Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: করোনা সংক্রমণের প্রকোপ বৃদ্ধির কারণে আজ থেকে দেশজুড়ে শুরু হচ্ছে এক সপ্তাহের ‘লকডাউন’। উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতেও চলবে অমর একুশে বইমেলা। তবে, সময়সূচিতে আনা হয়েছে খানিকটা পরিবর্তন। আজ থেকে মেলা শুরু হবে দুপুর ১২টায় আর চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। পরবর্তী নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত নতুন এই সময়সূচি অপরিবর্তিত থাকবে।

বইমেলার ১৮তম দিনে রোববার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা গেছে। দেশজুড়ে ‘লকডাউন’ দেওয়া হলেও বইমেলা কেন এর আওতার বাইরে-এমন জিজ্ঞাসাও ছিল এদিন মেলায় আগতদের। করোনা প্রতিরোধে যেখানে জনসমাগম এড়িয়ে চলার কথা স্বাস্থ্যবিধিতে বলা হয়েছে, সেখানে লোকসমাগম পরিপূর্ণ বইমেলা কেন চালু রাখার অনুমতি দিল সরকার-এমন প্রশ্নও কুরে কুরে খাচ্ছে রোববারের মেলায় আগতদের।

স্কুল-কলেজের প্রসঙ্গ টেনে রসিকতা করে এদিনের মেলায় আগত অনেকেই বলেন, স্কুল-কলেজে করোনা সহজে প্রবেশ করতে পারে, বইমেলায় প্রবেশে করোনার হয়তো অনুমতি লাগে, তাই বইমেলাকে ‘লকডাউনের’ আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হওয়ার বিষয়ে যেখানে জনসাধারণকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, সেখানে কোন জরুরি প্রয়োজনে বইমেলা খোলা রাখা হলো-বিষয়টি নানাজনের মনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও এ নিয়ে চলছে নানা ধরনের সমালোচনা। মজা করে ফেসবুকে একজন লিখেছেন: ‘এই কেমন তামাশা, দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বইমেলা চলবে!! এই সময়ে নিশ্চিত করোনা দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নেবে। গণপরিবহণ বন্ধ, পাবলিক বইমেলায় নিজস্ব বিমানে করে উড়ে যাবে।’
এদিকে রোববার বিকালে হঠাৎ ঝড়ে একরকম লণ্ডভণ্ড হয়েছে বইমেলার বিভিন্ন স্টল। এতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন প্রকাশকরা।

‘লকডাউনের’ সময় মেলা সচল রাখতে সরকারের প্রতি সাধুবাদ জানিয়েছে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশকরা। তাদের মতে, লকডাউনের সময় মেলা সচল রেখে সরকার দেশের শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি নিজেদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। তবে, এর মধ্যে দ্বিমতও প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন প্রকাশক। তাদের মতে, লকডাউনের কারণে যদি গণপরিবহণই বন্ধ থাকে, তাহলে মেলায় মানুষ কীভাবে আসবে?

লকডাউনকালীন মেলা কেমন হবে-এমন প্রশ্নের উত্তরে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, লকডাউনে মেলা কেমন হবে, তা এখনই বলতে পারব না। দু-চারদিন যাওয়ার পর এ বিষয়ে বলতে পারব। লকডাউনের আগের দিন গতকাল মেলার ১৮তম দিনে জনসমাগম ছিল একেবারেই নগণ্য। বিগত কয়েকদিনের তুলনায় এদিন মেলায় অর্ধেক পরিমাণ দর্শনার্থীও আসেননি।

নতুন বই : বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্যমতে, রোববার ১৮তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ৪৮টি। এ পর্যন্ত মেলায় নতুন বই এসেছে ২ হাজার ১৬১টি। বরাবরের মতো এবারও প্রকাশনায় এগিয়ে থাকার পাশাপাশি বিক্রিতে পিছিয়ে রয়েছে কবিতার বই। রোববার প্রকাশিত বিষয়ভিত্তিক বইয়ের মধ্যে গল্পের বই ১০টি, উপন্যাস ৮টি, কবিতা ১৬টি, গবেষণা ১টি, ছড়া ২টি, জীবনী ১টি, রচনাবলি ১টি, মুক্তিযুদ্ধ ২টি, ভ্রমণ ১টি, বঙ্গবন্ধুবিষয়ক ১টি, ধর্মীয় ১টি, সায়েন্সফিকশন ১টি ও অন্যান্য ৩টি।

ঝড়ের আঘাত : হঠাৎ ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়েছে বইমেলার বিভিন্ন স্টল। রোববার শেষ বিকালে ঝড়ের তীব্রতা দ্রুতই বেড়ে গেলে নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেন পাঠকরা। স্টলের কর্মীরা ঝড়ের কবল থেকে বই রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান। হঠাৎ বদলে যায় বইমেলার চেনা রূপ। এসময় বেশ কয়েকটি স্টল আংশিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং কিছু স্টল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব স্টলের মধ্যে রয়েছে আদিত্য অনীক প্রকাশনী, বেহুলা বাংলা, বাবুই প্রকাশনীসহ বেশকিছু প্যাভিলিয়নের নামফলকও ভেঙে পড়েছে। ঝড়-বৃষ্টির সময় বেশ কিছুক্ষণ মেলা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় ছিল।

এ সময় অন্ধকারে ঢেকে যায় পুরো মেলা প্রাঙ্গণ। টাঙ্গন প্রকাশনীর প্রকাশক অজয় কুমার রায় গণমাধ্যমকে বলেন, হঠাৎ দমকা হাওয়ায় বিভিন্ন স্টলের বেশ কিছু ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া রাতে বৃষ্টি হলে বই ভিজে যাওয়াসহ আরও ক্ষতির আশঙ্কা করছি। এমনিতেই করোনার জন্য এবার মেলা ভিন্ন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে আসলেই প্রকাশকদের বেগ পেতে হবে।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ৫ এপ্রিল ২০২১ /এমএম