Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: ‘পথ চলতে হলে পথকর দিতে হয়’

সে কথা ভেবে পথে নামিনি।

পথে পা রাখতেই শুনি, ও-পথ মাড়ানো মানা,

কারণ আমার পথিক হবারই যোগ্যতাই নেই।

পথের চকিদারের সোজা-সাপ্টা কথা;

‘পথিক হতে হলে দিতে হবে পথকর।

পথের পবিত্র ধুলিকণা যদি

তোমার অমন অশুচি পায়ের পাতায় ছোঁয়াতে চাও;

আগেপথকর দাও।’

রাস্তার প্রতাপী রাজা আছে; আমি নগণ্য প্রজা;

রাজ-ফরমান না মানা আমার আত্মহত্যার শামিল।

পথের দুর্বাঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশির কণার আদর

আমার আলতো পায়ের পরশে

ঘাসেদের গায়ে গায়ে ছড়িয়ে দি’

ভাবি, পথের জন্য সেটাই হবে মুদ্রার চেয়ে বেশি মূল্যবান;

কিন্তু তাতে খোশ হলেন না পথের পেয়াদা।

পথে পথে ফুটে থাকা ঘাসফুলের রেণুর রঙে

আমি পথের ঠোঁট রাঙ্গিয়ে দি’আমার পায়ের মমতার ছোঁয়ায়।

ভাবি, সেটাই হবে যোগ্য পথকর।

তাতেও বেজায় বেজার রাজার অনুচর।

আমি পথের বাউলকবি।

একতারাতে তুলে পথের একাকীত্বের মর্মব্যথার

মরমিয়া ছড়িয়ে দি’পথের দুধারের প্রতিবেশি

গাছ-গাছালি, পাখ-পাখালির প্রাণে প্রাণে।

রাখালিয়া বাঁশির সুরে মন মাতিয়ে তুলি

পথের বুকে বুকে খেলে যাওয়া উদাসি হওয়ার।

ভাবি, সেটারই কদর হবে পথকরের ফুঁটো চাঁদির চে’

চোদ্দগুনা বেশি।

কিন্তু পথের খাজনা না দেবার ওসব ঠুনকো বাহানা,

তহশিলদার বা চকিদার কানাকড়ি আমলে আনেনা।

তাইতো, পথের ক্লান্তি আর চলার শ্রান্তির ঘামে

চুকাতে চেয়েছি পথকর;

তবুও মন ভরে না রাস্তার রাজার।

নাখোশের কারণ হিসাবে আসে ফরমান,

‘তোমার ক্লান্ত পায়ের ভার আর ঘামের নহর

করের অঙ্কের হারে ভারি বেমানান।’

দফা-রফার একটা আখেরি সলা দিলেন চৌকস থানাদারঃ

‘সদর রাস্তার আড়ালে যেমন কানাগলি থাকে,

খাজাঞ্চির আড়ালেও থাকে বেপথের চোরাকোঠা।

খাজনা না দিয়ে যদি ধরিয়ে দাও নগদ নজরানা;

মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো

জুটে যাবে পথ চলার ছাড়পত্রের পরোয়ানা।

নইলে পথে পথে বিছিয়ে দেবো বিষকাঁটা, বিধ্বংসী বারুদ।

উদোম পায়ে সেই পথ পাড়ি দেবে তুমি

তোমার কষ্টের মহামূল্যবান কষ্টিপাথরই হবে পথের খাজনা।

পথের বুককে যদি পায়ের অধিকারে নিতে চাও,

যেই তরিকাতেই পারো পথকর দাও।

কোন পথে যাবে বলো!নিজের পথটা তুমি নিজে বেছে নাও।’

জানি, পথের দাবি পূরণ করেই পথ চলতে হয় পথিকের;

হোক তা পথকর, খাজনা, নজরানা, বিষকাঁটার ঘা,

কিংবা বারুদের বিস্ফোরণ।

সমঝোতা ভীরুর অলংকার; বীরের কলঙ্ক।

আমি অকুতোভয়,নির্ভীক, অনিরুদ্ধ,

আপোষের পাটাতনে পা রাখা আমার নীতিবিরুদ্ধ;

আচমকা মনের জোর এসে ভর করে বুকের ছাতিতে,

বুকের জোর এসে ভর করে আমার দু’পায়ে,

শিরা উপশিরায় বয়ে যাওয়া রক্তস্রোত

গালিবের শায়েরির মতো

টপকাতে থাকে আমার চোখে মুখে।

পথের কাঁটায় ক্ষত-বিক্ষত পায়ের পদচিহ্ন

এঁকে দিলো ছোপ ছোপ রক্তের দাগে এক নতুন মানচিত্র।

সকল্পের ঘামে, বিশ্বাসের অশ্রুতে আর রক্তের প্রসবনে

আমার চলার পথকে করেছি সুগম।

আমার তপ্ত খুনের আগুনে পুড়ে

পায়ের নিচের প্রতিটা ধূলিকণা আবার উর্বরা হয়ে

‘আমার’হয়ে ওঠে।

পৌঁছে যাই আমার আরাধ্যমঞ্জিলে

যেখানে আয়ত মাইলফলকে সবুজ জমিনের উপর

অরুণের অভ্যুদয়;

যেখানে রক্তলাল অক্ষরে লেখা আমার কাঙ্খিত গন্তব্য-

‘স্বাধীনতা’।

আবেগের ভারে আমি রুদ্ধবাক;

চকোরের মতো চোখ মেলে চারদিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখি

হাওয়ায় হাওয়ায় দোল খাচ্ছে টুকটুকে লাল জামাপরা

আমার প্রাণের ফুটফুটে ‘স্বাধীনতা’,

আমার আজন্ম লালিত প্রেম; আমার স্বাধীনতা,

আমার স্বপ্নের সোনার দেশ; দারুচিনি দ্বীপের স্বাধীনতা।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২৬ মার্চ ২০২১ /এমএম

 


Array