বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: কলকাতায় শুটিংয়ের ফাঁকে অর্ণব ও মিথিলা।কলকাতায় শুটিংয়ের ফাঁকে অর্ণব ও মিথিলা।সংগীতশিল্পী শায়ান চৌধুরী অর্ণব ও অভিনেত্রী রাফিয়াথ রশীদ মিথিলা সম্পর্কে ফুফাতো-মামাতো ভাইবোন। তাঁরা একসঙ্গে একটি নতুন গান নিয়ে কাজ করলেন সম্প্রতি। গানের নাম ‘কী হলে কী হতো’। এই গান নিয়ে ভাই—বোনের সে কত গল্প! সেই গল্প নিয়েই এই প্রতিবেদন।
ব্যাটে-বলে মিলছিল না—এ কথা প্রায় সময়ই অভিনয় বা গানের শিল্পী, নির্মাতা, প্রযোজক, সুরকারদের মুখে শোনা যায়। কথাটা একদম হাড়ে হাড়ে মিলে গেল অর্ণব আর মিথিলার সঙ্গে আমাদের সাক্ষাতের বেলায়। দুই ভাইবোনের সঙ্গে আমাদের ব্যাটে-বলে মিলছিলই না। যখন মিথিলার সঙ্গে দেখা হয়, তখন অর্ণব থাকেন ভারতে, শান্তিনিকেতনে। আবার যখন অর্ণবকে বাগে পাই, তখন মিথিলা উড়াল দেন তাঁর পেশাগত কারণে উগান্ডায়। আবার মিথিলার সময় হলে অর্ণব হারিয়ে যান! তাই আমরা ছোটাছুটি থামিয়ে একেক করে আলাদাভাবেই কথা বলি অর্ণব-মিথিলার সঙ্গে। তাঁরা আমাদের জানান তাঁদের নতুন গানের কথা।
‘কী হলে কী হতো’ গানের পেছনের গল্প আমাদের শোনান রাফিয়াত রশীদ মিথিলা। শুরুতেই বলে রাখি, গল্পের সবচেয়ে বেশি অংশই শুনেছি মিথিলার মুখ থেকে। অর্ণবকে নাগালে পাওয়া গেল আলাপের একেবারে শেষ বেলায়। মিথিলা পুরো আড্ডা জমিয়ে আমাদের বলেছেন ‘কী হলে কী হতো’র গল্প। শুরুতেই মিথিলা চলে যান গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। সেই সময় প্রথমবারের মতো টিভি পর্দায় উপস্থাপক হিসেবে অভিষেক হয় মিথিলার, ‘আমার আমি’ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। সেই অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের অতিথি ছিলেন ফুফাতো ভাই অর্ণব। ওই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনেকেই প্রথম জানতে পারেন, কীভাবে আত্মীয়তার সুতোয় বাঁধা এই দুই শিল্পী। অনুষ্ঠানের ওই পর্ব নিয়ে অনেক আলোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেই আলোচনাই মিথিলাকে উসকে দেয় একটা নতুন গান দিয়ে অর্ণবকে আবার নিয়মিত গানের জগতে ফিরিয়ে আনতে। যেই কথা সেই কাজ। মিথিলা একটা গানের কথা বললেন অর্ণবকে। অর্ণবও রাজি হয়ে গেলেন। তৈরি হয়ে গেল ‘কী হলে কী হতো’।
গানের পেছনে যাঁরা
গানটি লিখেছেন প্রদ্যোত চ্যাটার্জি। সুরও তাঁর। অর্ণব এতে কণ্ঠ দিয়েছেন। অর্ণব আমাদের কথায় কথায় বললেন, এই গান তাঁর ঝুলিতে প্রায় বছরখানেক পড়ে ছিল। তিনি বললেন, ‘এমন আরও কত গান তৈরি হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু কীভাবে, কী করে এগুলো সামনে আনব সেটা এখনো বুঝে ওঠা যাচ্ছে না।’ অর্ণবের গাওয়া নতুন এই গানের ভিডিও বানিয়েছে ভারতের কলকাতার ম্যাচকাট প্রোডাকশন। ভিডিওটি প্রযোজনা করেছে বাংলাদেশের মোশন রক এন্টারটেইনমেন্ট। গানের ভিডিওর প্রজেক্ট সুপারভিশনের দায়িত্বে ছিলেন ম্যাচকাট প্রোডাকশনের প্রধান জনপ্রিয় নির্মাতা সৃজিত মুখার্জি। মিথিলা জানান, গানটি ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পাবে। এই গানে মিথিলা মডেল হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর বিপরীতে দেখা যাবে তিনজনকে। তাঁদের মধ্যে অনিন্দ্য চ্যাটার্জি ও ইন্দ্রশীষ রায় কলকাতার টেলিভিশন জগতের পরিচিত মুখ। আর তৃতীয় নামটি বেশ চমকপ্রদ। যাঁরাই এ পর্যন্ত গানটি দেখেছেন, চমকে গেছেন। গানের তৃতীয় পুরুষ চরিত্রটি হলেন খোদ নির্মাতা সৃজিত। শিল্পী অর্ণবকেও কয়েক ঝলক দেখা গেছে ভিডিওতে। মিথিলা বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে যেভাবে ভিডিওর কাজ গুছিয়ে করা হয়েছে, এ জন্য মোশন রক এন্টারটেইনমেন্ট, ম্যাচকাট প্রোডাকশন ও ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’ একইভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন অর্ণব। জানিয়েছেন পুরো বিষয়টি মনের মতো করে তুলে আনার এবং ভালো লাগার কথা।
