Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: কল্পনার আলপনায় গড়া প্রতিটি মানুষ; যেখানে তার ছবি আছে, রং আছে, বক্তব্য, বিষয়, অভিমত, দর্শন আছে। আছে তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা। আর কবিদের কাজই হলো কল্পনাকে গভীর গোপন নির্জন নীড় থেকে আলতো করে সর্বসমক্ষে তুলে ধরা।

ব্রহ্মাণ্ডের যাবতীয় গুপ্ত সমাচার প্রচার করে আবাল অপরাধীর খাতায় নাম লেখাতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না একমাত্র কবিরাই। চোখ বুজলে দেখা যায় বাংলা কবিতার পেছনে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস, যা আজ কিংবদন্তির মতো কথার ধ্বনিছবি মাত্র। সেই সূচনা কাল থেকে ব্যবহারে, অপব্যবহারে প্রচলিত কবিতার দেয়ালে আড়াআড়ি ফাটল ধরেছে।

প্রণিহিত শরীরে তার জমে উঠেছিল স্থ্থূল গতানুগতিক ক্লেদের পলল। ভোগী মানুষের অনাধুনিক সালংকারায় বন্দি হয়ে কবিতা হয়ে পড়ে শিল্পহীন, কৃত্রিম, অবাস্তব ও প্রতিদিষ্ট। দিন বদলায় এবং এটাও সত্যি পাশাপশি তার কালও বদলায়। কালের এই কলঙ্কের দাগ নিভু নিভু, নিঃস্ব দরিদ্রতা থেকে তার মুক্তি ঘটে।

হাজার বছরে অন্তত হাজারটি স্তম্ভ স্পর্শ করে বাংলা কবিতার উত্থান ঘটেছে, ঘটছে। শূককীটের কদাকার খোলস পাল্টে ইতিহাস, দর্শন, বিবর্তনে জারিত হয়ে মেধা আর মননশীল চেতনার মাঝে ঘটেছে কবিতার কেন্দ্রাপসরণ। সংজ্ঞা নিয়ে কোলাহলের কাহারবায় আজও তর্ক চলে। সান্ধ্যভাষায় প্রস্তাব আর প্রত্যাখ্যানে মারকাটারি যুদ্ধ চলে।

‘আধুনিক’ শব্দটিকে বাদ দিয়ে ‘সাম্প্রতিক’ কবিতা— এই শাব্দিক অভিধা বোধকরি শরতের এই সকালবেলায় আমরা দিতেই পারি। কেউ স্বীকার করুক আর না করুক, পর্বত যে বৈশাখের নিরুদ্দেশ মেঘ হতে চায় অযথা হঠাত্, একথা পাহাড় স্বীকার করে না। কিন্তু কবি তাকে মান্যতা দেয়।

মাঝি মরবে, হাল ভাঙবে। নৌকা কি তবে স্থির থাকবে? দরিয়া যতই দানবিক আচরণ করুক নতুন মাঝি তার নতুন হাল-এ যাত্রীদের ঠিক তীরে পৌঁছে দেবে। গতকে বাঁচিয়ে রাখে মূলত আজ। আর আজ’কে ভবিষ্যত্। হয়তো এমন চিন্তা থেকেই প্রবীণের ওপরে আছড়ে পড়ে তরুণ। সময় কখনোই শূন্যস্থান পছন্দ করে না। তো আলোচ্য পঁচিশ কবি তাদের কবিতা দিয়ে আমাদের কতটা মুগ্ধ করলেন— আসুন সেই সোজা পথে এবার হাঁটা যাক।

কবিতা তাদের স্বপ্নময়; প্রেমের, তবে অবাস্তবতার ভেতর কবি পিয়াস মজিদ ও চাণক্য বাড়ৈ বেদনার চালাচালিতে কিছুটা লাজুক। মনে হলো স্বপ্নের মাধুর্য খানিকটা বাজিতে ধরা আছে। পিয়াসের ‘ফুলদল থেকে যা ছিল নির্বাচনে অথবা দৈবচয়নে।’ চাণক্যের ‘আর প্রেম, সে তো এক নীরব বজ্রপাতের নাম।’

