Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: অংশগ্রহণকারীদের পরিচিতি- রিটার (Johann Ritter, 1776-1810) : জার্মান রসায়নবিদ এবং দার্শনিক; ভ্যান গ (Vincentvan Gogh, 1853-1890) : ওলন্দাজ চিত্রশিল্পী; রবীন্দ্রনাথ (Rabindranath Tagore, 1861-1942) : বাঙলার কবি, দার্শনিক, নাট্যকার,

ছোটগল্পকার প্রাবন্ধিক, চিত্রশিল্পী এবং সুরকার (ইউরোপের বাইরে তিনি-ই প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান)। আইনস্টাইন (Albert Einstein, 1879-1955) : পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ও আপেক্ষিক তত্ত্বের জনক। যদি পৃথিবীর বাইরে কোনো গ্রহে মানুষের চেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণীদের উদ্ভব হয়, তবে ওরা বলবে- পৃথিবীটি সেই গ্রহ, যেখানে আইনস্টাইন জন্মেছেন।ভ্যান গ : আমি একজন পোস্ট-ইম্প্রেশনিস্ট (post-impressionist) শিল্পী। আমার আঁকা ‘নক্ষত্রখচিত রাত্রি (Starry

Night)’ পৃথিবীর শিল্পানুরাগীদের ঘরে ঘরে টাঙানো থাকে। আমার তোলপাড় মনের দশা প্রকাশ করেছি, রঙের বেহিসাবি ছড়াছড়িতে। আমার সবচেয়ে প্রিয় রং ছিল- হলুদ। আমি এঁকেছি ‘ফুলদানিতে হলুদ সূর্যমুখী ফুল’; কখনও বারোটা ফুল; কখনও বা চৌদ্দটা। আমার তুলিতে ভোরের এবং সাঁঝের সূর্য হয়ে গেছে হলুদ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর :

‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে

তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ।

হাসিকান্না হীরাপান্না দোলে ভালে,

কাঁপে ছন্দে ভালোমন্দ তালে তালে,

কী আনন্দ, কী আনন্দ, কী আনন্দ

দিবারাত্রি নাচে মুক্তি নাচে বন্ধ…’

লেখক : তোমার এ গানটি আমার খুব প্রিয়, কিন্তু শরীরের কোন অংশ যে চিত্ত- তা কারও জানা নেই। তবে সেখানকার নর্তকিরা যে ইলেক্ট্রনের দল- সে নিয়ে বিজ্ঞানীদের এতটুকু সন্দেহ নেই। আলো, হাসি, রং, সুখ-দুঃখ ও ভালোবাসা- আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সব অনুভূতির উৎস হল বিদ্যুৎ। আর বিদ্যুৎ হল, ইলেক্ট্রনের চলাফেরা। আমাদের মগজ বাস করে মাথার এক দরজা-জানালাহীন অন্ধকার গুহায়; পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সব অনুভূতি ওখানে ঢোকে বৈদ্যুতিক সংকেত হিসেবে। এ সংকেত মগজের ইলেক্ট্রনদের নাচায়; কোনো নাচ আনন্দের; কোনোটি বা দুঃখের; কোনো নাচের অনুভূতি হলুদ রং আর কোনো নাচের অনুভূতি নীল। আরও অনেক নাচ আছে, যা থেকে কোনো অনুভূতির সৃষ্টি হয় না।

আমাদের মগজ ভেবে নিয়েছে, বেঁচে থাকার জন্য ওই অনুভূতিগুলোর প্রয়োজন নেই! বিজ্ঞানীরা অবশ্য ওইসব অজানা নাচের অনেক খবর জেনে ফেলেছে। ওদের নাম দেয়া হয়েছে- ইনফ্রা রেড, মাইক্রোওয়েভ, রেডিওওয়েভ, আলট্রা-ভায়োলেট, এক্স-রে ও গামা-রে ইত্যাদি। ভাগ্যিস মগজটি মাইক্রো নাচ শেখেনি! তাহলে দিন-রাত্রি বলে কিছু থাকত না। যে কোনো সময়ে মহাবিশ্বের যে কোনো স্থানে বা যে কোনো দিকে তাকালেই দেখা যেত ‘মাইক্রো’ আলো।

ঘুমাব কখন? তেরো দশমিক সাত বিলিয়ন বছর আগে যে মহাবিস্ফোরণ (Big Bang) থেকে এ মহাবিশ্বের সৃষ্টি, ‘মাইক্রো আলো’ তার অবশিষ্ট জ্যোতি। বিজ্ঞানীরা একে বলে ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন (Background radiation)। এরা সর্বক্ষণ আমাদের ঘিরে থাকে। ওদিকে হলুদ হল, দৃশ্যমান রংগুলোর মধ্যমণি। শিল্পী ভ্যান গ একটুও ভুল করেননি। সূর্যমুখী সূর্যের দিকে চেয়ে থাকে। কারণ সূর্য আর সব রঙের চেয়ে সবুজ রং সবচেয়ে বেশি ছড়ালেও বায়ুর স্তর ভেঙে আসতে আসতে হলুদটিই প্রাধান্য পায়।

