Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: সামনে রোজার ঈদ। সারাদিন রোজা রেখে রাতে বাসার সবাই ঘুমাচ্ছে। এত রাতে রিমুই বুঝি জেগে আছে। আর ঘুমাতেও ইচ্ছে হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর আম্মু উঠে সেহরির ব্যবস্থা করবে। এবারের রোজায় রিমু নিজেও ইফতারে কিছু না কিছু খাবার তৈরি করে।

হঠাৎ কি ভেবে বিছানা ছেড়ে উঠে কিচেনে চলে গেল। এখনই একটা কিছু ইফতারির জন্য করে রাখলে কেমন হয়। যেই ভাবা, সেই কাজ। কিমা পিঠা কেক তৈরি করে রাখবে। গতকালই টিভি বা কোনো রান্নার ম্যাগাজিন থেকে সে শিখল। ওভেন লাগে না। গ্যাসের চুলাতেই হয়ে যায়।

আধা কেজি চালের গুড়ায় ১ চা চামচ মতো লবণ দিয়ে চুলাতে ননস্টিক হাঁড়ি রেখে নেড়েচেড়ে সিদ্ধ করে নিল। ফ্রিজে আম্মু রান্নার সুবিধার জন্য কিমা করে রাখে। রিমু কিমা বের করে বাটিতে নিয়ে তাতে পেয়াজ কুচি, কাঁচামরিচ কুচি আর লবণ মেখে নিল।

চুলায় প্যান চাপিয়ে অল্প তেল দিয়ে কিমা সসে করে ভর্তার মতো করে নেয়। কিমা যেহেতু সিদ্ধ করা ছিল তাই তাড়াতাড়ি হয়ে গেল। একটা বড় ট্রে নিয়ে সিদ্ধ করা কাই দুই ভাগ করে মথে নিয়ে রাখে। এরপর একটা ভাগ হাতে চেপে লম্বা করে প্রায় এক হাত পরিমাণ তার উপর সসে করা কিমা বিছিয়ে অপর ভাগটা একই প্রসেসে কিছুটা চ্যাপটা করে হাত দিয়ে চেপে চেপে লম্বা আকৃতি দিয়ে ওই কিমার উপর বসিয়ে দিল।

তার স্পষ্ট মনে আছে, পদ্ধতিতে এবার ভাপে বসালেই কিমা পিঠা কেক তৈরি হয়ে যাবে। একটু চিন্তা করে নেয় ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে। কিচেনে বিভিন্ন রকম ননস্টিক হাঁড়ি আছে। ভাপের সুবিধা হয় এমন হাঁড়ি লাগবে। ডাইনিং রুমের পাশেই কিচেন।

আম্মু উঠে আসতে পারে। তাই দ্রুত কাজ করতে হবে। এত রাতে না ঘুমিয়ে রান্না করাটা আম্মু আব্বু কেউই পছন্দ করবে না। ভাইয়া ভাবী আর রিপাইটা এখন বাসায় এসেছে। কদিন পরই ঈদ। ওরা সারা বছর না থাকলেও দুটো ঈদই বাসায় করতে আসে। রিমু খুবই খুশি হয়। তার সঙ্গীও হয়। ভাইয়ার ছেলেটা খুব ছোট হলেও ফুপুর সাথে জমে যায়। রিপাইটা তাকে ফুপু আন্টি বলে ডাকে। সে জানে অনেক কিছু না খেতে চাইলেও ফুপু আন্টির তৈরি নাস্তাটায় ঠিকই টেস্ট পাবে। কারণ কিমা বা মাংস দিয়ে তৈরি খাবার আবার তার একটু পছন্দের।

স্টিমার বা রাইসকুকারেও করতে পারত। কিন্তু গ্যাসের চুলাটাই রিমু বেছে নিল। চট করে চুলা জ্বালিয়ে রান্নাটা করে নেয়া যায়। সে একটা মাপ মতো হাঁড়িতে পরিমাণ মতো পানি চুলায় বসাল। এবার চিড়া ভাজার যে বড় তারের ছাকনি আছে সেটা ওই গরম পানির উপর বসিয়ে দিল হাঁড়ির আন্দাজে।

