Menu

এনজিও ও সামাজিক খাতে পৃথক ক্রয় নীতিমালা কেন প্রয়োজনএনজিও ও সামাজিক খাতে পৃথক ক্রয় নীতিমালা কেন প্রয়োজন

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা প্রদর্শনের ঘোষণা করেছেন। দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, কিন্তু তারপরও বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ খাতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্নীতি বন্ধে উৎস স্থলে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সে রকম একটি বড় বিষয় হলে কেনা-কাটা। যার মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি মহলে মেগা দুর্নীতি হয়ে থাকে। আজকে আমরা বেসরকারি ও লাভজনক খাতে ক্রয়নীতি নিয়ে আলোচনা করব। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে এনজিওদের ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, মঙ্গাপীড়িতদের কল্যাণ ও দারিদ্র্য বিমোচনে এনজিওদের অবদান ও এনজিওদের সমন্বয়হীনতা নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছিল। আশা করা হয়েছিল এর মাধ্যমেই একটি পরিচ্ছন্ন বেসরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এনজিও সেক্টর গঠন ও এর ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করতে সম্ভব হবে কিন্তু মাঝপথে সেগুলো হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল, তবে কেন এনজিওগুলোর এ অসহায়ত্ব ও তাদের দুর্বলতাগুলো কী, সে বিষয়ে কোনো দৃষ্টিপাত করা হয়নি, ফলে আলোচনা একতরফা ও অসম্পূর্ণ থেকে গেছে।

অনেক জায়গায় যাদের নিয়ে এ আলোচনা, সেখানে সেই এনজিওগুলোর সত্যিকারের কোনো প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণ ছিল না। এর মাঝে নতুন করে সমাজকল্যাণ আইন প্রণয়নের কথা জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। যাদের জন্য এই আইন, এ বিষয়ে কারো সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এমন কোনো তথ্য নেই। অন্যদিকে পৃথক ক্রয় নীতিমালা না থাকায় এনজিওতে কেনাকাটা ও নিয়োগে নানা অসঙ্গতি, অনিয়ম এবং অসন্তোষ ক্রমশ দানা বাঁধছে। তাছাড়াও দেশব্যাপী স্থানীয়করণের নামেও দাবি-দাওয়া জোরদার হচ্ছে। কক্সবাজার জেলায় রোহিঙ্গাদের মানবিক ত্রাণ কাজেও অস্পষ্ট ক্রয় নীতিমালা ও কর্মী নিয়োগে অস্বচ্ছতার কারণে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। স্থানীয়দের মাঝে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর গাড়িবহর আটকে দেয়াসহ অসন্তোষের আন্দোলন দানা বেঁধেছিল। ফলে দেশব্যাপী স্থানীয়করণ আন্দোলন ক্রমশ জোরদার হচ্ছে।

সাদামাটাভাবে Non-Government Organization-এর সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে ‘এনজিও’। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে এ ভ‚খণ্ডে এনজিও নামের উপস্থিতি তেমন ছিল না। তবে সমাজহিতৈষী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এ দেশ ও সমাজে সবসময় ছিল এবং এখনো আছে। এরা মূলত অলাভজনকভাবে চ্যারিটিমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত কিন্তু কখনোই ধারাবাহিকভাবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এরূপ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাজের ধরন ও চরিত্র প্রয়োজনের তাগিদেই বদলাতে থাকে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর কাজের সঙ্গে যোগ হতে থাকে উন্নয়নের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ, বৈদেশিক সাহায্য, জন্মাতে থাকে পেশাদারিত্বের তাগিদ এবং উদ্যোগের ধারাবাহিকতা, নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তার বিধান। সাধারণ অর্থে এনজিও (অলাভজনক বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন) বলতে সেই সব সংগঠনকে বোঝায় যারা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ধারাবাহিকভাবে সম্পৃক্ত। ’’তবে দেশে এনজিওদের শীর্ষ সমন্বয়কারী সংস্থার এডাবের মতে, তাদেরই এনজিও বলে বিবেচনা করে- যারা সংগঠন হিসেবে সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত, নিজস্ব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত, যাদের নিজস্ব অফিস আছে, পূর্ণকালীন কর্মী আছে, ধারাবাহিকভাবে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি, কর্মএলাকা ও উপকারভোগী বা অংশীজন আছে, ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ও এর প্রয়োগ আছে, বার্ষিক কার্যক্রমের প্রতিবেদন আছে, বার্ষিক বাজেট ও আয়ের উৎস আছে, নিয়মিত বার্ষিক অডিট হয় এবং যাদের উন্নয়ন কার্যক্রমে ধারাবাহিকতা ও পেশাদারিত্বের ছাপ আছে, আছে কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। এসব বিবেচনায় সক্রিয় বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন বা এনজিওর সংখ্যা সারাদেশে দুই-আড়াই হাজারের বেশি নয় অথচ বুঝে বা না বুঝে বলা হচ্ছে যে, বাংলাদেশে লক্ষাধিক এনজিও কার্যরত আছে। অনেক সময় সমবায় সমিতি, মাল্টিপারপাস সোসাইটি, ক্লাবকেও এনজিও বলা হয়। এতে জনগণ বিভ্রান্ত হচ্ছে। ক্ষুণ্ন হচ্ছে প্রকৃত এনজিওদের ভাবমূর্তি।