রিটার : সূর্যের আলো প্রিজম দিয়ে ছড়িয়ে নিউটন বর্ণালি সৃষ্টি করেন, গানের সাতটি তানের সঙ্গে মিল রেখে রংগুলোর সাতটি নাম দেন- বেগুনি, ঘন নীল, নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা এবং লাল। এর বাইরে যে আরও না-দেখা রং আছে, তা বিজ্ঞানী হার্শেল (Wiliam Herchel) প্রথম টের পান। বর্ণালির রংগুলো তাপমাত্রায় কোনো ভেদাভেদ আছে কিনা- তা তিনি থার্মোমিটার দিয়ে মাপছিলেন। তিনি অবাক হয়ে দেখলেন, লাল আলোর পাশে রংহীন জায়গাটি সবচেয়ে বেশি তাপ ছড়াচ্ছে।

ওখানে তাহলে এক ধরনের আলো আছে, যা আমাদের চোখ দেখতে পায় না। হার্শেল সেই না-দেখা রঙের নাম দেন- ইনফ্রা রেড। বেগুনি রঙের ওপারেও হয়তো কোনো অদৃশ্য রং আছে! এ নিয়ে অনেক গবেষণা করে আমি আলট্রা-ভায়োলেট রঙের সন্ধান পাই। আমরা দেখতে না পেলেও প্রজাপতি, পাখি ও পোকামাকড় কিন্তু ইনফ্রা রেড এবং আলট্রা-ভায়োলেট রং দেখতে পায়। আমাদের চোখে মাত্র তিনটি রং নির্ধারক সেন্সর আছে- লাল, সবুজ এবং নীল। এদের (primary colour) মিশ্রণ থেকেই আমরা আর সব রঙের অনুভূতি পাই।

লেখক : বেগুনি থেকে লাল রং- সব একসঙ্গে মেশালে তা দেখাবে সাদা। সূর্যের সাদা আলো গাছের পাতায় পড়ে, সবুজ বাদে আর সব আলো পাতার ইলেক্ট্রনগুলোকে নাচায়; সেখানে তাপ সৃষ্টি হয়; সেই শক্তি দিয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং পানি থেকে পাতা তৈরি করে খাদ্য ও অক্সিজেন। সবুজ আলোটি কোনো কাজে লাগে না; পাতা ওকে আবার চারদিকে ছড়িয়ে দেয়। তাই তো পাতার রং সবুজ।

আলো হল বিদ্যুৎ এবং চুম্বকের ঢেউ। আমরা যে আলো চোখে দেখতে পাই, তার মধ্যে লাল আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বড়; বেগুনি আলোর দৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম। তরঙ্গ দৈর্ঘ্য’র দিক থেকে লাল আলোর পরে আছে ইনফ্রা রেড, মাইক্রো এবং রেডিও ঢেউ। ওদিকে আলট্রা-ভায়োলেটের চেয়ে ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘ্য’র ঢেউয়ের নাম এক্স-রে এবং গামা-রে।

আইনস্টাইন : রেডিও’র মতো বড় তরঙ্গ থেকে ক্রমাগত ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘ্য’র ঢেউয়ের দিকে যাত্রা শুরু করলে এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটে! আলট্রা-ভায়োলেটের কাছে এসে আলো হঠাৎ ঢেউ থেকে কণা হয়ে যায়। এ কণাগুলোকে ফোটন বলে।

এমন আলো ধাতব পদার্থের ওপরে পড়লে, ইলেক্ট্রন আর নাচে না; নাচের বদলে লাফ দিয়ে বস্তুর বাইরে চলে আসে। একে বলে ফটোইলেক্ট্রিক ইফেক্ট। এর ব্যাখ্যা দিয়েই আমি নোবেল পুরস্কার পাই। ফোটন হল আলোর কোয়ান্টাম রূপ। কোয়ান্টাম তত্ত্বকে আমি কখনই ভালোবাসতে পারিনি, কিন্তু আলোর কোয়ান্টাম রূপের সন্ধান দিয়ে আমি কোয়ান্টাম তত্ত্বের গোড়াপত্তন করি।

আমি আমার জীবনের পঞ্চাশ বছর কাটিয়েছি আলো কী- তা ভেবে। আলোর বেগে চললে সময় এবং স্পেস অদৃশ্য হয়ে যায়; অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ আলাদা করে চেনা যায় না; সীমা-অসীমের মাঝের বেড়াটি লোপ পায়! আলো নিয়ে একের পর এক তত্ত্ব দিয়েছি- বিশেষ করে আপেক্ষিক তত্ত্ব, মহাকর্ষ ও কোয়ান্টাম; তবুও আলোকে জানতে পারিনি। ‘আজকাল অনেক গর্দভ মনে করে, ওরা আলোকে বোঝে; কিন্তু ওরা শুধু-ই নিজেদের সঙ্গে ছলনা করছে।’

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ০৭  নভেম্বের ২০২০/এমএম