প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আসছে বইমেলা সাজবে ‘হে স্বাধীনতা’ থিমে। আয়োজনের সব বিষয়ে গুরুত্ব পাবে বিষয়টি। একুশের চেতনাকে ধারণ করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষ- সব বিষয়ই উঠে আসবে বইমেলার নানা অনুষঙ্গে। করোনার শঙ্কার মধ্যে বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বলে, কঠোরভাবে মানা হবে স্বাস্থ্যবিধি।
রীতি অনুসারে ফেব্রুয়ারির অমর একুশে বইমেলা এবার শুরু হবে ১৮ মার্চ থেকে। ২৮ দিন শেষে বঙ্গাব্দ ১৪২৮ বরণের মধ্য দিয়ে বইমেলা শেষ হবে ১৪ এপ্রিল। সেই সময়ে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কায় এবার মেলায় সমাগতদের জন্য থাকবে আশ্রয়ের ব্যবস্থা। আর করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রকাশকদের স্টল ও প্যাভিলিয়ন ভাড়া দিতে হবে অন্যবারের অর্ধেক।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, একুশের চেতনা বইমেলায় থাকবে। সে কারণেই মেলার নাম অমর একুশে বইমেলা ২০২১। আমরা মুজিববর্ষকে ধারণ করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে প্রাধান্য দেব। বইমেলার এবারের থিম ‘হে স্বাধীনতা’। এই থিমকে ঘিরে আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। একুশকে ধারণ করে, মুক্তিযুদ্ধকে ধরে বাংলাদেশের উৎপত্তি থেকে আজকের বিকাশ সবকিছুই তুলে ধরা হবে।
তিনি বলেন, এবারের বইমেলায় কয়েকটি বিষয় নিয়ে আমরা ভাবব। মেলায় দৃশ্যগত একটি পরিবর্তন আসবে। ঋতুর পরিবর্তন। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব যারা মেলায় অংশগ্রহণ করবেন, পরিদর্শন করবেন, পাঠক-ক্রেতা হিসাবে যারা আসবেন সবাই যেন দুর্যোগ এলে একটি আশ্রয় পান। মেট্রোরেলের কাজ চলছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে দোয়েল চত্বর থেকে শাহবাগ। এই কাজকে অগ্রাধিকার দিতেই হবে।
এটিকে মেনেই মেলা করতে হবে। প্রকাশক, লেখক, পাঠক সবাইকে বিনীত অনুরোধ, তারা যেন এসব বিষয় ও কোভিড অবস্থা মাথায় রেখেই মেলায় আসেন। সবাইকে মাস্ক পরে মেলায় আসতে হবে। স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা থাকবে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে। তারপরও ব্যক্তিগত পর্যায়েও ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাঙালি হিসাবে আমরা সব প্রতিকূলতাকে জয় করেই আরেকটি বিজয় দেখাব। সেটা মেলায় সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই।
জানা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় স্টল কিংবা প্যাভিলিয়ন নির্মাণের ক্ষেত্রেও বিবেচনায় থাকবে দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি। থাকবে মেলায় আগতদের শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয়ের ব্যবস্থা। এছাড়া মেলাকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে নেওয়া হবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ।
আগামী ১৮ মার্চ বিকালে বইমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এ বিষয়ে সম্মতি প্রদান করেছেন বলেও জানা গেছে। তবে তিনি সরাসরি মেলা উদ্বোধন করবেন নাকি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন-সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নয় আয়োজক বাংলা একাডেমি।
মহামারিতে প্রকাশকদের ক্ষতির কারণে এবার মেলায় স্টল ভাড়া অর্ধেক নেওয়া হচ্ছে। মেলায় অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে ৫২০টি প্রকাশনা সংস্থা। ৪ ফেব্রুয়ারি ছিল প্রকাশকদের স্টলের ভাড়া প্রদানের শেষ দিন। স্টল ভাড়া জমা দেওয়ার পর ৮ থেকে ৯ মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে লটারি।
এরপর লটারিতে বরাদ্দপ্রাপ্ত জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হবে স্টল মালিকদের। জায়গা বুঝে নেওয়ার পর মেলা শুরুর দুই দিন আগে ১৬ মার্চের মধ্যে স্টল বা প্যাভিলিয়নের সব কাজ সম্পন্ন করতে হবে প্রকাশনা সংস্থাগুলোর।এ প্রসঙ্গে জ্যেষ্ঠ প্রকাশক ও অন্য প্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমরা প্যাভিলিয়ন ও স্টল ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মেলা করতে হবে।
আর স্বাস্থ্যবিধি ভালোভাবে মানার জন্য মেলার প্রবেশপথ বাড়াতে হবে। চারদিক থেকেই যাতে মেলায় প্রবেশ করতে পারে সেদিকটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। স্টলগুলো বিন্যাসের ক্ষেত্রেও চারদিক খোলা রেখে, নির্দিষ্ট দূরত্বে কীভাবে করা যায় সেটিও ভাবতে হবে। তাছাড়া ঝড়-বৃষ্টি এলে আশ্রয় নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট স্থাপনার বিষয়টি এবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জানা গেছে, এই প্রথমবারের মতো বইমেলার প্রবেশদ্বারে যুক্ত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনসংলগ্ন গেটটি। এছাড়া মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের বাকি দুই প্রবেশপথ হবে টিএসসি এবং বাংলা একাডেমির উল্টোদিকের গেট।
এসব বিষয়ে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী-এই দুই উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হবে এবারের মেলা। মেলার কাঠামোগত বিন্যাস ও নকশায় উদ্ভাসিত হবে দুটো বিষয়ই। মহামারির প্রতিবন্ধকতাকে বিবেচনায় নিয়েই আমরা একটি সুন্দর ও প্রাণবন্ত মেলার আয়োজন করতে চাই।
মেলার আগে টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত সড়কটি পরিচ্ছন্ন করে দেওয়ার জন্য মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তিনি আরও বলেন, মার্চ মাসে মেলা হওয়ায় ঝড়-বৃষ্টির বিষয়টিকেও বিশেষ বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। কারণ এ সময় বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করে। তাই এসব চ্যালেঞ্জ নিয়েই প্রকাশক, লেখক, পাঠকসহ সবার সহযোগিতায় আমরা একটি সুন্দর মেলার আয়োজন করতে চাই।
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ /এমএম





