Menu

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: অন্তুর মন আজ অনেক ভালো। বাবা এসে জিজ্ঞেস করলেন, অন্তু, আজ স্কুলে যাবে না?
অন্তু চুপ করে থাকল। তারপর বাবা আবার বললেন, কোনো সমস্যা? সে জবাব দেয়, উহু।
বাবা এবার হেসে বললেন, ঠিক আছে, আমি অফিসে যাচ্ছি।
অন্তুর মা অন্তুকে সকালের নাশতা করিয়ে স্কুলে পাঠালেন। ওর ছোট্টবোন বিন্তি। বিন্তির বয়স চার বছর। অন্তুর সঙ্গে খুব ভাব। দুজন মিলে নানা রকম গল্প করে। অন্তু ক্লাস এইটে পড়ে। সামনে পরীক্ষা।
স্কুল থেকে ফিরে অন্তু আজ আর মাঠে খেলতে গেল না। সারাদিন বসে হ্যারিপটার পড়ল। আজ টিভি দেখতে ইচ্ছে করল না। সন্ধ্যায় অন্তুর বাবা একটা খেলনা কিনে আনলেন। অন্তু এটা দেখে মন খারাপ করে ফেলল। অন্তু মনে মনে ভাবল, সে বাচ্চা ছেলে নাকি!
বিন্তিকে অন্তু খেলনাটি দিয়ে বলল, আজ থেকে খেলনাটি তোর।
বিন্তি মাথা নেড়ে বলল, হুঁ।
অন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করল অন্তু যা বলছে, খেলনাটি নকল করে তাই বলছে। খেলানাটির এমন অদ্ভুত আচরণে অন্তু ভয় না পেয়ে বিন্তিকে বলল, আজকের মতো খেলনাটি আমার ঘরে থাকবে। কাল থেকে তোর।
বিন্তি কিছু না বলে ওর পড়ার ঘরে চলে গেল।
অন্তু রাতে খেয়ে, খেলনাটির সঙ্গে কথা বলল কিছুক্ষণ। তারপর দশটার দিকে ঘুমোতে গেল।
গভীর রাতে অন্তুর রুমের দরজায় কে যেন টোকা দিল। অন্তু ধীরপায়ে দরজা খুলে দিল। তারপর সে যা দেখল তা ভীষণ অবাক হওয়ার ব্যাপার! অন্তু দেখল সে বিশাল এক ফাঁকা জায়গায় এসে পড়েছে। যেখানে মানুষের কোনো বসবাস নেই। অন্তু ভাবল এটা হয়তো কোনো মরুভূমি হবে অথবা কোনো গ্রহ এরকম কিছু হবে। ডিসকভারি চ্যানেলে অন্তু এসব অনেক দেখেছে। কিন্তু সে বাস্তবে এসব দেখতে পাবে সে কখনো ভাবতেই পারেনি।
এমন সময় অন্তুর সমবয়সী অনেক ছেলেমেয়েকে দেখতে পায় অন্তু। ওরা অন্তুর সঙ্গে ভাব জমিয়ে ফেলে কিছুক্ষণের মধ্যেই। সবাই হ্যান্ডশেক করে।
অন্তু প্রথমে প্রশ্ন করল, এটা কোন জায়গা?
একজন ছেলে এসে বলল, এটা মঙ্গলগ্রহ।
অন্তু বলল, কিন্তু আমি তো পৃথিবীতে ছিলাম। কীভাবে এখানে এলাম বুঝতে পারছি নাতো! তোমরাই বা কারা?
আরেকজন ছেলে এসে বলল, আমরা এলিয়েন। আমরা তোমার বন্ধু হতে চাই। শুনেছি পৃথিবীর মানুষ অনেক বুদ্ধিমান। তাই তোমাদের সঙ্গে মিশে আমরাও বুদ্ধিমান হতে চাই।
অন্তু বলল, ও আচ্ছা। ঠিক আছে।
অন্তু কয়েজন নাম মুখস্থ করে নিল সিকিহো, রিপিহো আর তাকিহো।
সিকিহো অনেক আন্তরিক। অন্তুর বলা ভাষাটা খুব সহজে আয়ত্ত করে ফেলল।
অন্তু বলল, তোমরা বাংলা বুঝতে পারো কীভাবে?
সিকিহো বলল, আমাদের ব্রেনে একটা যন্ত্র আছে যেটা সাবটাইটেলের কাজ করে। মানে তোমার মাতৃভাষা আমার মাতৃভাষায় অনুবাদ হয়ে যায়।
অন্তু অবাক হয়ে বলল, তাই! তাহলে তো পৃথিবীতে তোমাদের অনেক বন্ধু।
রিপিহো বলল, হ্যাঁ, তবে আমরা আরো বন্ধু বাড়াতে চাই।
এতক্ষণ চুপ করে ছিল তাকিহো।
সে বলল, তোরা কি শুধু কথাই বলবি? নাকি অন্তুকে আমাদের মঙ্গলগ্রহ ঘুরে দেখাবি!
অন্তু আর এলিয়েনরা এক অবাক করা গাড়িতে চেপে বসল। যা ঘণ্টায় হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে। একটা বিশেষ জায়গায় এসে গাড়িটি থামল।
সিকিহো বলল, এই জায়গাটা মঙ্গলগ্রহের সবচেয়ে সুন্দর আর গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মঙ্গলগ্রহের সবচেয়ে বুদ্ধিমানদের এনে রাখা হয়। যারা মঙ্গলগ্রহের কল্যাণের জন্য কাজ করে।
অন্তু বলল, ও আচ্ছা।
মিকিহো বলল, কয়েক লক্ষ বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষ এলিয়েনদের সঙ্গে মানুষের সুসম্পর্ক ছিল। তারা পৃথিবী আর মঙ্গলগ্রহের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন। কিন্তু একসময় মানুষ আর এলিয়েনদের মাঝে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এতে মানুষ আর এলিয়েন আলাদা হয়ে যায়। সে দ্বন্দ্ব আর কোনোদিন ঘোচেনি।
অন্তু বলল, আমি পৃথিবীর মানুষের পক্ষ থেকে স্যরি বলছি।
রিপিহো বলল, আমরাও স্যরি বলছি মঙ্গলগ্রহের এলিয়েনদের পক্ষ থেকে। আমরা চাই মানুষ আর এলিয়েনে আবার বন্ধুত্ব গড়ে উঠুক।
ওরা কথা বলতে বলতে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াল। মঙ্গলগ্রহের মিউজিয়াম, এলিয়েনদের রাজপ্রাসাদ এসবের কোনোটা বাদ যায়নি।
অন্তুকে রিপিহো বলল, আমাদের এখানে থেকে যাও। আমরা তোমরা ভালো বন্ধু হব।
অন্তু বলল, থাকব না। আরেকদিন এসে আরো ঘুরব তোমাদের সঙ্গে। আজকে চলে যাচ্ছি।
সিকিহো বলল, ঠিক আছে বন্ধু, বিদায়।
বিন্তি অন্তুকে ডাকছে, ভাইয়া সকাল হয়ে গেছে। ওঠো।
অন্তু এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল।
সে স্বপ্নে মঙ্গলগ্রহ ভ্রমণ করে আপন মনেই হেসে ফেলল।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ১৮ নভেম্বর ২০১৯ /এমএম


Array