‘প্রথম’ হলেও প্রথম নয়
মিথিলা কথায় কথায় আমাদের একটা মজার তথ্য দিলেন। শুরু থেকে বলছিলেন, এটা হতে যাচ্ছে মিথিলা-অর্ণবের প্রথম মিউজিক ভিডিও। কিন্তু আদতে এটা এ দুজনের দ্বিতীয় কাজ। এর আগে অর্ণব-মিথিলা একটা জনপ্রিয় গানের ভিডিওতে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন। হাবিব ওয়াহিদের সংগীতায়োজনে জুলির গাওয়া ‘ময়না গো’ গানের সেই ভিডিওতে মডেল হয়েছিলেন মিথিলা। আর অর্ণব ক্যামেরার পেছনে নির্মাতার দলের একজন ছিলেন। তাই একসঙ্গে পূর্ণাঙ্গ গানের ভিডিও হিসেবে এবারেরটা প্রথম হলেও, আদতে এটা দ্বিতীয়।
বাংলাভিশনের আমার আমি অনুষ্ঠানের শুটিংয়ের ফাঁকে অর্ণব ও মিথিলাবাংলাভিশনের আমার আমি অনুষ্ঠানের শুটিংয়ের ফাঁকে অর্ণব ও মিথিলাব্যাটে-বলে মিলল…
গানটা বছরখানেক অর্ণবের কাছে তৈরি হয়ে পড়ে ছিল। গত সেপ্টেম্বরের পরপর মিথিলার অনুরোধে নিজের ঝুলি থেকে গানটি বের করে আনেন অর্ণব। তবে ব্যস্ততার কারণে মিথিলা বা অর্ণব কেউই এর ভিডিও নিয়ে খুব একটা এগোতে পারছিলেন না। দুজনের সময়ই মিলছিল না। অবশেষে চলতি মাসের শুরুর দিকে মিথিলা জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো কলকাতা যান। এর আগে প্রথমবার গিয়েছিলেন একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির শুটিংয়ে। এবার সেখানে গেলেন ‘কী হলে কী হতো’ নিয়ে। গিয়েই কাজ করলেন ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী নির্মাতা সৃজিতের সঙ্গে কাজ করার। অবশ্য এই কাজের জের ধরে বেশ গুঞ্জনের মুখেও পড়তে হয়েছে মিথিলাকে। সৃজিতের সঙ্গে তাঁর প্রেম চলছে, এমন গুজব হয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর শিরোনাম। এ কারণে হালকা বিড়ম্বনাও হয়েছে। তবে সবকিছু ভালো ফল বয়ে আনবে, যদি ‘কী হলে কী হতো’ কাঙ্ক্ষিত সাড়া পায়।
…আর অর্ণব
সংগীতশিল্পী অর্ণব এত সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব কষেন না। এখন গান আর ছবি আঁকায় বুঁদ আছেন। তা নিয়েই থাকতে চান আপাতত। ঢাকায় স্টুডিওতে বসে যান্ত্রিক গান থেকে বেরিয়ে শান্তিনিকেতনে মানুষের মধ্যে গানের চর্চায় ব্যস্ত তিনি। অর্ণব বলেন, ‘গত ১০ বছরে কাজে কোনো গ্রোথ আসছিল না। স্টুডিওতে মেশিনের সামনে বসে বসে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর থেকে যেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছিলাম। তাই সব চাপ ছেড়ে ছুড়ে আবার পুরোনো নিয়মে আড্ডা আর মানুষের মধ্যে থেকে গান করার চর্চা শুরু করার চিন্তা করি। সেই থেকেই ২ মাস আগে শান্তিনিকেতনে যাই।’ অর্ণব জানান, তাঁর তৈরি গানের ৭০ ভাগই তিনি করেছিলেন শান্তিনিকেতনে বসে, যেখানে পড়াশোনা করেছেন তিনি। আড্ডা আর গান করার পাশাপাশি ছবি আঁকা নিয়েও তাঁর দিন কাটছে বেশ। ১৩ এপ্রিল ঢাকায় ফিরেছেন। এসেছেন গান শোনাতে। দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গান নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন। আগামী ৩ মে পর্যন্ত এভাবেই গান শুনিয়ে যাবেন।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ১৮ এপ্রিল ২০১৯/এমএম