Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: জন্মনাম তাবাররুক আহমেদ। অভিনয় জগতে পরিচিত ছিলেন বুলবুল আহমেদ নামে। বাংলা ‘ধীরে বহে মেঘনা’ (১৯৭৩), ‘সূর্য কন্যা’ (১৯৭৫), ‘সীমানা পেরিয়ে’ (১৯৭৭), ‘রূপালী সৈকতে’ (১৯৭৯), ‘মোহনা’ (১৯৮২) ও ‘মহানায়ক’ (১৯৮৪) সিনেমাগুলোতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে নজর কাড়েন। তবে তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘দেবদাস’ সিনেমাটির জন্য।

বুলবুল আহমেদ অত্যন্ত প্রতাপের সঙ্গে অভিনয় করেছেন দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে। এছাড়া অভিনয় করেছেন প্রায় তিনশোর মতো নাটকে। অভিনয় প্রতিভা দেখিয়ে চারবার জিতেছেন ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’। কালজয়ী সেই অভিনেতাকে কি মনে পড়ে? ১৪ বছর হয়ে গেল তিনি নেই। মারা যান ২০১০ সালের ১৪ জুলাই।

হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছিলেন বুলবুল আহমেদ। কয়েক দফায় চিকিৎসাও করিয়েছেন ঢাকার নামিদামি সব হাসপাতালে। কিছুটা সুস্থও হয়েছিলেন। ২০১০ সালের ১৪ জুলাই ফের তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। নেয়া হয় স্কয়ার হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানান, মহানায়ক আর নেই। তার মৃত্যুতে বাংলা চলচ্চিত্র একজন খ্যাতিমান অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজককে হারায়।

যেভাবে অভিনয়ে এসেছিলেন

বুলবুল আহমেদের জন্ম ১৯৩৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার আগামসি লেনে। আসল নাম তাবাররুক আহমেদ হলেও তার মা-বাবা তাকে ‘বুলবুল’ বলে ডাকতেন। তিনি ছিলেন পিতামাতার অষ্টম সন্তান। তার বাবা খলিল আহমেদ ছিলেন পাকিস্তান আমলের অর্থ বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারি এবং অভিনেতা ও নাট্যকার।

বুলবুল আহমেদদের বাড়িতেই নাটকের মহড়া হতো। কিশোর বুলবুল প্রায়ই সেই মহড়া দেখতেন। পুরান ঢাকার ফুলবাড়িয়ার মাহবুব আলি ইনস্টিটিউশনে তার বাবার নির্দেশিত নাটকগুলো মঞ্চস্থ হতো এবং বুলবুল আহমেদ সেগুলো দেখতে যেতেন। সেখান থেকেই তার অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মে।

বুলবুল আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকার কলেজিয়েট স্কুল এবং নটর ডেম কলেজে। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তবে কিছুদিন সিলেট এমসি কলেজেও পড়াশোনা করেছেন। এমসি কলেজে থাকাকালে মঞ্চনাটক ‘চিরকুমার সভা’য় নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে উপস্থিত সবার নজর কাড়তে সক্ষম হন। পড়াশোনা শেষ করার পর তৎকালীন ইউবিএল ব্যাংক টিএসসি শাখার ম্যানেজার হিসেবে ১০ বছর চাকরি করেন।

চাকরির পাশাপাশি বুলবুল আহমেদ টিভিতে অভিনয় করতেন। তার অভিনীত প্রথম টিভি নাটক আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘বরফ গলা নদী’। যেটি ১৯৬৪ সালে প্রচারিত হয়। এরপর নিয়মিত টিভি নাটকে কাজ করতে থাকেন।

ওই সময় টিভিতে বুলবুল আহমেদ অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটক হচ্ছে মালঞ্চ, ইডিয়েট, মাল্যদান, বড়দিদি, আরেক ফাল্গুন, শেষ বিকেলের মেয়ে। এর মধ্যে ‘ইডিয়েট’ নাটকে বুলবুল আহমেদের অভিনয় বেশ প্রশংসিত হয়। তিনি ছিলেন একাধারে মঞ্চ, বেতার, টিভি, চলচ্চিত্র অভিনেতা, আবৃত্তিকার এবং অনুষ্ঠান ঘোষক। তবে কলেজজীবন থেকেই তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

ব্যাংকে ১০ বছর চাকরি করার পর রূপালি জগতে পর্দায় পা রাখেন বুলবুল আহমেদ। ১৯৭২ সালে আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের অনুপ্রেরণায় সিনেমায় কাজ শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের (ইউসুফ জহির) মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘ইয়ে করে বিয়ে’র মাধ্যমে প্রথম বড় পর্দার দর্শকদের সামনে নায়ক হিসেবে আবির্ভাব ঘটে তার।

বছরখানেক বিরতির পর আবার বড় পর্দায় আসেন আব্দুল্লাহ আল মামুনের ‘অঙ্গীকার’ সিনেমার মাধ্যমে। এরপর একে একে কাজ করেন ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘রূপালী সৈকতে’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘সূর্য কন্যা’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’সহ বেশ কিছু দর্শকনন্দিত সিনেমায়। ১৯৮৭ সালে চাষী নজরুল ইসলামের ‘দেবদাস’ সিনেমার মাধ্যমে নিজেকে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে আসেন বুলবুল আহমেদ।

অভিনয়ের পাশাপাশি কয়েকটি সিনেমা পরিচালনাও করেন ‘মহানায়ক’ খ্যাত এই অভিনেতা। তার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য সিনেমা হচ্ছে- ‘ওয়াদা’, ‘মহানায়ক’, ‘ভালো মানুষ’, ‘রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্ত’, ‘আকর্ষণ’, ‘গরম হাওয়া’, ‘কত যে আপন’ প্রভৃতি। এর মধ্যে শেষের চারটি সিনেমা প্রযোজনাও করেন বুলবুল আহমেদ। তার অভিনীত সর্বশেষ সিনেমা ‘দুই নয়নের আলো’। সর্বশেষ টিভি নাটক ২০০৯ সালে ‘বাবার বাড়ি’। অভিনয়ের পাশাপাশি এটি পরিচালনাও করেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে ‘মহানয়ক’ বুলবুল আহমেদের স্ত্রী ডেইজি আহমেদ। তিনি একজন অভিনেত্রী। বুলবুল-ডেইজি দম্পতির তিন সন্তান। দুই মেয়ে ঐন্দ্রিলা ও তিলোত্তমা এবং ছেলে শুভ। এরমধ্যে মেয়ে ঐন্দ্রিলা একজন নৃত্যশিল্পী ও নাট্যঅভিনেত্রী। পাশাপাশি একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের পদস্থ কর্মকর্তা।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ১৪ জুলাই ২০২৪ /এমএম