স্নিগ্ধ কবিতার যাত্রা অনেকাংশে ভেতর যাত্রা, আত্মায়, তখন সে কবিতার স্মৃতিসঙ্গ হয়ে ওঠে কবিতা নিজেই। কল্পনার রোমান্টিক নীলিমার স্তর বা সূর্যাস্তের রক্তাকাশের স্তরকে চিহ্নিত করার পরিচিতি প্রয়াসে অন্তঃশীল থাকে চাণক্যের লুকানো কষ্ট নিয়ে কী সুন্দর মিথ্যে উচ্চারণ— ‘যেমন, এমন অনেক আকাঙ্ক্ষা নিঃশব্দে লুকিয়ে রাখে গোপন প্রেমিকা—’।

কালের কৈলাস পর্বত পেরিয়ে লক্ষ করলে আমরা দেখতে পাই, হালের টাটকা কবিতায় বিষয় নির্বাচনে যুক্ত হচ্ছে— ব্যক্তি, সমাজ, জীবনবোধ, লজিক, কূটাভাষ, মনস্তাত্ত্বিক চেতনাচেতন, নতুনের আদল অন্বেষণ প্রভৃতি। তাতে কবিতায় ধরা পড়ছে স্বকালের প্রতিধ্বনি।

পিয়াস সেই ধ্বনির-ই সন্তান। আমি বিশ্বাস করি কবিতার ঐক্যসূত্রে গঠিত হচ্ছে কপাল থেকে লালটিপ খুলে লাগিয়ে রাখা সুখী আয়নার কাচ দিয়ে ঘেরা দূরের হাজারও আলোকস্তম্ভ। কুয়াশা ভেদ করে স্পষ্ট কানে বাজে অন্বেষীকলে­ালের ধ্বনি। কবি স্নিগ্ধা বাউল ও হাবিবুল্লাহ রাসেল তাদের ভাবনা-কল্পনা সমাজের প্রতি দৃষ্টি ধারণের ফলে সমকালীন উত্থান-পতনের স্বপ্নে আঁকা ভোরে ভেসে নয়, তারা কবিতাকে এনেছেন ফটোগ্রাফিক ফেনোমোনা থেকে।

অন্তর্যোজনায় না এসে ভূমিষ্ঠ করেছেন তাকে সরাসরি। যেখানে কোনো প্রশ্ন নয়, সিদ্ধান্তও নয়, একটি সরল আকাঙ্ক্ষার কথা কেবল ব্যক্ত করেছেন। স্নিগ্ধার— ‘পাথরের অক্ষরে লিখে রাখা পৃথিবীর ইতিহাসে জেগে থাকে সমুদ্র একা’ ওদিকে রাসেলের— ‘বিদ্যুত্ বাতি-জোছনা মিলেমিশে পাহারা দেয় গোবরলেপা উঠোন,’ লাইনগুলো যেন ঝিমধরা দুপুরে, একা, চরাচরে কেউ নেই, থাকার কথাও নয়; তবু অকারণে ভুল করে কে যেন ফিসফিস করে থেকে থেকে বলে— কাকা, কাকীমা ডাকছে! হয়তো চমকে পেছন ফিরি।

অথচ কেউ নেই, দূরের হিজল গাছে শুধু কালো এক কোকিল বসে আছে। এমনটাই কুহকনির্ভর মনে হয়। গোপন তথ্য ফাঁস করা বলা চলে অপরাধের সামিল। কিন্তু কবি চামেলী বসু কেমন অবলীলায় প্রকাশ করে দিলেন— ‘তোমার চিবুকের তিলে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে দিতে পারি এ কোন প্রেম নয়, প্রেমের প্রহেলিকা।’

ভাবুন একবার বনলতা সেনের কথা। তিনি কতখানি সকাতরে, একান্তে এবং অস্ফুটে জিজ্ঞাসা করেছিলেন— এতদিন কোথায় ছিলেন? এখানে চামেলীও তাই করেছেন। আসল কথা হলো প্রকাশপ্রবণতা। পৃথিবীতে কোটি কোটি লোক জ্যোত্লা দেখে, কই! তারা সবাই তো তা প্রকাশ করে না।