বাংলাদেশের এনজিওগুলো তহবিল ছাড় করাতে বিড়ম্বনা, সরকার ও এনজিও শীতল সম্পর্ক, এনজিও সেক্টরে সংঘটিত দুর্নীতি এবং ইমেজ সঙ্কটের কারণে দাতা সংস্থাগুলোও বাংলাদেশে এনজিওর মাধ্যমে সাহায্য প্রদানে ক্রমান্বয়ে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছে এবং অনেকেই বাংলাদেশ থেকে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে। যা এসেছে তার সব গুটিকয়েক বড় সংস্থা নিয়ে নিয়েছে।

এ কারণেই গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য স্থবির হয়ে পড়েছে কিছু দিন ধরেই, এনজিওতে দাতা সংস্থার অনুদান কমে যাওয়ায় বেসরকারি সেক্টরে কর্মসংস্থান মারাত্মক হারে হ্রাস পেয়েছে, বেকারত্বের হার বেড়েছে, সমাজে অস্থিরতা বেড়েছে। অন্যদিকে এনজিওগুলো তাদের বৈদেশিক অনুদান গ্রহণ করতে না পারায় এনজিও সেক্টরে বৈদেশিক রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে। এনজিও সেক্টরের এ স্থবিরতা গ্রামীণ অর্থনীতিতে শুধু স্থবিরতা আসেনি, গ্রামীণ সামাজিক খাতে বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে সমন্বিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে এডাব এনজিওদের প্রতিনিধিত্ব করত কিন্তু এখন

রাজনৈতিকভাবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে সামাজিক উন্নয়ন খাতে এনজিও ও নাগরিক সমাজের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হচ্ছে না। সামাজিক উন্নয়নের বিষয়ে দলীয় রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হলে পুরো দেশের জন্য ক্ষতি হবে। সামাজিক খাতের ইস্যুগুলো যদিও রাজনৈতিক কিন্তু বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া রাজনৈতিক হতে পারে না।

সেকারণে বিগত বছরগুলোতে দেশব্যাপী বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলেও এনজিও সেক্টরে কোনো কার্যকর সমন্বয় না থাকায় ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ দেখা যায়নি অথচ ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়, ১৯৯৮ সালের শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলা, চট্টগ্রামে ২০০৭ সালে ১১ জুনের পাহাড় ধসের ঘটনায় এডাব অত্যন্ত সফলভাবে তার প্রধান কার্যালয়ে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সেল স্থাপন করে সরকার, দাতা সংস্থা ও এনজিওদের মাঝে সমন্বয় সাধন করেছিল কিন্তু পরবর্তীতে সমন্বয়কারী সংস্থার অকার্যর থাকা ও অধিকারভিত্তিক ধারার এনজিওগুলোর তহবিল ছাড়ে বিড়ম্বনার কারণে জাতীয়ভাবে বন্যা দুর্গত ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সিডরে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণে সক্ষম হয়নি।

অপরদিকে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন বহুজাতিক দাতা সংস্থার সহায়তা প্রাপ্ত সরকারি প্রকল্পগুলোতে এনজিও নিয়োগে টেন্ডার প্রথা চালু, পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট জমা, ব্যাংক গ্যারান্টি, ভ্যাট, টিআইএন দাখিল, ক্ষদ্রঋণের লাইসেন্স, এনজিও নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম, সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট এনজিও নিয়োগ এবং অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি দাতা সংস্থার অনুদান পেতে স্থানীয় এলাকায় কাজের অভিজ্ঞতা, দক্ষ জনবল, প্রস্তাবিত কর্মএলাকায় অবস্থান ইত্যাদি যোগ্যতা বাদ দিয়ে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের বিশাল অঙ্কের ঋণ তহবিল, মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির লাইসেন্স আছে কিনা এবং পিকেএসএফের পার্টনার, বিশাল দালান-স্থাপনা আছে কিনা? ঢাকায় অফিস আছে কিনা ইত্যাদি বিষয় অন্যতম যোগ্যতা নির্ধারণ করে প্রকারান্তরে এনজিওগুলোকে ব্যবসায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। ফলে অনেকই গাছ, বাঁশ, রিয়েল স্টেট ব্যবসার ফাঁকে নতুন করে এনজিও ব্যবসায় ঝুঁকে পড়েছে। মজার বিষয় হলো, সরকারি অন্য সব সেক্টরে কেনাকাটার জন্য প্রণীত পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট ২০০৮-এর আওতায় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে এনজিও নিয়োগ করে এনজিও কার্যক্রমকে ঠিকাদারি ব্যবসায় পরিণত করা হয়েছে।