পানিও এমন নিল যেন কেকটার পাড়ে ছিটা না লাগে। এবার ট্রের তৈরি মন্ডটা ওই ছাকনির উপর মেলে বসিয়ে দিল। হাঁড়ির কাচের ঢাকনা দিয়ে উপরটা ঢেকে দিল। ননস্টিক হাঁড়িতে ২০ মিনিটে এক পিঠ হয়ে গেল। এবার বড় চামচ দিয়ে ভালো করে ১০ মিনিট রাখল। একটা চিকন ছুরি দিয়ে পিঠার ভেতরে ঢুকিয়ে দেখল পুরা তৈরি, ছুরিতে একটুও কিছু আটকে নেই। কিমা কেকটা চট করে নামিয়ে সার্ভিং ডিসে ঢেলে দিল।

তাড়াতাড়ি কিচেন কেবিনেটে রেখে হাত-মুখ ধুয়ে তার রুমে চলে গেল। ভাবে আব্বু আম্মু কেউ আজ সেহরিতে ডাকতে আসবে বা ভাবীও ডাকতে পারে তখন ডাইনিং টেবিলে বসে এই চমৎকার ডিশটার গল্পটা করা যেতে পারে। ইফতারে তার তৈরি নাস্তার একটা কদর আছে বৈ কি।

সন্ধ্যায় ইফতারে সবাই তার নতুন রেসিপির খুবই প্রশংসা করল। ভাইয়া তো পারলে সবটাই খায় আর কি। ভাবী সবাইকে বড় বড় পিস করে কেটে প্লেটে প্লেটে বেড়ে দিল। আব্বু তো বলেই দিল ঈদের দিন সকালবেলা যেন এই রেসিপিটা অবশ্যই থাকে। রিপুর এইচএসসি পরীক্ষাটা পিছিয়ে গেল। তাই ওর এই রান্নার ঝোঁকটা কেউ অপছন্দ করেনি। বরং বাহবাই পায়।

দেশে যে করোনাভাইরাসের আঁচ লেগেছিল তার প্রকোপটা না থাকলেও কাজের বুয়াটা এখনও আসেনি। তাই নিজেদের কাজ নিজেরাই করে নেয়। আদরের মেয়ে সে, লেখাপড়ার বাইরে কিছু ভাবতে হতো না কিন্তু এই কদিনে সে কত কাজই না শিখে গেছে। শখের রান্নাটাও কেমন প্রয়োজনীয় হয়ে গেল তার। কয়েকটা দিন পরেই ঈদ।

রিমুর একটা বিশেষ দিনের বিশেষ ঘটনার কথা মাঝে মাঝে মনে পড়ে। সেদিন এক বিশেষ ব্যক্তির সাথে তার দেখা হয়েছিল। এত কাছ থেকে যে তার খুবই আনন্দ হয়েছিল। অনেকের সাথে তিনি শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন। লোকজন সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ওনার সাথে হ্যান্ডশেক করছিল, মৃদু কথাও হয়তো বলেছে কেউ কেউ।

রিমু সেদিন মুখে মুখে শুভেচ্ছা জানান কারণ অনেক ইচ্ছে করলেও সে তার হাত মেলাতে পারেনি। শুধুমাত্র তার হাতটা একটু কেটে গিয়েছিল। কিন্তু সে চমৎকৃত হয়েছিল যে, ওই লোকটি মুখে না বললেও চোখ-মুখের ভাবে তাকে বুঝিয়ে দেন, নিশ্চয় হাতে কোনো সমস্যা হয়েছে, এমন অবলীলায় বুঝিয়ে দিলেন যেন তিনি জানেন, না হলে তো সেও নিশ্চয় হ্যান্ডশেক করতো।

সারা বিশ্বের এই করোনাভাইরাসের ব্যাপকতা এখন বাংলাদেশে ছড়ালেও ধীরে ধীরে দেশের পরিবেশ পরিস্থিতিতে কিছু কিছু শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। কিছু অফিস মার্কেট বিভিন্ন কর্মস্থল চালু হয়েছে। কাজের বুয়ারাও কোনো কোনো বাসায় আসতে শুরু করেছে। অনলাইনে এবং টিভি চ্যানেলে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। তবে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো খুলতে পারছে না। তাই রিমুর এইচএসসি পরীক্ষাটা এখনো অনিশ্চিত হয়েই রইল।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২২ আগস্ট ২০২০/এমএম


Array