আসলে যার দেখবার সে নিজেই পর্দা সরিয়ে দেখে। রক্তের মধ্যে, হৃদপিণ্ডের মধ্যে, অস্তিত্বের মধ্যে খানিকটা হলেও তার এই রূপ ধরা পড়ে। যেমন পড়েছে কবি আফসানা জাকিয়া ও সাইয়্যিদ মঞ্জু’র ক্ষেত্রে।

কবিতার আদিবাস কবির মনে। সেখান থেকেই ঘটে তার উত্সারণ। কবির মনোরাজ্য থেকে প্রকৃতিরাজ্য নিমেষে লোপাট করার একক অধিকার থাকে তার। কবি কুশল ভৌমিক, হিরণ্য হারুন, মারুফ আহমেদ নয়ন চিত্ত দখলের খেলায় অনেকটাই এগিয়ে। বনের সঙ্গে মনের অতিথি পাখিকে নিয়ে নিত্য উড়াল দিতে তারা ভালোবাসেন।

পাশে রাখতে চান আবেগের পঙ্খিরাজ ঘোড়াটিকে। উড়ে উড়ে হয়রান, তাদের মতো আমরাও জানি সে রাজ্য ঠিকানাবিহীন। সেখানে ভাবনা, কল্পনা, বাসনা, প্রকৃতির রহস্যজাল আর অপ্রাপ্তির ক্ষিপ্ত যন্¿ণার রেখাচিত্র বিমূর্ত আকারে ফুটতে থাকে। কুশলের— ‘আর্কিমিডিস, আপনার কি জানা আছে সম্পর্ক ডুবে গেলে কেন আর ভেসে ওঠে না কোনো দিন? হিরণ্য হারুনের— ‘জানলার শার্সিতে লেগে-থাকা কুয়াশার মানচিত্র মুছে কিছু কর্মফল স্থান করে নেয়—’ নয়নের ‘হাওয়াদের ভেতরে বুঝি আজ বালিকার বিবাহ রাত্রি।’

‘তুমি হাত ইশারা করছো আর হাওয়ার ভেতরে অজস্র ডুমুর গাছের পাতা ঝরছে।’ অকারণেই ভালো লাগে। কদমকুসুমের মতো শুষে নেয় ভাবনার জল পরানের উত্তপ্ত জমিন। কবিতায় ভাবের পরে থাকে ভাষা ও শব্দের খেলা। কবিরা এই ভাব-ভাষাকে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করে তৈরি করেন নতুন একটি ভাবানুষঙ্গ। যাকে আমরা বলি কাব্যভাষা।

কবি জান্নাত লাবণ্য, সবুজ আহমেদ, তানিয়া হাসান ও বীথি রহমান সেটা প্রস্তুত করতে খানিকটা খেই হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে আস্বাদনে টক, ঝাল, মিষ্টির পারফেক্ট ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটল না। আসলে কবিকে হতেই হয় অভ্যাসাশ্রয়ী, তিনিই চিনিয়ে দেন কিভাবে কবিতা দিয়ে আরেক মানুষের হূদয়ের গোলাপ উন্মোচিত হয়, বিশ্ব আর ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠে একাকার।

আজ না হোক একদিন তারা ভালো লিখবেন এ আশা মনে পোষণ করি। আধুনিক কবিতার যে দুর্মর ব্যাধি জীবন-পলায়নী মনোবৃত্তি প্রায় সব কবির মতো কবি নিলয় রফিক ও সাজ্জাক হোসেন শিহাব তাতে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। তাদেরকেও আধিগ্রস্ত করে রেখেছে। কবিতার মধ্যে হতাশা, নৈরাজ্য ও অবক্ষয়ের ক্ষয়টা অল্প, বরং জীবনের ও স্বপ্নের বিপুলতা ঢের বেশি। বিশ্বাসের সবুজ চর এবং সূর্যের উদয়াভিসারের আনন্দটা বেশি। তবে ঝামেলা আছে অন্যখানে।

