Menu

যন্ত্রই কৃষকের দুঃখ ঘোচাবে

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: বর্তমানে দেশে জিডিপির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ অর্জিত হয় কৃষি খাত থেকে। এর চেয়েও বড় কথা, কৃষি এ দেশের জনমানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার প্রধান উৎস। এখনও দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে কৃষিকে অবলম্বন করেই। ফলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, জীবনযাত্রায় মানোন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হলে কৃষিক্ষেত্রে অধিকতর মনোযোগ দিতে হবে।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি। তখন দেশে ছিল প্রচণ্ড খাদ্যাভাব। বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বহুগুণে কমেছে কৃষি জমির পরিমাণ। তারপরও বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষক, কৃষিবিদ ও গবেষকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এটি সম্ভব হয়েছে। কৃষির যান্ত্রিকীকরণের কারণেই এসেছে এত সাফল্য। যে লাঙল-জোয়াল আর হালের বলদ ছিল কৃষকের চাষাবাদের প্রধান উপকরণ, সে জায়গা দখল করে নিয়েছে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার।

কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষাবাদের কারণে একদিকে যেমন সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে, তেমনি ফসলের উৎপাদনও বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। কেবল জমি চাষই নয়, জমিতে নিড়ানি, সার দেয়া, কীটনাশক ছিটানো, ধান কাটা, মাড়াই, শুকানো ও ধান থেকে চাল বের করা- সবই চলছে আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে।

ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের (ব্রি) হিসাবমতে, বর্তমানে দেশের মোট আবাদি জমির ৯০ ভাগ চাষ হচ্ছে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে যদি ধানের চারা রোপণ করা হয়, তাহলে কৃষকের শতকরা ৫০ ভাগ চারা রোপণ খরচ বাঁচবে। রিপার ও কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্র দিয়ে ধান কাটা হলে সনাতন পদ্ধতির চেয়ে যথাক্রমে ৩৬ ও ৫৩ ভাগ খরচ বাঁচবে।

সনাতন পদ্ধতিতে ধান কাটা হলে ধানের অপচয় হয় শতকরা ৬ দশমিক ৩৬ ভাগ। কিন্তু যন্ত্রের মাধ্যমে ধান কাটা হলে ধানের অপচয় হয় ১ দশমিক ২৭ ভাগেরও কম। ধান কাটা-পরবর্তী মাড়াই, শুকানো ও সংরক্ষণের সঠিক পদ্ধতি বা প্রযুক্তি কৃষক পর্যায়ে ব্যবহৃত না হওয়ায় শতকরা ১৪ ভাগেরও বেশি ধানের অপচয় হচ্ছে। অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধান শুকানো ও সংরক্ষণ করা হলে ধানের এ অপচয় ৮ ভাগে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।

বর্তমান সরকারের আমলে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ অনেক গতিশীল হয়েছে। ‘খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৫টি জেলায় ৩৮ হাজার ৩২৪টি বিভিন্ন প্রকার কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে।

তাছাড়া বিএআরআই ও বিআরআরআই উদ্ভাবিত কৃষি যন্ত্রপাতি মোট মূল্যের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি মূল্যে কৃষকের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে কৃষি শ্রমিকের একটি বড় অংশ শিল্প ও পরিবহন খাতে স্থানান্তরিত হচ্ছে এবং অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক শহরমুখী হচ্ছে। শ্রমিক সংকট ও কৃষি উৎপাদনশীলতা ধরে রাখতে হলে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের বিকল্প নেই।

যেভাবে কৃষিজমির পরিমাণ দিন দিন কমছে, অন্যদিকে কৃষি শ্রমিক শহরমুখী হচ্ছে, সেক্ষেত্রে শুধু উন্নত জাত ও সার ব্যবহার করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখা সম্ভব হবে না। এজন্য ফসল উৎপাদন, ধান কাটা ও কর্তন-পরবর্তী কাজগুলোয় সঠিক যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে অপচয় রোধ করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও বেশি করে কৃষি যন্ত্রাংশের ওপর জোর দিতে হবে।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ২৫ আগস্ট ২০১৯ / এমএম


Array