Menu

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: আসলাম বিস্মিত চোখে নিপার দিকে তাকায়। নিপা বলে- এত তাজ্জব না হলেও চলবে। কারণ, আমি প্রকাশকদের মুখ বন্ধ করার জন্য স্কচটেপ ইউজ করব না। সুপারগ্লুও না। আমি কাউকে দিয়ে তোমার প্রতিটি বইয়ের দুইশ কপি করে কিনে নেব। তোমার প্রকাশকরা জানবে কোনো এনজিও বা লাইব্রেরি কিনেছে। তারা বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে, সাধারণ পাঠকের কাছে তোমার বইয়ের চাহিদা না থাকলেও বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে আছে।

আসলাম বলে- তুমি শুধু শুধু পাগলামি করছো। ওয়াইফ কিনবে হাজব্যান্ডের বই, এটা কোনো সুস্থ মাথার চিন্তা না। শোনো, চৌদ্দ বছর ধরে আমার বই বেরুচ্ছে। কিন্তু এখনো কোনো বই বিশ-ত্রিশ কপির বেশি বিক্রি হয় না। প্রকাশক লোকজনের সামনে আমাকে বলেছে লেখালেখি ছেড়ে দিতে। এরপর লেখালেখি চালিয়ে যাওয়া মানে বেহায়াপনা করা। অতএব দুইশ কপি করে বই কেনার যে ফালতু চিন্তা করেছো, এটা বাদ দাও। আর আমার সিদ্ধান্তে আমাকে অটল থাকতে দাও।

আসলাম বসা থেকে উঠে চলে যেতে চায়। নিপা তার হাত ধরে টেনে আগের জায়গায় বসিয়ে বলে- তোমার সিদ্ধান্তে তুমি অটল থাকো। আমার সিদ্ধান্তেও আমি অটল। বই আমি কিনবো বলেছি, কিনবোই। তারপর বইগুলো আশপাশে যত লাইব্রেরি আছে, দিয়ে রাখবো। তুমি শুধু আমাকে বিশ্বস্ত দেখে একটা ছেলে ঠিক করে দিও। যে প্রকাশকদের কাছ থেকে বই কিনে আনবে এবং লাইব্রেরিগুলোতে দেবে।

আসলাম ব্যঙ্গাত্মক হাসি হাসলে নিপা বলে- তোমার প্রকাশকরা যে মুখটা প্যাঁচার মুখের মতো করে বলে তোমার বই চলে না, তারা কি কখনো চালানোর চেষ্টা করেছে? ভালো করে ডিসপ্লে করে তোমার বই? আমি যতদিন মেলায় গেছি, একদিনও দেখলাম না সামনের সারিতে বই রাখতে। লাইব্রেরিওয়ালাদের বেশি করে কমিশন দিয়ে বলা হবে ভালো করে যাতে ডিসপ্লে করে।

তিন মাস পর। আসলাম শুক্কুর আলীকে নিয়ে বাসায় ঢোকে সব পাণ্ডুলিপি কেজি দরে বিক্রি করে দেয়ার জন্য। নিপা বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকলে সে বলে- আগেই বলেছিলাম, বই না চললে লেখালেখি ছেড়ে দেবো। আমি লাইব্রেরিগুলোতে খোঁজ নিয়েছি। এখন পর্যন্ত এক কপি বইও বিক্রি হয়নি। যে ছেলেটাকে দিয়ে তুমি লাইব্রেরিগুলোতে বই দিয়েছ, সে আজ বলেছে লাইব্রেরিওয়ালারা নাকি তাগাদা দিচ্ছে বই ফেরত আনার জন্য। অচল জিনিস তারা দোকানে রাখতে চায় না।

নিপা হাত জোড় করে অনুরোধ করে বলে আর একটা মাস দেখার জন্য। আসলাম অনুরোধ উড়িয়ে দিতে চাইলে সে তার মুখ চেপে ধরে। এক সপ্তাহ পর। কাজের মেয়েটা কাজ করতে এলে নিপা তাকে মিষ্টি খেতে দেয়। মেয়েটা আস্ত একটা মিষ্টি মুখে দিয়ে চিবুতে চিবুতে জিজ্ঞেস করে কিসের মিষ্টি। নিপা বলে- আজকে লাইব্রেরিওয়ালা তোর ভাইকে জানিয়েছে তার নাকি বেশ কটা বই বিক্রি হয়েছে। তোর ভাই এত খুশি হয়েছে, পকেটে যা টাকা ছিল, সবগুলো দিয়ে মিষ্টি কিনে নিয়ে চলে এসেছে।

এক মাস পর। লাইব্রেরি-মালিক আবু বকরের আমন্ত্রণে লাইব্রেরিতে এসেছে আসলাম। তাকে বাহারি নাশতা খাওয়ানোর পর আবু বকর বলেন- কী বলবো, এখনো যে মানুষ এত আউট বই পড়ে, আমার বিশ্বাসই ছিল না। আরেকটা ব্যাপার। আমি মানুষটা ছোট হতে পারি। কিন্তু জীবনে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আমার অভিজ্ঞতা বলে, যেসব লেখকের মেয়েভক্ত বেশি, তারা লাকিম্যান। আপনার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। আপনি লাকিম্যান। আপনার বই একটাও কোনো ছেলে কিনেনি। সব মেয়েরা। আপনি কিন্তু কপাল নিয়ে জন্মেছেন ভাই।