এই যে ঠাস ঠাস শব্দের পর শব্দ বা ফ্রেজের পর ফ্রেজ, এরা কেন আসছে কোত্থেকে আসছে এ নিয়ে একটা দ্বন্দ্ব কাজ করে। মনে হয় কাব্যটি অসহিষ্ণু, সংঘর্ষময়, ক্লান্তিকর। আসলে হয় কি, কবিতা সৃষ্টিকে প্রতিবিন্দুতে সংস্থাপন করতে হলে সময়ের প্রতি পলকা উচ্চারণ করলে চলবে না। সেখানে থাকতে হবে বিস্ময়, থাকতে হবে প্রেম, তিতির পাখির কান্না— অর্থাৎ এইসব পরিপার্শ্ব এক হয়ে স্থিত হবে সংগতির ভিতর, অসংগতি মূর্তময় হবে না। মনোবিক্ষায় ধরা দেবে অচেনা স্পন্দন, যা নেই দর্শনে, যা নেই ইতিহাসে। অন্তর স্পর্শযোগ্য নিলয়ের বরং এটুকু ভালো লাগলো— ‘অদূরে কবিতাবাড়ি’ ‘শব্দঘরে চোখের কুহক’।

অগ্রসরমানতায় নতুন সূত্র যেমন তুমল উত্পাত বাধায় বিপরীতে একথাও ঠিক, দিক নির্দেশনার সুস্পষ্ট কম্পাস কাঁটাও তৈরি করে বটে! ‘পাড়ে বসে কাঁদে কি বেহুলা সুন্দরী? এ তো দেখি বড় জ্বালা! নতুন করে বাজে কেন পুরোনো মঞ্জুরি!’ ‘তোমায় দেখার চেয়ে অন্ধকার দেখি ঢের’ কবি শাহিন আখতার সবেমাত্র নির্মাতা, কিন্তু সুদক্ষ নির্মাণ কুশলতা তাদের হাতে আসি আসি করছে।

ছোট কবিতার এ অংশগুলো তারই প্রমাণ। বক্তব্য নিরেট, ফাঁকহীন, কিন্তু সঙ্গীত সুষমার অপূর্ব ললিতজ্যোতি লতিয়ে ওঠার যে শাব্দিক ও শব্দ নিরপেক্ষ প্রক্রিয়া সে পথে আসতে কিছুটা পরিশ্রম করতে হবে বৈকি! এটুকু বুঝি কবিতার চিরপ্রবাহমান ধারায় কোথাও কোনো শ্মশানভূমি নেই। এককালের কবিতা মরে যায় ঠিকই কিন্তু সেই মুহূর্তেই পরের কালের কবিতা জেগে ওঠে।

যা মরে যায় তার পরিণতির মধ্যেই থাকে জাগরণের ধারা। বস্তুত এর কোনো শেষ নেই। কবি শ্রাবণী প্রামাণিক ও কামরুন নাহার কুহেলী এ ধারার নতুন অতিথি। ‘ডুবতে ডুবতেই ডুবুরি হয়।’ ‘ভাসতে ভাসতে বানভাসি হয় জলজীবন।’ ‘পাপ ছোঁয়া বাতাসে আমি তোমার সব পুণ্য মিশে যেতে দেখি!’ ভালো লাগলো।

কবিতার সবুজ বনেলা ভূমি থেকে এ কালের কবিরা জানিয়ে দিচ্ছেন এক নতুন ঘোষণা। কালের প্রবাহমানতায় দাঁড়িয়ে তারা কবিতার সংজ্ঞাকে পাল্টাতে চান। এক নতুন অভিধায় চিহ্নিত করতে চান একালের কবিতাকে। প্রজ্ঞা মৌসুমী, ইব্রাহীম রাসেল, মাহমুদ নোমান— তারা তাদের দর্শন, ভাবানুষঙ্গ, উপমা ও রূপক দিয়ে মোচড়ের মারহাবা পান।

প্রজ্ঞা’র ‘ধরি লবণ, না ছুঁই সমুদ্র’ ‘গাছেরও জ্বর হয়। গাছেরাও চায় কপালে জলোচ্ছ্বাস;’ নোমানের— ‘বাবাও মাঝে মধ্যে দেখা দিতেন স্বর্গের কাছাকাছি একটা বিলে’। তবে খেয়াল রাখতে হবে কবিতা যেন হয় ব্যক্তির তীব্র, অসহ্য খামখেয়ালের সংযমহীন স্টাইল। কবিতা এক অর্থে সাহিত্যের সমগ্র সৃষ্টির সবচেয়ে পরিশীলিত রূপ। এর শব্দনির্ভরতা, ইঙ্গিতময়তা বা আভাসময়তা নানা অনুষঙ্গে টংকার দিয়ে ওঠে।

