদে দেই নাই ভোট; দেই নাই ঘাম;

ব্যভিচারে ছারখার করে কেটে নিছো ঠোঁট

আঙুলের সবগুলো নখ এক কোপে শেষ

মুখে নাই ভাষা আর আমাদের; ভ্যাবাচ্যাকা মেষ–

হ’য়ে গলির কিনারে হাগি– গোল-চোখ-জোট ।

আঁধারে দাঁড়িয়ে শুনিতেছি– এডিটরস্ গিল্ড:

শনিবারে । শনির দশায় আমাদের কাল–

কী-রকম মোড়ানো এখন! দেখো, নপুংসক

ছয় আলোচক– যেন ’মেষ-গবেষণা-ফিল্ড!’

হাতে লিপলেট , ছয় গাধা কথার চাঁড়াল

মুখে তন্ত্রকথা– কী বাহাস ! নাই কোনো শোক!

 

অমরত্ব

অমরত্ব ললাটে লিখে সংসার পেতেছি।

তারপর দেখেছি–

ছিঁড়ে-আনা গোলাপের পাপড়িগুলো কতোটা ভঙ্গুর ।

জড়াজড়ি করে বেঁচে থাকার যে মোহ আমাদেরকে জাগিয়ে রেখেছিল

রাতভর ভৌতিক জ্যোৎস্নায়, ভেজা ছাতিমের গন্ধের ভিতর;

শ্রাবণের রাত্রির অন্ধকারে নক্ষত্র গণনা শেষে ঘুম নেমেছিল দু’চোখে ।

জেগে শুনি, শেষ ট্রেনের হুইসল বাজছে দূরে কোনো খেজুর বাগানে ,

বাতাসের সাঁকো কী রকম ঢেউয়ে দুলে ওঠে নীলিমার পথে ;

ডাকাতিয়ায় বাঁধ দিলে যে-নদী একদিন মরে গিয়েছিল

সে-নদীর সরপুঁটি-জলে একবার ঝিলিক দিয়ে আমাদের সব গল্প

তলিয়ে গিয়েছে বিছানায় বাকরুদ্ধ জননীর নয়নের জলে ।

ভয়

সারা রাত অপেক্ষা চলছে আমার– একা

কুপির বাতি নিভে এলে খালেকের কলার বাগানে ভৌতিক–

ঘুঙুরের তালে নাচে কিছু পরিযায়ী ভূত ;

আঁন্ধিপুকুরের পাড়ে, ঝড় নেই– ভেঙে পড়ে লতিফের বাঁশঝাড়

রাবেয়ার ছেলেটিকে নিয়ে গেছে জিহ্বায় মোহর-আঁকা এক পরী

টিনের চালের উত্তর কোণায় ঝমঝমিয়ে হেঁটে যায় কে যেন !

কাঁথার নিচে ওম নেই , সারা রাত ভয়ে কাঁপি– একা ।

অভাবের তাড়নায় শীল পাটায় মাথা কুটে মরে গেছে মফিজের মা’য়…

আনোরা ফুপুর মাটির চুলাটি ভেঙে ফেললে, হিংসায়– বেহায়া ক্ষুধার্ত কুকুর

রাতভর তিনি কাঁদছেন আর খুঁজছেন ধান-পোকা-বিষের শিশি !

সারা রাত অপেক্ষা চলছে আমার– একা, চাঁদ যেমন অপেক্ষা করে শাপলার বিলে !

মহুয়া বনে একবার কে যেন হেসেছিল রাত্রিগহিনে ? সে-কি তুমি !

কাল-ভাইরাল

অন্তর্জালিক পত্রসূত্রগুলো এখন ’প্রাক্তনী’ গল্পের অক্ষরে , শব্দে , ভুল-যতিচিহ্নে মুখর ।

একাডেমি চত্বরে পৈতা-মোড়ানো তোমার ’দুধেল‘ উপস্থিতি বলে দেয়–

মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙিয়ে কী সহজেই কেনা যায় ’জয়বাংলা’ নামের অবিস্মরণীয় শব্দটিকে !

উদারনৈতিক যোনি-বাণিজ্যে তোমার দক্ষতা এখন কিংবদন্তিতুল্য জাদুমায়া !

কালা কুত্তার লিঙ্গ চুষে নিস্তেজ করে দিতে পারো বিপ্লবের বুলি-আওড়ানো কিছু মুখ ।

স্বপ্নের দেয়ালে দেয়ালে এঁকে দিতে পারো ক্ষেপণাস্ত্রের সুতীক্ষ্ণ ডগা– মানববিদ্বেষী স্লোগান ;

সম্পর্ক ভাঙিয়ে করতলে তুলে নিতে পারো সামাজিক উন্নয়নের নির্লজ্জ পদবী ,

কালো চশমায় হয়ে উঠতে পারো অন্ধের মতো কাঙাল ভিখারী ,

সম্প্রতি দেখলাম: নিতম্বের তলে বিছিয়ে নিয়েছো ঘূর্ণমান চেয়ারের স্প্রিং , দোল খাচ্ছো–

এমনকি ছাদবাগানের নীলমণিহারে লিখেছো তো আত্মবিক্রয়ের সক্রিয় প্রত্যয় !

অন্তর্জালিক পাতায় পাতায় গণনাটকের দৃশ্যে এখন স্পষ্ট– তুমিই কালের ভাইরাল !

বিচূর্ণ দম্ভের পর, নোবেলচত্বরে তোমার নাম দেখতে না-পেয়ে

আমরা পুনরায় হতাশ হয়ে হাপিত্যেশ করছি ; হয়তো হিংসায় কাতরাচ্ছি– একগুচ্ছ ব্যর্থ বিপ্লব !

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ২৬ সেপ্টেম্বর  ২০২৪ /এমএম