বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: আবহাওয়া অফিসের পূর্ব ঘোষণা ছিল- ২৪, ২৫ ও ২৬ তারিখ বৃষ্টি হতে পারে। সে অনুযায়ী মেলার তথ্যকেন্দ্র থেকে সোমবারই প্রকাশকদের আগাম সতর্ক করা হয়।অনেক প্রকাশকই বই যেন বৃষ্টিতে না ভেজে সে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। মঙ্গলবার ঠিকই বৃষ্টি হয়েছে। তবে মুষলধারে নামেনি; হয়েছে টিপটিপ। যা মেলার নিরবচ্ছিন্নতায় বাগড়া দিয়েছে। এমন বৃষ্টি ঘণ্টা দুয়েক স্থায়ী হলেও পাঠকদের থামাতে পারেনি। মেলায় প্রচুর লোকের সমাগম হয়েছে। শুধু তাই নয় বিক্রিও ছিল বেশ। ছোট বড় সব স্টল ও প্যাভিলিয়নই ছিল জমজমাট।
মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে প্রবেশ করে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ স্টল ও প্যাভিলিয়ন প্ল্যাস্টিকের ত্রিপল দিয়ে ঢাকা।ক্রেতারা এলেও সে সময় বই কিনতে পারেননি। এমন অবস্থা চলে প্রায় এক ঘণ্টা। তারপর বৃষ্টি কিছুটা কমে এলে সবাই পসরা সাজাতে শুরু করেন। এর কিছুক্ষণ পর আবার গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হলেও তা থামাতে পারেনি পাঠক-ক্রেতাদের। এর মধ্যেই চলেছে বইয়ের বিক্রি। সন্ধ্যা নাগাদ বৃষ্টি পুরোপুরি থেমে গেলে বইয়ের বিক্রি আরও বেড়েছে।
মেলাতে এখন যারা আসছেন তারা বেশির ভাগই বইয়ের ক্রেতা। মেলার শুরু থেকেই এবার বিক্রি কম এমনটা শোনা গেলেও এই সময়ে এসে প্রকাশকদের মুখে হাসি ফুটতে শুরু করেছে।অন্বেষার প্রকাশক শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রতি বছরই মেলায় বৃষ্টি হয়। এ জন্য আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। এবারও তাই। বৃষ্টির মধ্যেই প্রচুর পাঠকের সমাগম দেখা যাচ্ছে। বইয়ের বিক্রিও ভালো। আশা করি আসছে দিনগুলোতে বিক্রি আরও বাড়বে।
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই মঙ্গলবার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী। মেলায় এদিন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ লেখক-প্রকাশকদের নিয়ে কণ্ঠশিল্পী ফকির আলমগীরসহ আরও কয়েকজনের বেশ কয়েকটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
মূলমঞ্চের আয়োজন : বিকালে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সমীর কুমার বিশ্বাস রচিত ‘বঙ্গবন্ধুর সমবায়-ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ পাঠ করেন সেলিম জাহান। আলোচনায় অংশ নেন রাজু আলাউদ্দিন, তপন বাগচী এবং এএফএম হায়াতুল্লাহ। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী।
আলোচকরা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেবল একজন সফল রাজনৈতিক নেতাই ছিলেন না, রাষ্ট্রের গঠন ও উন্নয়নমূলক পরিকল্পনায় তার গভীর প্রজ্ঞার পরিচয় আমরা পাই সমবায়-ভাবনার মধ্যে। তার সমবায় প্রকল্পের মূল ছিল কৃষি, গ্রাম এবং জনগণ। এ প্রকল্পের প্রায়োগিক দিকগুলোও ছিল অত্যন্ত নিখুঁত, সুচিন্তিত এবং সময়োপযোগী। গণমুখী ও উৎপাদনমুখী রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুর সমবায়-ভাবনা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
সভাপতির বক্তব্যে আবুল আহসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পান। আর এ অল্প সময়েই তিনি দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতিসহ সব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন।রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে সমবায়কে তিনি তত্ত্বের পর্যায়েই সীমাবদ্ধ রাখেননি, প্রায়োগিক দিক দিয়েও একে সফল করে তোলার পরিকল্পনা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর কৃষি ও সমবায় ভাবনাবিষয়ক এ গ্রন্থ মহান রাষ্ট্রনায়কের রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে আমাদের জানার পরিধি বাড়িয়ে দেবে।
কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি সিদ্ধার্থ হক, মিলু শামস, আফরোজা সোমা, মন্দিরা এষ এবং গিরীশ গৈরিক। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল মীর জাহিদুল হাসানের পরিচালনায় এবং মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের পরিবেশনায় নাটক ‘মহাপ্রয়াণের শোক আখ্যান’।নতুন বই : বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্য অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার বইমেলায় নতুন বই এসেছে ৯১টি। এর মধ্যে কবিতাচর্চা এনেছে হাবীবুল্লাহ সিরাজী ‘মধুময় দুপুর মেখেছি’, দোয়েল প্রকাশনী এনেছে স্বপন কুমার সাহার কবিতাগ্রন্থ ‘মানবতার পঙ্ক্তিমালা’, দেশ পাবলিকেশন্স এনেছে সীরাজুম মুনিরের ‘নিষিক্ত’, ঐতিহ্য এনেছে আফজাল হোসেনের ‘ঈশ্বরের ঐশ্বর্য দাপট’, মিজান পাবলিশার্স এনেছে আনিসুল হকের ‘সে’, শিশুগ্রন্থকুটি এনেছে জ্যোতির্ময় সেনের ছড়ার বই ‘ভূত নিয়ে খুঁত খুঁত’ প্রভৃতি।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ /এমএম