পাঠকের চেতনা সহজেই যাতে ঘুমিয়ে না পড়ে সেজন্য ভালো কবিতা কখনোই সরলীকরণের পথে চলে না। কবিতার সৃষ্টিজগত্ নানাবিধ স্মৃতিসৌধ নিয়ে পাঠকের সামনে হাজির হয়। কবিতা এখন আমাদের পরিচিত পরিবেশকে চেনা শব্দের নতুন ব্যবহারে সম্ভব করে তুলতে হবে। তা না হলে কবিতা হয়ে পড়বে অন্ত্যজ। কবি সানাউল­াহ সাগর, ফিহির হোসাইন ও আশিক বিন রহিম তারা তাদের নিজস্ব আর্তি ও জাগর চৈতন্যের টানাপোড়েন ছড়িয়ে দিয়েছেন এভাবে— ‘জ্বলজ্বলে নিষেধ তাকিয়ে থাকে আমার চোখে আমি বিপন্ন; অদৃশ্য হই’ ‘এক ফোঁটা বিষে মিশিয়ে দিয়েছে আরেক ফোঁটা বিষ’।

এবার সংগোপনে জানাই কবিতা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা, বিচার-বিশে­ষণ করা এক জিনিস আর কবিতা লেখা আলাদা ব্যাপার। মূল কথা হলো সিগনিফিক্যান্ট ইমোশনকে বাদ দিয়ে কবিতার বর্তমান ধারাবাহিকতা থেকে স্বতন্¿ আসন পাওয়া দুরূহ ব্যাপার। নির্ধারিত কবিদের বলি— কবিতার মান সম্পর্কে সমকালে কিছু বলা, অর্থাত্ নিন্দা না করে সুউচ্চ প্রশংসা করা সাহিত্যের সংবিধানে মানা।

ব্যক্তিগতভাবে মান নির্বাচনে বিশেষ কোনো অভিধা দেবার মালিক আমি নই। কবিতাকে জাগিয়ে তুলবে পাঠক এটা যেমন সত্যি, কবিতার মৃত্যুও সূচিত করে সেই পাঠক। সমকাল আজ বড়ই ধুর ও ক্রূর। কোনো একক বিশ্বাসের শিকড় সমকালের শিলীভূত কঠিন অন্তরে ঠাঁই ফেলতে পারেনি। আঁচড় হয়তো বা কিছু লেগেছে তবে সেটা ছিন্নভাবে। কবিতা লেখার কাজটা খুব সহজ আসলে এ ভাবনা থেকে আমাদের নিষ্কৃতি নিতে হবে।

শব্দের পবিত্র শিখা দিয়ে তাকে প্রজ্বলিত করার দায়ভার একমাত্র কবিরই। মনে রাখতে হবে কবিতা কেবল বাজবার জন্য নয়, বাজাবার জন্যও। কবিতার নিজস্ব একটি শক্তি আছে। চরম দুরবস্থায় লালিত মানুষকে সে শক্তি দেয়, লাবণ্য দেয়, আয়ু দেয়, কাজেই ঘুমিয়ে পড়বে সবাই কবি থাকবে জাগ্রত।

সব যখন ফুরিয়ে যাবে শরতের শিউলি ফুল আনন্দে বিলিয়ে দেবে জনে জনে, কবি হবেন এমনই এক হকার যিনি ফেরি করবেন জীবনঘনিষ্ঠ অভিনিবেশ, অশ্লীল অবক্ষয়, অস্থির অভিঘাত, আয়েশি আবেগ, সাধের স্বচ্ছতা, নীরব নৈরাজ্য, দলিত দুর্গতি, পালিত প্রজ্ঞা, আততায়ীর আওয়াজ, অদৃশ্য অন্ধকার। বাড়ি ফিরে ঝরাপাতার দিনগুলোতে মনে কী পড়বে না একদা আমিও হয়েছিলাম উন্মাতাল?

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০/এমএম


Array