Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌  বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বাঙালির সাম্প্রতিক ইতিবাচক উত্থান এখন খণ্ডিত প্রবাসী নয়, ‘বিশ্ব বাঙালি’ পরিচয়টিই সুদৃঢ় করছে। লন্ডনে বাংলাদেশ বইমেলা ও সাহিত্য সাংস্কৃতিক উৎসবের উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধান অতিথি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এ কথা বলেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর মাইল্যান্ড আর্ট প্যাভেলিয়নে আয়োজিত দুইদিনব্যাপী বইমেলার উদ্বোধন করেন ড. গওহর রিজভী।

বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনীম, কথা সাহিত্যিক ড. শাহাদুজ্জামান, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ, ঘুংঘুর সম্পাদক কবি ডা. হুমায়ুন কবীর ও সাপ্তাহিক রোববার সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা লেখক সৈয়দ তোশারফ আলী। সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ যুক্তরাজ্যর উদ্যোগে আয়োজিত এ বইমেলা ছিল বইপ্রেমীদের কোলাহল ও প্রাণ প্রাচুর্যে ভরা। যুক্তরাজ্যের দূর-দূরান্তের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করা বইপ্রেমী পাঠক, সংস্কৃতিকর্মী ও লেখকরা ছুটে আসেন এ বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবে।সংগঠনের সভাপতি ময়নূর রহমান বাবুলের সভাপতিত্বে এবং এ কে এম আব্দুল্লাহ ও মুনিরা পারভীনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হওয়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয় এক ঘণ্টা বিলম্বে বিকেল ৩টায়। অবশ্য বইয়ের স্টলে বেলা একটা থেকে বইপ্রেমীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়।

ড. গওহর রিজভী তাঁর বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘বইমেলার মতো একটি জ্ঞানবৃত্তিক অনুষ্ঠান তখনই সার্থক হয়, যখন উপস্থিত সুধীজন শীর্ষস্থানীয় এমন জ্ঞানতাপসদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শোনার সুযোগ পায়। উদ্যোক্তা হিসেবে আপনাদের উচিত তেমন জ্ঞানতাপস বুদ্ধিজীবীদের এ ধরনের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো, আমাকে নয়।’ ড. রিজভী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উক্ত মন্তব্য উল্লেখ করে বলেন, আমার মতো আলোচকের আলোচনার চেয়ে এসব অনুষ্ঠানে প্রয়োজন বঙ্গবন্ধুর সেই পরামর্শ ফলো করে অতিথি সিলেক্ট করা। ড. রিজভী বলেন, প্রযুক্তির এই যুগে বর্তমান প্রজন্ম যখন ইলেকট্রনিক ডিভাইসেই অধিকাংশ সময় ব্যয় করছে, সেখানে এদের বইমুখী করতে আজকের এই বইমেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। উদ্বোধন শেষে ড. গওহর রিজভী প্রতিটি স্টল ঘুরে ঘুরে বই দেখেন এবং উপস্থিত সকলের সাথে কুশল বিনিময় করেন।

এর আগে অনুষ্ঠানের জন্য পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন বইমেলার সাফল্য কামনা করে বলেন, পেশাগত ব্যস্ততার কারণে অনুষ্ঠানে থাকতে না পারাটা আমার নিজেরই ক্ষতি। জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শোনার এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেও ভবিষ্যতে কোনো এক সময় আবার এমন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবো এমনটিই আমার আশা। নিজের বয়স ৮৯ উল্লেখ করে নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, জীবনের শেষ প্রান্তে হলেও আশা রাখি বইমেলার মতো এমন একটি ভবিষ্যৎ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ হয়তো পাবো।

এবারের বইমেলা উৎসর্গ করা হয় অমর একুশে গানের রচয়িতা প্রয়াত আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে। উল্লেখ্য, অতীতে বিলাতে আয়োজিত প্রতিটি মেলায় তিনি ছিলেন প্রাণপুরুষ। জাতির বিবেক কালজয়ী এই মহান ব্যক্তির অবর্তমানে এবারের উৎসব তাকে উৎসর্গ করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী যুক্তরাজ্য সংসদ ও সত্যেন সেন স্কুল অব পারফর্মিং আর্টস’র শিল্পীদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে উৎসবের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রথম বারের মতো সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পদক প্রদান করা হয় কবি নুরুজ্জামান মনিকে।

এবারের বইমেলায় ১৫টি বাংলাদেশি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। তবে বাংলা একাডেমি মেলায় অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও তাদের বইয়ের স্টল ছিল না।জমজমাট এই বইমেলায় অনেকেই লন্ডনে বসে পছন্দের বই কিনতে পেরে আনন্দিত। ব্রিটিশ-বাঙালি শিশু-কিশোরদের জন্য বাংলাদেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ইতিহাসনির্ভর ও ছড়া কবিতার প্রচুর বাংলা বই ছিল। কিন্তু শিশুদের উপযোগী কাঙ্ক্ষিত ইংরেজি অনুবাদ বই ছিল না।

উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ‘সময় প্রকাশনী’র কর্নধার ফরিদ আহমেদ সীমিত সাধ্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, অনেক বই আমরা এক কপি করেই নিয়ে এসেছি, কারণ বই পরিবহন অনেক ব্যয়সাধ্য, আবার বিক্রি না হলে ফেরত নিয়ে যাওয়াও অনেক কষ্টকর। তাই ইচ্ছে থাকলেও সীমিত বই নিয়েই আমাদের অংশ নিতে হয়।দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে ছিল প্রবাসী লেখকদের প্রকাশিত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, স্বরচিত কবিতা পাঠ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সামাজিক সংস্থা ‘আপাসেন’ এর বিশেষ শিশুদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ /এমএম