Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: মিষ্টি মেয়ে তাহমিনা। দুষ্টামিরও শেষ নেই। দুষ্টামিতে বাড়ি সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখে। কাউকে সামনে পেলেই নানা রকম প্রশ্ন করে। মা প্রায়ই তাহমিনার প্রশ্নে অবাক হন। তিনি মনে মনে ভাবেন, এসব প্রশ্ন কোথায় পায়? ওর মাথা ভর্তি যেন প্রশ্নের বস্তা।

সেদিন সকালে মা তাহমিনার ছোট বোন তানিশাকে হাট্টিমাটিম টিমের ছড়া পড়াচ্ছিলেন। পাশ থেকে তাহমিনা ছড়াটি শুনতে পায়। এখানেও মা রক্ষা পাননি। ছড়া পড়ার মাঝখানে তাহমিনা প্রশ্ন ছুড়ে দিল। হাট্টিমাটিম টিম দেখতে কেমন? তারা কোথায় থাকে? মাঠে কেন ডিম পাড়ে? ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্ন।

মা, তাহমিনাকে বললেন, হাট্টিমাটিম টিম বলে কোনো প্রাণী নেই। এটা কাল্পনিক প্রাণীর নাম। ছড়ার বিষয়বস্তুও কাল্পনিক। তাহমিনা নাছোড়বান্দা। তাহলে এ ছড়া কোথায় পেলে? মা বিরক্ত হয়ে বললেন, শিগগিরই এখান থেকে যা। তাহমিনা সেখান থে?কে চলে যায়। কিন্তু প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

পাশের ঘরে দাদি একটা কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এবার তাহমিনা দাদির কাছে প্রশ্ন করল। আচ্ছা দাদি, হাট্টিমাটিম টিম দেখতে কেমন? তারা কোথায় থাকে? দাদি প্রশ্ন শুনেই কায়দা করে বললেন, আমার ওদিকে একটু কাজ আছে। আমি আসছি, দাদুভাই।

মা ভাবেন, মেয়েটা বড়ো হয়ে নিশ্চয়ই সবার মুখ উজ্জ্বল করবে। তিনি বোঝেন, এ বয়সে ছোট্ট মেয়ে একটু দুষ্টামি করবেই। ওর প্রতিটি প্রশ্নের পেছনে কিছু না কিছু যুক্তি আছে। তাহমিনার বয়স মাত্র আট বছর। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। পড়তে বসলেই গাদা গাদা প্রশ্ন মাথায় চাপে।

পড়ার চেয়ে দুষ্টামি বেশি করে। মা তাহমিনাকে প্রায়ই বোঝাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু সে মায়ের কোনো কথাই বুঝ?তে চায় না। মা চিন্তা করলেন, বাসায় একজন প্রাইভেট টিচার দিলে নিশ্চয়ই ওর পরিবর্তন আসবে। টিচারের ভয়ে হয়তো অতিরিক্ত প্রশ্ন করবে না, দুষ্টামিও করবে না। সেজন্য মা তাহমিনার বাবার সাথে আলোচনা করে প্রাইভেট টিচার নিয়োগ দিলেন।

পরদিন সকালে প্রাইভেট টিচার পড়াতে এলেন। তাহমিনাও পড়তে বসে। পড়ার মাঝে তাহমিনা স্যারকে নানা প্রশ্ন করে। টিচার একটু রাগী স্বভাবের। তাই তাহমিনার অতিরিক্ত প্রশ্নে রেগে যান। দু’দিন পড়ানোর পর টিচার আর এলেন না। তাহমিনার মা চিন্তায় পড়ে গেলেন।

সপ্তাহখানেক পর তাহমিনার বাবার পরিচিত এক বন্ধুর মাধ্যমে নতুন টিচার নিয়োগ দিলেন। তাহমিনা নতুন টিচার পেয়ে অনেক খুশি। কিন্তু টিচার আগে থেকেই তাহমিনার ব্যাপারে সব জেনেছেন। টিচার তাহমিনাকে বললেন, আজ তোমার কোনো পড়া নেই। আজ তোমার গল্প শুনব। তোমার কোনো প্রশ্ন থাকলে করতে পারো। কোনো ভয় নেই। তাহমিনা টিচারের কথায় বেশ খুশি। মনে মনে ভাবল, এবার স্যারকে ইচ্ছেমতো প্রশ্ন করার সু?যোগ পেলাম। কিন্তু তাহমিনার মাথায় কোনো প্রশ্নই আসছে না।

তাহমিনার চুপচাপ দেখে টিচার বললেন, কী ব্যাপার! আজ তোমার কোনো প্রশ্ন নেই? তাহমিনা মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে বলল, জ্বী না, স্যার। তাহমিনা খুব লজ্জা পেল। টিচার মিষ্টি হেসে বললেন, সমস্যা নেই। আজ আমরা শুধু গল্প করব। ফুল পাখিদের গল্প। আচ্ছা, তুমি কি কখনও ফুল পাখিদের গল্প শুনেছ? তাহমিনা মাথা নেড়ে বলল, জ্বী না, স্যার। তাহলে মনোযোগ দিয়ে শোনো। এই দেশে নানা প্রজাতির ফুল ও পাখি রয়েছে।

পৃথিবীর কোনো দেশে এতো সুন্দর ফুল-পাখি নেই। ফুল-পাখি আমাদের বন্ধু। পাখিরা মিষ্টি সুরে গান গেয়ে আমাদের আনন্দ দেয়। ফুল তার সৌরভ বিলিয়ে আমাদের মনকে সতেজ করে। বিনিময়ে ফুল-পাখিরা কিছুই চায় না। তাহমিনা নি?জের অজা?ন্তেই গল্পের মাঝে হারিয়ে গেছে। প্রশ্ন করার খেয়াল নেই। কারণ, সে এমন গল্প আগে কখনো শোনেনি। গল্পের পরতে পরতে মিশে রয়েছে তার ভালো লাগা ও ভালোবাসা।

ধীরে ধীরে তাহমিনার পরিবর্তন দেখা যায়। মা-বাবাসহ পরিবারের সবাই ভীষণ খুশি। তাহমিনা এখন নিয়মিত পড়তে বসে। স্কুলে যায়। সবার সাথে সুন্দর সুন্দর কথা বলে। স্কুলের সকল স্যার তার প্রতি খুশি। স্কুলে তার অনেক বন্ধু-বান্ধব হয়েছে।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ০৭  ডিসেম্বর ২০২০/এমএম


Array