প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: বইমেলায় এবার সবকিছুই অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা। সচরাচর মেলায় পাঠকপ্রিয় লেখকরা আসতেন মেলা শুরুর এক-দুই সপ্তাহ পর। কিন্তু এবার তারা ইতোমধ্যেই মেলায় এসেছেন। পাঠকরা তাদের সান্নিধ্যে মুগ্ধ। লেখকরাও বইয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন, তাদের সঙ্গে ছবি তুলছেন। অনেক লেখক আবার পাঠকদের সঙ্গে মেতে উঠছেন আলাপচারিতায়। মেলা মাঠে ঘুরে ঘুরে আড্ডার পাশাপাশি বইও কিনছেন।
সিআরআই থেকে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে তৈরি গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’র দশম খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে শনিবার সকালে অতিথি ছিলেন সবার প্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এদিন প্রথমবারের মতো মেলায় এসে তিনি বলেন, পৃথিবীতে দুই শ্রেণির মানুষ আছে। এক শ্রেণি বই পড়ে আর আরেক শ্রেণি বই পড়ে না। যারা বই পড়ে না তারা পরিপূর্ণ মানুষ নয়। পরিপূর্ণ মানুষ হতে হলে বই পড়তে হবে।
মেলার এদিন বিকালে অনন্যার প্যাভিলিয়নে এসেছিলেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। তার নতুন উপন্যাস ‘অচিন ফুলের গন্ধ’ অটোগ্রাফ দিয়ে পাঠকদের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন একটু পরপর। তিনি বলেন, করোনাকালে পুরো পৃথিবী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেদিক থেকে ব্যতিক্রম ছিল না আমাদের সৃজনশীল প্রকাশনা জগত, লেখক বা পাঠক। প্রকাশকের ক্ষতি মানে লেখকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কারণ, বই বিক্রি না করতে পারলে লেখক রয়্যালিটি পাবেন না। আবার পাঠক বঞ্চিত হয়েছেন ভালো অনেক বই হয়তো বের হয়নি। তবে এবারের মেলার পাঠক-দর্শনার্থীদের সাড়া আশার জায়গা তৈরি করেছে। এভাবে চললে এবার আসলেই স্মরণীয় মেলা হবে। প্রকাশক, লেখক সবাই ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে পারবেন। এছাড়া এ বিষয়ে সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। সরকারিভাবে বিভিন্ন সংস্থা ও লাইব্রেরির জন্য আরও বেশি বেশি বই কিনতে হবে।
এদিন বইমেলায় গত কয়েকদিনের মতোই পাঠকরা পেয়েছিলেন তাদের প্রিয় লেখক আনিসুল হককে। মেলা মাঠে এসেছিলেন আরেক জনপ্রিয় লেখক আহসান হাবীব। এবারের বইমেলা নিয়ে তিনি প্রচণ্ড আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অন্যদিকে অনিন্দ্য প্রকাশের প্যাভিলিয়নে ছিলেন জনপ্রিয় লেখক মোশতাক আহমেদ। তিনিও পাঠকদের অটোগ্রাফ দিয়েছেন, ছবি তুলেছেন। অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়নে এদিনও তরুণ পাঠকদের ভিড় ছিল সাদাত হোসেনকে ঘিরে।
আবু হাসান তালুকদারের ‘১০০ মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিকথা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন : এদিন বইমেলায় দেশের সূর্যসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আবু হাসান তালুকদার রচিত ‘১০০ মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিকথা’ বইটির মোড়ক উন্মোচন হয় বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, অগ্রণী ব্যাংকের এমডি শামস উল ইসলাম, বাংলা একাডেমির সচিব এএইচএম লোকমান, অগ্রণী ব্যাংক মহাব্যবস্থাপক একেএম শামীম রেজা, অগ্রণী ব্যাংক মুক্তিযোদ্ধা প্রাতিষ্ঠানিক ইউনিট কমান্ডের কমান্ডার হেলাল উদ্দিন, ঢাকা সাব-এডিটর কাউন্সিলের সভাপতি মামুন ফরাজী ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হৃদয় এবং বইটির প্রকাশক দোয়েল প্রকাশনীর কর্ণধার তাপস কর্মকার।
নতুন বই : শনিবার মেলায় নতুন বই এসেছে ১৪৩টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-অনন্যা থেকে ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস অচিন ফুলের গন্ধ, কথাপ্রকাশ থেকে তারেক মাসুদের চলচ্চিত্রযাত্রা, অবসর থেকে ডা. নৃপেন ভৌমিকের বাংলার শব্দকথা, অন্যপ্রকাশ থেকে মাজহারুল ইসলামের শেকড়ের সন্ধানে, আগামী প্রকাশনী এনেছে এম আবদুল আলীমের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন : জেলাভিত্তিক ইতিহাস, বিধান চন্দ্র পালের পরিবেশ প্রতিবেশ, ময়ূরপঙ্খি এনেছে ইনা ইনং এর আমাদের শিক্ষক সিংহমশাই, বিদ্যাপ্রকাশ এনেছে মোজাফফর হোসেন সম্পাদিত গুরনাহ পাঠ, আদর্শ এনেছে মুনির হাসানের যে অঙ্কে কুপোকাত আইনস্টাইন, কথাপ্রকাশ এনেছে দীপু মাহমুদের মিশরের ডায়েরি, অনন্যা এনেছে মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতা সমগ্র ৩, শানারেই দেবী শানুর ঘুণমানুষ, জ ই মামুনের কাব্যগ্রন্থ করতলে জোনাক জ্বলে, বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে সাইমন জাকারিয়ার সাধক কবিদের রচনায় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনীতি, অন্যধারা এনেছে মৌরি মরিয়মের শিকদার সাহেবের দিনলিপি প্রভৃতি।
মঞ্চের আয়োজন : বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : উন্নয়নে নারী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জোবাইদা নাসরীন। আলোচনা করেন ফওজিয়া মোসলেন ও তাসমিমা হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাছিমা বেগম।এদিন ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজের বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি অসীম সাহা ও অনুবাদক রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি মতিন বৈরাগী ও মারুফ রায়হান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, মাহিদুল ইসলাম ও নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন বেণুকা ললিতাকলা কেন্দ্রের নৃত্যশিল্পীরা।
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ /এমএম