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্টের মাধ্যমে অনেক প্রকল্পে এনজিও নিয়োগ করা হচ্ছে, যেখানে সাধারণ ব্যবসায়ী ফার্মের ন্যায় এনজিও নিয়োগের কারণে টেন্ডারে অভিজ্ঞ এনজিওগুলোই নির্বাচিত হচ্ছে। কক্সবাজার জেলার কাজ করার জন্য খুলনা, ঢাকা ও দিনাজপুর থেকে এনজিওগুলোকে কন্ট্রাক্ট নিয়ে আসে। ফলে স্থানীয় সামাজিক উদ্যোগ ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ব্যবসায়ী ধারার উত্থান হচ্ছে। অন্যদিকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রকল্প PLCHD এর আওতায় এনজিও নিয়োগে প্রতি জেলার জন্য একটি লিড এনজিও ও কয়েকটি সহযোগী এনজিও নির্বাচনের বিধান করা হয়েছে অথচ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সেখানে প্রতি উপজেলায় ১০-১৫টি এনজিও কাজ করার সুযোগ পেত। একই সঙ্গে BEHTRUWC প্রকল্পেও এনজিও নিয়োগে বিগত পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাকে অন্যতম যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়েছে।

এখানে ঢাকার কয়েকটি বৃহৎ ব্যবসায়িক এনজিওকে কাজ দেয়ার জন্য, এনজিওতে সিন্ডিকেট ব্যবসা অব্যাহত রাখার জন্য এ ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। বিগত চারদলীয় জোট সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদফতরের পিএলসিএইচডি-১, ২, হার্ড টু রিচ প্রকল্প, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম নিরসন প্রকল্প, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের CDMP, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় পুষ্টি প্রকল্প (NNP), AIDS/HIV ও GFATM এর আওতায় Malaria Control Programme, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের Vulnerable Group Development (VGD) Programme, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের EBRID ইত্যাদি প্রকল্পে যেভাবে উন্মুক্ত ও নগ্ন দুর্নীতির মাধ্যমে এবং যারা নগদ অর্থ প্রদান করতে পেরেছে শুধু তারাই এনজিও হিসেবে নির্বাচিত হতে পেরেছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দরিদ্র মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান কর্মসূচিতে ও পূর্বের চলমান ধারায় নগ্নভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে এনজিও নিয়োগ করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারের আমলেও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু তহবিল প্রকল্পেও একই ধারায় কতগুলো এনজিও নির্বাচন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে পত্রপত্রিকায় লেখালেখির কারণে সরকার এটি স্থগিত করে। যদি কোনো এনজিও কাজ পাওয়ার জন্য অর্থলগ্নি করে থাকে, তাহলে সে অবশ্যই ওই প্রকল্প থেকে মুনাফা প্রত্যাশা করবে, এটাই স্বাভাবিক। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী দফতরের সঙ্গে সখ্যের সুযোগে ঢাকাভিত্তিক কয়েকটি এনজিও দেশব্যাপী সব সরকারি প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ করছে।

