প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: মনখারাপকে সঙ্গী করে বইমেলা প্রাঙ্গণ ছাড়লেন প্রকাশকরা। লকডাউনের কারণে নির্ধারিত সময়ের দুদিন আগে সোমবার শেষ হলো এবারের অমর একুশে বইমেলা। স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত ২৬ দিনের মেলায় বইয়ের পসরা নিয়ে বসেছিলেন প্রকাশকরা।
অধীর আগ্রহে অপেক্ষার পরও পাঠকের সাড়া মেলেনি এবং বইয়ের কাঙ্ক্ষিত বিক্রি হয়নি। শেষদিনেও প্রকাশকদের স্বপ্নের সামান্য পূরণ হয়নি। বিদায় বেলায় বিষাদ, ব্যর্থতা, মনখারাপ ও বেদনাকে তারা সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন। শেষদিনেও মেলা প্রাঙ্গণজুড়ে ছিল সুনসান নীরবতা।
প্রকাশকরা জানান, দাবির মুখে পাওয়া এ মেলা তাদের রঙিন স্বপ্নকে ধূসর করেছে। যে ক্ষতি হয়েছে, আগামী কয়েক বছরেও তা পুষিয়ে ওঠা যাবে না। তারা আরও বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আমাদের যতটুকু ক্ষতি করেছে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে বাংলা একাডেমির বেঁধে দেওয়া সময়সূচি। পরিবর্তিত সময়সূচির কারণে মেলার শেষদিনেও মেলা প্রাঙ্গণজুড়ে ছিল সুনসান নীরবতা।
অন্যবার সমাপনী আয়োজন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লেজার শো ও পুরস্কার প্রদানের মধ্যদিয়ে মেলার সমাপ্তি ঘটলেও এবার তথ্যকেন্দ্র থেকে সাদামাটা ঘোষণা দিয়ে মেলার পর্দা নামানো হয়। আজ মঙ্গলবার বেলা ৩টার মধ্যে স্টল সরিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সোমবার মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বইপত্র ও মালামাল সরিয়ে নিতে এবং গোছাতে প্রকাশনা সংস্থায় কর্মরতদের বেশি ব্যস্ত দেখা গেছে।
১০০ কোটি টাকার বই কেনার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির : এবারের মেলায় প্রকাশকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ১০০ কোটি টাকার বই কিনতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। মেলার শেষদিন বিকালে মেলা প্রাঙ্গণের ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের কাছে এ অনুরোধ জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল জানান, গতবারের মেলায় বাংলা একাডেমি ও প্রকাশকরা ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি করে। আর এবার মাত্র তিন কোটি ১১ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে। এতে প্রকাশকরা পথে বসেছেন। এজন্য ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশকদের কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকার বই কেনার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
প্রকাশনা ও বিক্রি দুই দিকেই পিছিয়ে ছিল এবারের মেলা : প্রকাশনা ও বিক্রি দুই দিকেই পিছিয়ে ছিল এবারের মেলা। মেলার শেষদিনে নতুন ৬৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে। মোট নতুন দুই হাজার ৬৪০টি বই প্রকাশিত হয়েছে। গতবার চার হাজার ৯১৯টি বই প্রকাশিত হয়েছিল।
গতবারের তুলনায় এবার দুই হাজার ২৭৯টি বই কম প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা একাডেমি ও প্রকাশকদের বিক্রিসহ গতবার ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু এবার মাত্র তিন কোটি ১১ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার ৭৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা কম বিক্রি হয়েছে। তবে, বাংলা একাডেমি তাদের এবারের মেলার বিক্রির কোনো হিসাব গণমাধ্যমকে জানায়নি।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে এবারের মেলায় একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৭টি প্রতিষ্ঠান এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৩৩টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এবারের মেলায় ছিল ৩৩টি প্যাভিলিয়ন। নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, লিটলম্যাগ চত্বর ও শিশুচত্বরও ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার ছিল না ‘শিশুপ্রহর’। সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলা প্রাঙ্গণজুড়ে ছিল তিন শতাধিক ক্লোজডসার্কিট ক্যামেরা।
মেলা শুরুর দিন ১৮ মার্চ থেকে প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্র ও শনিবারসহ সরকারি ছুটির দিনে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলার সময়সূচি নির্ধারিত ছিল। কিন্তু করোনার কারণে ২৯ মার্চ থেকে মেলার সময়সূচি এক ঘণ্টা কমিয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত করা হয়।
পরদিন ৩০ মার্চ দ্বিতীয় দফায় সময় কমিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত করা হয়। তখন প্রকাশকরা প্রতিবাদ জানান এবং বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলার সময়সূচির প্রস্তাব দেন। পরবর্তী সময়ে করোনার কারণে ৫ এপ্রিল থেকে মেলার সময়সূচি নির্ধারণ করা হয় দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হলো : উড়কি, সংবেদ ও কথাপ্রকাশ।
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ১৩ এপ্রিল ২০২১ /এমএম