মেয়েভক্ত সৃষ্টির এই খবরটা নিপাকে কীভাবে দেবে, তা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বিস্তর গবেষণা করে আসলাম। শেষে ঠিক করে, ঘরে ঢুকে তাকে জড়িয়ে ধরে কোনো প্রকার ভণিতা ছাড়াই আবু বকরের বলা সবগুলো কথা বলে দেবে এক নিঃশ্বাসে। কিন্তু ঘরে ঢুকে হতাশ হয়ে যায় আসলাম। কারণ, নিপার গায়ে হাত পুড়ে যাওয়ার মতো জ্বর। তাই তার আর বলা হয় না কিছুই। পরদিন অফিসে বসে আসলাম রিসিভার ওঠায় নিপাকে খবরটা দেয়ার জন্য। কিন্তু নাম্বার ডায়াল করতে গিয়ে তার হাত আটকে যায়। সে ভাবে, মেয়েভক্ত তৈরির ব্যাপারটা যদি নিপা স্বাভাবিকভাবে না নেয়! যদি সে তাকে সন্দেহ করে! যদি সংসারে আগুন লাগে!

চার-পাঁচ দিন পর আবার ফোন আসে আবু বকরের নাম্বার থেকে। সে জানায়, আবারো বই প্রায় শেষ। আরো জানায়, একটা ‘ক্রেজি’ মেয়েভক্তের সন্ধান পাওয়া গেছে। মেয়েটা নিজে পড়ার জন্য তো আসলামের সব বই এক কপি করে কিনছেই, গিফট দেয়ার জন্যও নাকি প্রায়ই একটা দুটো করে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আর জিজ্ঞেস করছে তার নতুন বই কবে আসবে। আগামী মেলার আগেই আসার সম্ভাবনা আছে কিনা। একটু থেমে আবু বকর বলে- আপনার সাথে দেখা করার ইচ্ছে আছে মেয়েটার। কিন্তু প্রকাশ করে না। নারী তো! নারী জাতির বুক ফাটবে, মুখ ফুটবে না।

ফোন রাখার আগে আবু বকর বোমফাটানো একটা কথা বলে- মেয়েটা কিন্তু হেভি সুন্দরী। কথাটা আসলামের মাথায় এমনভাবে গেঁথে যায়, সে কথা দিয়ে ফেলে শিগগিরই মেয়েটার সঙ্গে দেখা করবে। অফিস ছুটি হয়। আসলাম বাড়ি ফেরে। কিন্তু আজ সে অন্যদিনের মতো স্বাভাবিক হতে পারে না নিপার সঙ্গে। আবেগ, উত্তেজনা আর আনন্দের সংমিশ্রণ তার মধ্যে অদ্ভুত একটা ছটফটানি সৃষ্টি করে। রাতেও ঘুম আসে না আসলামের। নিপা বারবার জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে। সে ‘কিছু না’ বলে ঘুমের ভান করে।
পরদিন অফিস থেকে ফেরার সময় লাইব্রেরিতে ঢু মারতে চলে যায় আসলাম। আবু বকর বলে- একটু আগে আসলে কিন্তু কাজ হয়ে যেত। মেয়েটা এসেছিল। আপনার বিষয়ে কথা হলো। কিন্তু ভাই, এভাবে হবে না। আপনি আসবেন একসময়, সে আসবে আরেক সময়- এভাবে হয় না। আমি তাকে বলে দিই যে আপনি তার সাথে দেখা করতে চান। সে যাতে নির্দিষ্ট একটা টাইমে আসে। কখন আসতে বলবো? আসলাম ইতস্তত করে। তারপর একটা তারিখ এবং সময় দেয়।

আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মেয়েটার সঙ্গে রেস্টুরেন্টে দেখা হবে আসলামের। আবু বকর বলেছে মেয়েটাকে যখন সে বলল লেখক আপনার সাথে দেখা করতে ইচ্ছুক, তখন নাকি আবেগে কিছুক্ষণ কথাই বলতে পারেনি। তারপর কোনোরকমে হ্যাঁবোধক মাথা নেড়ে লাইব্রেরি ছেড়েছে। গতরাতও ছটফটানির মধ্য দিয়েই কাটিয়েছে আসলাম। নিপা কম করে হলেও বিশবার জিজ্ঞেস করেছে- কী হয়েছে। আসলাম মুখ খোলেনি।

সাড়ে সাতটা বেজে গেছে আরো দশ মিনিট আগেই। আসলাম মাধুরী রেস্টুরেন্টের এসিতে বসে বসে ঘামছে। মেয়েটার দেখা নেই। নয়টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে সে লাইব্রেরিতে চলে যায়। আবু বকর বলে- এইটা ভাবা যায় না। এইরকম নিষ্পাপ চেহারার একটা মেয়ে এইভাবে ওয়াদার খেলাপ করতে পারে না। ও, আপনি তো মেয়েটার চেহারাই দেখেননি। এই কাশেম, যে মেয়েটা স্যারের কড়া ভক্ত, সিসি টিভিতে তার ফুটেজ আছে না? একটু দেখা তো।

সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজে মেয়েটার চেহারা দেখে আসলাম যেন বজ পাতের শিকার হয়। সে এক দৌড়ে দোকান থেকে বের হয়ে ছুটে যায় বাসার দিকে। তারপর গেটের ভেতর পা রাখতেই এগিয়ে আসে দারোয়ান। পকেট থেকে চাবির গোছা বের করে আসলামের সামনে ধরে বলে- ম্যাডাম দিয়া গেছে স্যার। উনি বাপের বাড়ি চইলা গেছে। আর বইলা গেছে আপনে যাতে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা না করেন।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ২১ জুন ২০২০ /এমএম


Array