সেখানে স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ও সমাজ পরিবর্তনে নিবেদিতপ্রাণ ক্ষুদ্র ও মাঝারি এনজিওগুলো তহবিল না পেয়ে অস্তিত্বের সঙ্কটে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে অথচ স্থানীয় এনজিওকে কাজটি দেয়া হলে স্থানীয় উদ্যোক্তা উৎসাহ পেতেন, প্রকল্পের ব্যয় কমত এবং কাজের স্থায়িত্বশীলতা বাড়ত, প্রকৃত উপকারভোগীরা ওই স্থানীয় এনজিও থেকে অধিক সেবা পেতেন। কিন্তু তা বাদ দিয়ে এখন টেন্ডারবাজ এনজিওকে কাজ দেয়ার ফলে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে না হতেই ওই এনজিও অফিসও কার্যক্রম গুটিয়ে নিচ্ছে। ফলে এনজিওর নামে অপবাদ দেয়া হয় এবং বলা হয় এনজিওরা ব্যবসা করছে। একইভাবে চট্টগ্রাম শহরে চলমান হার্ড টু রিচ প্রকল্পে ৪টি এনজিও স্কুল পরিচালনা করলেও তাদের একটিরও স্থানীয়ভাবে অফিস ছিল না, শ্রম মন্ত্রণালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম প্রকল্পে ১৩টি এনজিওর মধ্যে মাত্র ১টি স্থানীয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের GFATM এর Malaria Control প্রকল্প, কৃষি মন্ত্রণালয়ের Food Security Programme, Soil Fertility Component Grants প্রকল্পে সাতক্ষীরা থেকে প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রস্ক প্রকল্পে ঢাকা, দিনাজপুর, টাঙ্গাইল, খুলনা থেকে কতগুলো সংস্থাকে আমদানি করে কাজ দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও সিন্ডিকেটভুক্ত এনজিওদের স্বার্থ রক্ষা ও তাদের নিয়োগের জন্য প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এনজিও বাঁচাই, নির্বাচন ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় এমন কতগুলো শর্ত জুড়ে দেন, নীতিমালা প্রণয়ন ও অনুসরণ করে থাকেন, যাতে তাদের পছন্দের বাইরের অন্যদের অংশগ্রহণের সুযোগই থাকে না। টেন্ডার প্রক্রিয়াটি শুধু লোক দেখানো। এটি রোধ করার জন্য মার্কিং প্রক্রিয়া ও নীতিমালা প্রণয়নে সব এনজিওর সঙ্গে আলোচনা করা, এনজিওদের বৈধ প্রতিনিধিকে এনজিও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা, এলাকাভিত্তিক যে কোনো প্রকল্পে স্থানীয় এনজিও ও স্থানীয় উদ্যোগগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা ও তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া দরকার। এটার জন্য মার্কিং প্রথা ও নীতিমালা সংশোধন করা আবশ্যক।

বিভিন্ন বহুজাতিক দাতা সংস্থার অর্থায়নে বিভিন্ন প্রকল্পে এনজিও নিয়োগে বিডিংয়ের নামে ক্যান্সার প্রতিরোধ প্রকল্পে কনস্ট্রাকশন ফার্মকে, পুষ্টি প্রকল্পে স্টেশনারিজের দোকানের মালিককে এনজিও নিয়োগ, প্রকল্পে নিয়োগ পেতে ৩০-৪০% পর্যন্ত ঘুষ প্রথা চালু, সামাজিক ব্যবসার নামে এনজিওকে বাণিজ্যিকীকরণে স্বার্থান্বেষী মহলের অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে। এনজিওগুলোর ঠিকাদারদের মতো পে-অর্ডার, প্রকল্পের সমপরিমাণ ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদান, স্থানীয় উদ্যোগকে নিরুৎসাহিত করা, ঠিকাদারি কায়দায় বরিশালের এনজিওকে বগুড়ায় কাজ প্রদান, বড় ধরনের ক্ষুদ্রঋণের তহবিল, মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরির অথরিটির লাইসেন্স থাকা এনজিওদের অগ্রাধিকার প্রদান, বিশাল আকারের স্থাপনা, গুটিকয়েক ব্যবসায়ীএনজিও কর্তৃক সিন্ডিকেট করে সব সরকারি-বেসরকারি তহবিল নিয়ন্ত্রণে কায়েমি চক্রান্ত বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে।

তাই জরুরিভাবে এনজিও ও অলাভজনক সেক্টরে ব্যবসায়িক ধারার উত্থান ও প্রসার বন্ধে এনজিও ও অলাভজনক সামাজিক সেক্টরের জন্য পৃথক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট তৈরি করা প্রয়োজন। যেখানে সরকারি প্রকল্পে এনজিও নিয়োগে স্থানীয় উদ্যোগকে উৎসাহিত করা, স্থানীয় এনজিও নিয়োগের বিধান নিশ্চিত করা, কোনোভাবেই কর্পোরেট এনজিওগুলো যেন রাজনৈতিক ও সরকারি কর্মকর্তা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সরকারি তহবিল আত্মসাৎ করতে না পারে সেজন্য বিধান তৈরি করা আবশ্যক। নতুবা এনজিও ও অলাভজনক সেক্টরে দুর্নীতি ও এনজিও নিয়ে দুর্নাম ও অব্যবস্থাপনার পরিসমাপ্তি ঘটবে না।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা / ২৯ জুলাই ২০১৯/ এমএম