Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: এক সপ্তাহ আগেও হাসি-খুশি ছিলেন সাংবাদিক হাসান মেহেদীর পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যার পর যে কান্না শুরু হয়েছে তা থামেনি আজও। অবিরত কান্নায়ও শুকায়নি তাদের চোখের জল। কিছুক্ষণ পর পর বাবা কোথায় জানতে চাইছে দুই অবুঝ শিশু। একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা বৃদ্ধ মা-বাবা। বিয়ের চার বছরের মাথায় বিধবা হওয়া ফারহানা আক্তার পপি এখন পাগলপ্রায়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের খবর সংগ্রহে গিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হাসান মেহেদী। সেদিন বিকালে শুরু হওয়া মেহেদীর মা-বাবা আর স্ত্রীর কান্না থামেনি আজও। ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা আর অর্থনৈতিক সংকটের চিন্তায় তারা এখন দিশেহারা। সাঁতরে বেড়াচ্ছেন অথই সমুদ্রে।

নিহত মেহেদীর স্বজনরা  জানান, ঘটনার দিন বিকাল ৩টার দিকে বাবা-ছেলের কথা হয়েছিল। একে অপরের খোঁজ খবর নিয়েছিলেন। জীবনের অমূল্য ধন হারাতে যাচ্ছেন, মেহেদীর বাবা তখনো কি এটি কি জানতেন? মেহেদীও কি জানতেন তার সামনে অপেক্ষা করা ভয়াবহ বিপদের কথা? কিন্তু ‘বিধির লিখন না যায় খণ্ডন’ গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারালেন তিনি। যাত্রাবাড়ীতে ঘটা সেদিনের ঘটনায় মেহেদীর মা-বাবা আর স্ত্রীর জীবনে নেমে এল ঘোর অন্ধকার। মা-বাবা হারালেন তাদের অবলম্বন ছেলেকে। আর মেহেদীর স্ত্রী হারালেন তার অভিভাবক, আশা ভরসা ও আশ্রয়কে। অপরদিকে দুটি শিশু সন্তান হারালো তাদের স্নেহ আর ভালোবাসাকে। বাবা কী জিনিস তা বোঝার আগেই তাদেরকে হতে হলো এতিম।

সেদিন দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পরেই তাদের শুরু হওয়া কান্নার রোল থামেনি আজও। অবিরত কান্নার পরও শুকায়নি তাদের চোখের জল। পুত্র শোকে মা-বাবা আর স্বামীর শোকে স্ত্রীর চোখে ঝরনার মতো অবিরল ঝরছে জল। দুঃসময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় কখনো কখনো নির্বাক হয়ে পড়ছেন মেহেদীর স্ত্রী পপি। বার বার তাকাচ্ছেন অবুঝ দুটি শিশু ও মেহেদীর ছবির দিকে। এ অনিশ্চয়তার শেষ কোথায় জানেন না তিনি। খুঁজছেন সে পথ। স্বামী হারানোর শোক কাটানোর পাশাপাশি নিজের ও দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা তাকে আরও বেশি ভাবিয়ে তুলেছে। অপরদিকে বৃদ্ধ বয়সে বেঁচে থাকার অবলম্বনকে হারিয়ে অথই সমুদ্রে পড়ার মতো অবস্থা এখন মেহেদীর মা-বাবার। শেষ বয়সে এসে এমন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হবেন তা কখনো ভাবতে পারেননি তারা। পরিস্থিতির শিকার হয়ে অঝোর কান্নায় বুক ভাসাচ্ছেন তারা। বার বার জানতে চাইছেন কী হবে তাদের? কে নিবে তাদের দায়িত্ব?

নিহত মেহেদীর স্ত্রী ফারহানা আক্তার পপি  বলেন, আমি শূন্য হয়ে গেছি। আমার আর কিছুই রইল না। দুটি সন্তানকে কীভাবে মানুষ করবো। তাদের ভরণ পোষণ ও লেখা পড়ার নিশ্চয়তা কে দিবে। এ প্রশ্নের উত্তর চাই। অন্যদিকে নিহত মেহেদীর বাবা মোশারফ হাওলাদার বলেন, ছেলের মৃত্যুতে সাগরে ডুবে যাওয়ার পরিস্থিতি হয়েছে আমার। আমি অসুস্থ মানুষ। সংসারের চিন্তার পাশাপাশি এখন চিকিৎসা নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি আমি। তিনি এসব কথা বলার সময় পাশে থাকা মেহেদীর মা অনবরত কান্না করছেন। পাশে থাকা স্বজনরা অনেক চেষ্টা করেও বন্ধ করতে পারছিলেন না তার কান্না। পুত্রশোকে পাগলপ্রায় মেহেদীর মা ছেলের স্মৃতি মনে করে মূর্ছা যাচ্ছেন বারবার। কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না মেহেদী আর নেই।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ২৯ জুলাই ২০২৪ /এমএম

 


এই বিভাগের আরও সংবাদ