প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: চার দিন ধরে ক্যালিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ক্যালি মানে সদ্য মা হওয়া আমাদের পোষা বিড়াল। আমার বড় মেয়ে বাঁধনের বিড়াল পোষার শখ তাও আবার দেশি বিড়াল। ঘরে আট দশটি বিড়াল। তাদের খাবার ও পটির জন্য তার মোটা অঙ্কের একটি বাজেট রয়েছে। বাইরের বিড়াল কুকুরকেও সে প্রতিদিন খাবার কিনে খাওয়ায়। এলাকার কুকুরগুলো ওকে দেখলেই দৌড়ে আসে। অফিস থেকে বাসায় আসার আগে সে কুকুরগুলোকে খাবার কিনে দিয়ে তারপর ঘরে ঢোকে।
যাই হোক এতগুলো বিড়াল পোষার জন্য বাঁধন ও আমাকে প্রায়ই আত্মীয়স্বজনরা বকাবকি করেন। বাঁধনের দাদু ও চাচারা প্রায় ওকে ফোন দিয়ে বোঝায় এত বিড়াল না পুষে একটা বিদেশি বিড়াল পোষ এতে ঘরের পরিবেশ ভালো থাকবে। তার একটাই বক্তব্য বিদেশি বিড়াল পুষলে দেশি বিড়ালের কি হবে? বিড়ালের কারণে বাসায় তেমন একটা মেহমান আনতে পারি না।
আমি মেয়ের সেন্টিমেন্টের মূল্য দিতে কিছু বলি না। তাই সময়মতো তাদের জন্য আলাদাভাবে রান্না ও ক্যাট ফুড খাওয়াতে আমারও অনেকটা সময় পার হয়ে যায়। মাঝে মাঝে আমার খুব কষ্ট হয় তবুও মেয়েকে কিছুই বলি না, কারণ আমি নিজেও বিড়ালের মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে গেছি।
মাসখানেক আগে ঘরের সবচেয়ে সুন্দর ও শান্ত বিড়ালটি হারিয়ে গেছে তাকে অনেক খুঁজেও পাইনি। বাঁধন একটা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে এলাকার কিছু জায়গায় লিফলেট লাগিয়ে দিয়েছে। তাতে কোনো কাজ হয়নি বিড়ালটিকে আর পাওয়া যায়নি।
এরই মধ্যে আরেকটি বিড়াল হারিয়ে গেল আমি ও বাঁধন আশপাশের জায়গাগুলোতে খুঁজে ক্যালিকে আর পেলাম না। ক্যালির তিনটি বাচ্চা এখনো চোখ ফোটেনি, তাদের জন্য অবশেষে ফিডার ও দুধের ব্যবস্থা করা হলো। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আশপাশে চোখ বুলাই কোথাও ক্যালিকে দেখা যায় কিনা। কিন্তু পাওয়া গেল না। এই হারানোর শোক আমাদের ঘরে সবার মধ্যে ভর করে আছে।
ভোর পাঁচটায় বাঁধনের ডাকে আমার ঘুম ভাঙে, বাঁধন সারারাত ঘুমায়নি। নিচে কয়েকটি কুকুর একটা বিড়ালকে মারছে আর বিড়ালটা গোঙরাচ্ছে। আমি ও বাঁধন দৌড়ে নিচে কলাপসিবল গেট খুলে বাইরে যাই, দেখি ক্যালি মরে পরে আছে আর কুকুরগুলো তাকে খাওয়ার জন্য ওতপেতে আছে। আমরা যাবার সাথে সাথে কুকুরগুলো সরে যায়।
বিড়ালটিকে ধরে বাঁধন চিৎকার করে কাঁদছে আমারও চোখ দিয়ে টপটপ করে জল ঝরছে। আমি কিছু বলার আর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। বাঁধনকে বুঝিয়ে ঘরে আনি। একটা কুকুর মরা বিড়ালটিকে মুখে নিয়ে দৌড়ে চলে গেল, বাকিরাও তার পেছনে পেছনে দৌড়ে গেল।
কুকুরগুলো অভুক্ত বোঝা যায়। ঘরে ঢুকে আমি আর মেয়ের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। মেয়ে তার রুমে গেলে আমিও আমার রুমে এসে আবার শুয়ে পড়ি। ক্যালির মরা শরীরটা বার বার আমার চোখে ভাসে। আমার ভেতর থেকে আসা চীৎকার অনেক কষ্টে আটকাই।
সন্তান হারানোর মতো সে কষ্ট। ঘণ্টা কয়েক পর আমি রান্না ঘরে ঢুকি, মনে হলো বিড়ালটি আমার পাশে পাশে ঘুরে খাবার চাইছে। ক্যালির নিস্তেজ শরীরটি মনে পড়তেই আমার ভেতরের গুমোট কান্না স্রোতের মতো বইতে থাকে।সারাদিন শুধু ভাবছি কতটা কষ্ট সয়ে বিড়ালটা মারা গেল, আর কতটা অভুক্ত থাকলে কুকুরগুলো মৃত বিড়ালটি নিয়ে এমন উৎসবে মেতে উঠতে পারে।
হায় পেট হায় ক্ষুধা। যুগে যুগে সবল এভাবেই দুর্বলকে খাদ্য বানায়; তা মানুষ অথবা জীবজন্তু যে-ই হোক…
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ১০ অক্টোবর ২০২০/এমএম





