Menu

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: সুপার সাইক্লোন আম্পানের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার মধ্যেই কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি মৌসুমি বন্যার কবলে পড়েছে বাংলাদেশ। এ কারণে বাংলাদেশে মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে।

বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ইতোমধ্যে দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যাকবলিত হয়েছে। জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘ বলেছে, ১৯৮৮ সালের পর বাংলাদেশে এবারের বন্যা সবচেয়ে দীর্ঘায়িত হতে পারে।স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, বন্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি অতীতের চেয়ে এবার অনেক ভালো। তবে স্থানীয় ও জাতীয় সংকটের সমন্বয়ে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ মারাত্মক অভাবের মধ্যে পড়তে পারে।

শুক্রবার প্রকাশিত গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাসে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের ওপর দিয়ে সুপার সাইক্লোন আম্পান বয়ে যায়। এ দুর্যোগ মোকাবেলায় নেয়া প্রস্তুতির জন্য এসব দেশ জাতিসংঘের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এরপরও এ সাইক্লোনে এসব দেশে প্রায় ৫৫০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এসব দেশের প্রায় ৯৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার মধ্যেই বাংলাদেশে মৌসুমি বন্যা শুরু হয়েছে। বন্যা এ বছর দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা।

বাংলাদেশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) কোস্ট-এর নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, অতীতের চেয়ে এবারে বাংলাদেশের বন্যা মোকাবেলার প্রস্তুতি অনেক ভালো। তবে এরপরও বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ মারাত্মক অভাবের মধ্যে পড়তে পারে। এ জন্য তিনি বিদ্যমান স্থানীয় ও জাতীয় সংকটের সমন্বয়কে দায়ী করেন।

তিনি বলেন, ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত এবং কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ইতোমধ্যে মানুষের আয় কমে গেছে। এসব পাটকলের অধিকাংশই বন্যাকবলিত উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, চার মাস দেশে লকডাউন চলছে আর এর মারাত্মক প্রভাব রয়েছে। গ্রামীণ অঞ্চলের আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ আসত শহর এলাকা থেকে। আর সেই অবস্থায় হঠাৎ করেই শ্রমিক ও রিকশাওয়ালারা বাড়িতে টাকা পাঠানো বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।

তিনি বলেন, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। খাদ্য নিরাপত্তা ও জ্বালানি ক্রয়ের ওপর এর প্রভাব রয়েছে। এই জটিল পরিস্থিতি আমাদের পার করতে হবে।

কোস্ট-এর নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, মহামারী মোকাবেলা করতে গিয়ে স্থানীয় সংস্থাগুলোর তহবিলে টান পড়তে শুরু করেছে আর সে কারণে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে সেইসব কৃষককে সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে, যাদের ফসল আগস্টে ঘরে তোলার আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

জাতিসংঘ বলছে, আগাম তথ্য ও পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে তারা জীবিকার ক্ষয়ক্ষতি প্রাক্কলনের চেষ্টা করছে। যাতে সময়ের আগেই কোথায় সহায়তা দরকার, তা নির্ধারণ করা যায়। এ প্রাক্কলনের ভিত্তিতেই জাতিসংঘের রিজার্ভ তহবিল থেকে ইতোমধ্যে গত সপ্তাহে ৫২ লাখ ডলারের ত্রাণ ছাড় করা হয়েছে। নগদ অর্থ, পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সরঞ্জাম এবং পানির ক্ষয়ক্ষতি থেকে কৃষকের উপকরণ রক্ষার সরঞ্জামের আকারে এসব ত্রাণ ছাড় করা হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং জরুরি ত্রাণ সমন্বয়ক মার্ক লকক বলেছেন, দুর্যোগ আঘাত হানার পর সংস্থাটির আর বিস্মিত হওয়া চলবে না। তিনি বলেন, সংকট আঘাত হানার আগেই কিছু করা গেলে আরও বেশি জীবন রক্ষা করা যায় এবং কম অর্থের ক্ষতি হয়। এ ছাড়া এটি আমাদের সহায়তা দেয়া মানুষের বেশি কাজে আসে।

তিনি বলেন, বন্যা আঘাত হানতে যাচ্ছে তা জানতে পারলে আমরা কেন আগেই নদীতীরবর্তী জনগোষ্ঠীর প্রাণিসম্পদ ও সরঞ্জাম রক্ষার মতো অর্থপূর্ণ সহায়তা দেব না। এর বদলে কেন আমরা তাদের সবকিছু হারানোর অপেক্ষা করব, আর এরপরে চেষ্টা এবং সহায়তা দেব?

ক্যাম্পেইন গ্রুপ রিভেরিন পিপুলের প্রতিষ্ঠাতা শেখ রোকন বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জীবনের জন্য মৌসুমি বৃষ্টিপাত গুরুত্বপূর্ণ। এতে নদ-নদীর পানির লেভেল আগের অবস্থায় ফিরে আসে আর মৌসুমি জলাভূমিগুলো প্রাণ ফিরে পায়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলোর জীবন কঠিন হয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, নদীভাঙন পরিস্থিতি আরও খারাপ করে ফেলেছে। সবকিছু হারানোর পরও তারা বহুদিন ধরে লড়াই চালানোর আশা জিইয়ে রেখেছে। এ বছর ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর অববাহিকা এলাকার নদীনির্ভর জনগোষ্ঠীগুলো মারাত্মক ভাঙনের মুখে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, নদীনির্ভর একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী বেদে সম্প্রদায় নদীতে নৌকার ওপর বসবাস করে। তাদের জীবন ও জীবিকাকে কঠিন করে তুলেছে বন্যা।

শেখ রোকন বলেন, সাধারণত জনগোষ্ঠীগুলো প্রস্তুতির জন্য খুবই কম সময় পায়। সাধারণত এ প্রস্তুতির মধ্যে থাকে নিজেদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো বাঁধ দিয়ে সুরক্ষিত এলাকায় সরিয়ে নেয়া।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলে বলেছেন, পূর্বাভাসের ভিত্তিতে কাজ করার পরিকল্পনায় উন্নয়ন ঘটানো হলে পরিবারগুলো দীর্ঘমেয়াদে সহায়তা পাবে।

তিনি বলেন, বছরের পর বছর বাংলাদেশ বন্যায় বিধ্বস্ত হয়েছে। পানি শুধু মানুষের বাড়ি এবং জীবন ভাসিয়ে নিয়ে যায় না, এর সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের উন্নতি ও আশাও ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, এ ধরনের দুর্যোগ থেকে তাদের রক্ষায় এবং প্রস্তুত করতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলোর সরঞ্জাম সক্ষমতা বাড়ানো কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আমি যথেষ্ট জোর দিয়ে প্রকাশ করতে সক্ষম নই।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ২৫ জুলাই ২০২০/এমএম


Array

এই বিভাগের আরও সংবাদ