বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, সঙ্গীতের মতোই অদৃশ্য মহামারীর শিকার দেশের মঞ্চনাটক। সবর্দাই সরগরম ঢাকার নাট্যপাড়ায় এখন বইছে সুনসান নীরবতা।
করোনাকালের এ দীর্ঘসূত্রতা নিত্যদিন আলো জ্বলে ওঠা ঢাকার মঞ্চ হয়ে পড়েছে প্রাণহীন। নতুন সূর্যোদয়ের সোনালি আলোয় কি আবারও আলোকিত হবে মঞ্চাঙ্গন?
বিকালবেলায় নাটকপাড়ায় নাট্যপ্রেমীদের চায়ের আড্ডা, নাটক দেখার প্রস্তুতিপূর্বক চায়ের আড্ডার ফাঁকে টিকিট সংগ্রহ করা, দেশি এবং আন্তর্জাতিক নাটক নিয়ে নানা উৎসব আয়োজনে মুখরিত মঞ্চাঙ্গন, নাটক শুরুর আগে সারিবদ্ধ হয়ে আসন গ্রহণ করা- বিভিন্ন দলের নাট্যকর্মী এবং নাট্যপ্রেমী দর্শকের উপস্থিতিতে নিত্যদিনের এমন দৃশ্যে সরব থাকত ঢাকার মঞ্চাঙ্গন।
কিন্তু অদৃশ্য করোনার এ সময়জুড়ে পুরোই উল্টে গেছে চিরচেনা দৃশ্যগুলো। যেমন করে বিগত শতাব্দীর মহামারী বদলে দিয়েছিল পৃথিবী; ঠিক তেমনি করোনা বদলে দিয়েছে আমাদের একুশ শতকের জীবনযাপনের রীতি-সংস্কৃতি। ভবিষ্যতে করোনা প্রতিষেধক আবিষ্কারে মানুষ হয়তো ফিরবে স্বাভাবিক জীবনযাপনে; কিন্তু যে পরিবর্তন ও অভিজ্ঞতা মানুষ এ মহামারী থেকে অর্জন করবে, তা নিশ্চিত বদলে দেবে সংস্কৃতি; এমনটাই মনে করেন নাট্যজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।
মঞ্চ নাটকের এ ক্রান্তিকাল নিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনাকালে শিল্পী বা তরুণ শিল্পকর্মীরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনে নানা ধরনের কার্যক্রম সফলভাবে চালাচ্ছেন। এর ফলে শিল্প সমাজে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে এক ধরনের ঐক্য গড়ে উঠছে। কিন্তু নাটক তো অনলাইনে হওয়ার শিল্প নয়। একমাত্র মঞ্চনাটকেই তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে দর্শকের গ্রহণ ও প্রত্যাখ্যানের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। মঞ্চের নাটক এভাবেই তার স্বকীয়তা নিয়ে বেঁচে আছে।’
তবে নতুন অনলাইন নাটককে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত তিনি। এ অবস্থায় কি নাটক বন্ধ থাকবে এমন প্রশ্নোত্তরে এ নাট্যজন বলেন, ‘এ অবস্থায় মনে হচ্ছে সরকার শিগগিরই মঞ্চ খুলতে দেবে না। কিন্তু আমাদের কথাটা খোলসা করে বলা দরকার। সরকার যখন সবকিছুই খুলে দিয়েছে, তাহলে কোন যুক্তিতে মঞ্চ, মিলনায়তন, থিয়েটার ও সিনেমা হল বন্ধ রেখেছে?
স্বাস্থ্যবিধি আরোপ করে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মঞ্চ খুলে দেয়া হোক। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ৫০০ আসনের মিলনায়তনে ১০০ দর্শক বসুক। সে ক্ষেত্রে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বা শিল্পকলা একাডেমি, জেলা প্রশাসন নাট্যদলগুলোকে আর্থিক প্রণোদনা দেবে। তাতে টিকিটের মূল্য বাড়িয়ে দর্শকের ওপর চাপ বাড়াতে হবে না।
আর যদি মিলনায়তন না পাওয়া যায়, তবে ঢাকাসহ সারা দেশে শহীদ মিনার, খোলা জায়গায় অস্থায়ী খোলা মঞ্চ করে অথবা মাটিতে অভিনয় স্থান নির্দিষ্ট করে নাটক মঞ্চায়ন করা যেতে পারে। শহীদ মিনারসংলগ্ন মাঠ বা স্কুলের মাঠ বাঁশ দিয়ে ঘেরাও করে মাঝে মঞ্চ করে অথবা অভিনয়স্থল নির্দিষ্ট করে স্বল্পমূল্যে টিকিট বিক্রি করে দর্শকের সমাগম করা সম্ভব।’
করোনাকালে নাটক মঞ্চায়নের বিষয়ে নাট্যজন রামেন্দু মজুমদারের রয়েছে ভিন্ন মত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না এ বছর আমরা মঞ্চে ফিরতে পারব। কারণ, দর্শককে সঙ্গে নিয়েই আমাদের মঞ্চনাটকের চর্চা। বর্তমান এ মহামারী শেষ না হলে তো আর দর্শক নাটক দেখতে আসবে না। আর এ অবস্থায় আমরাও দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে দর্শককে আহ্বান জানাতে পারি না। এ মহামারী শেষে নতুন পৃথিবীতে আবারও মঞ্চাঙ্গনে সেই পুরনো জৌলুস ফিরে আসবে।’ করোনাকালের এ সংকট ভবিষ্যতে দর্শক খরার আশঙ্কা নেই বলে তিনি মনে করেন।
তার কথার সঙ্গেও সহমত পাওয়া যায় নাট্যজন আতাউর রহমানের। করোনাকালের মঞ্চাঙ্গন এবং তার পরবর্তী অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন নাটক না হলেও নিয়মিত অনলাইনের মাধ্যমে নাটক নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্বে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে থিয়েটার হল খুলে দিলেও আমাদের দেশে সেটি সম্ভব নয়। কারণ আমাদের দর্শক সামাজিক দূরত্ব ঠিকভাবে বজায় রাখতে পারবেন না। তা ছাড়া অভিনেতাও ঠিকভাবে অভিনয় করতে পারবে না।
কারণ তাদের মধ্য সংক্রমণের একটা ভয় কাজ করবে। প্রতিষেধক বের না হলেও একটা সময় করোনা দুর্বল হতে বাধ্য। তবে আমাদের সেই দিনটি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’ করোনা মঞ্চনাটকের ওপর কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন না তিনি। কারণ মঞ্চের সব মানুষই প্রায় অন্য কোনো না কোনো পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। করোনা শেষে আমরা মঞ্চনাটকে নতুন নতুন অনেক বিষয়বস্তুর পাশাপাশি নতুন এক পৃথিবী পাব বলে বিশ্বাস করেন এ নাট্যব্যক্তিত্ব।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ২৩ জুলাই ২০২০/এমএম





