বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (এফডিসি)বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (এফডিসি)বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (এফডিসি) কয়েক কোটি টাকা পায় প্রযোজকদের কাছে। ১৯৯১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০০ ছবি নির্মাণে কারিগরি সহায়তা ও ফ্লোর ভাড়া বাবদ এই টাকা প্রতিষ্ঠানটির পাওনা। এর মধ্যে সেন্সর বোর্ডে জমা আছে ৪১টি ছবি। যার বকেয়া বিল ৫ কোটি ৫৮ লাখ ৭২ হাজার ৭৯০ টাকা এবং নির্মাণাধীন প্রায় ১৪০টি ছবির বকেয়া বিল প্রায় ১০ কোটি টাকা। মোট বকেয়া বিলের পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজর ৬১৩ টাকা। প্রযোজকদের বক্তব্য, ৩৫ মিলিমিটারে ছবি তৈরি করায় এখন কেউ আর ছবি প্রিন্ট করাতে আগ্রহী নন। কারণ সেগুলো আবার ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তর করতে আরও টাকা প্রয়োজন। ফলে বকেয়া টাকাও পরিশোধ করছেন না তাঁরা।
বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ বলছে, বছরের পর বছর ধরে বকেয়া এই কোটি কোটি টাকা তারা প্রযোজকদের কাছ থেকে আদায় করতে পারছে না। টাকা পরিশোধের জন্য প্রযোজকদের কাছে অনেকবার চিঠি পাঠানো হলেও এর কোনো সুরাহা হচ্ছে না। বিএফডিসির অডিট কর্মকর্তা ও হিসাবরক্ষণের দায়িত্বে থাকা হেমায়েত হোসেন বলেন, ‘বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য পর্যায়ক্রমে ছবির প্রযোজকদের কাছে অনেকবার চিঠি দিয়েছি। কোনো সাড়া পাইনি। আমরা তো হাঁপিয়ে উঠেছি। আর কত চিঠি দেব। এতে এফডিসি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
বহু বছর ধরে এসব বকেয়ার টাকা অনাদায়ি থাকার ফাঁকে কোনো কোনো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তাদের অফিসের ঠিকানাও পাল্টে ফেলেছে। এ কারণে অনেক চিঠি ফেরত আসে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। বিএফডিসির উচ্চমান সহকারী (উত্পাদন) ফিরোজা বেগম। বিএফডিসির প্রশাসনিক ভবনে তাঁর রুমে একাধিক চিঠির কপি দেখিয়ে বলেন, ‘বকেয়া টাকা পরিশোধের জন্য এভাবেই দিনের পর দিন প্রযোজকদের চিঠি দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু প্রযোজকেরা কোনো সাড়া দিচ্ছেন না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, টাকা পরিশোধ না করার কারণে অনেক প্রযোজকের নামে মামলাও পারে। যদিও প্রযোজকেরা জানিয়েছেন, ৩৫ মিলিমিটারে তাঁরা ওই ছবিগুলো তৈরি করেছেন। এখন ডিজিটাল মাধ্যমে রূপান্তর করতে আরও টাকা দরকার। তাই সেন্সর বোর্ডেই জমা আছে ছবিগুলো। নির্মাণাধীন ছবিগুলোও আর নির্মাণের ইচ্ছা নেই। বকেয়া টাকা মওকুফের জন্যও আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।
কঠিন নারী ছবিটি তৈরির সহায়তা বাবদ ঘাসফুল কথাচিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কাছে এফডিসির পাওনা প্রায় ১৫ লাখ টাকা। ছবিটির প্রযোজক হিমেল খান বলেন, ‘আমি তো ছবির প্রিন্ট এখনো এফডিসি থেকে নিইনি। এটি ৩৫ মিলিমিটার ক্যামেরায় ধারণ করা ছবি। এখন মুক্তি দিতে গেলে ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তর করতে হবে। সেখানেও খরচ। অনেক আগের ছবি। প্রেক্ষাগৃহে এখন আর ছবিটির দর্শকও তেমন পাওয়া যাবে না। তাই বকেয়ার পুরো টাকা পরিশোধ করা এখন আর সম্ভব না। এখানে আমাদেরও বিরাট লোকসান হয়েছে। প্রযোজক সমিতি গঠিত হলে এফডিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে এ ধরনের সব ছবির বকেয়া কমপক্ষে অর্ধেক মওকুফ করার একটি আবেদন করব।’
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রানা চলচ্চিত্রের ছলনাময়ী নারী ছবিটি সেন্সর বোর্ডে জমা আছে। ছবিটি নির্মাণ সহায়তা বাবদ প্রযোজকের কাছে বিএফডিসির পাওনা প্রায় ১৬ লাখ টাকা। এই ছবির প্রযোজক রানা হামিদ বলেন, ‘এফডিসি আমার কাছে টাকা পাবে ঠিক আছে, কিন্তু আমার তো ছবিটি তৈরি করতে আরও ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। এখন ডিজিটাল ফরমেটে রূপান্তর করে মুক্তি দিতেও বাড়তি খরচ আছে। মুক্তি দিলেও তো দীর্ঘদিন আগে তৈরি এই ছবির গল্প ও সময় মিল না থাকায় দর্শক এখন ছবিটি দেখতে হলে আসবেন না। সুতরাং ছবিটি থেকে আমিই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এফডিসির এ বিষয়টি দেখা উচিত।’
দেশে ক্রমেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। প্রযোজকদের পাশে দাঁড়াতে সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক প্রযোজক নেতা কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া। তিনি বলেন, ‘সিনেমার অবস্থা বর্তমানে খুবই খারাপ। সিনেমাকে বাঁচাতে প্রযোজকদের সহযোগিতা করতে হবে। আমরা চাই সরকার যেন প্রযোজকদের এই দেনা মওকুফ করে দেয়।’
মওকুফ করার ব্যাপারে বিএফডিসির পরিচালক (কারিগরি ও প্রকৌশল) ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আইয়ুব আলী বলেন, ‘মওকুফ করলে প্রযোজকের সুবিধা হয় ঠিক আছে, কিন্তু বর্তমানে বিএফডিসি খুবই আর্থিক সংকটে আছে। আমাদের পক্ষে মওকুফ করা সম্ভব নয়। সরকার থেকে নির্দেশনা এলে সম্ভব হবে।’
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ৯ মে ২০১৯/ এমএম