Menu

গ্রন্থমেলায় শেষ সময়ে বাড়ছে লেখক ও পাঠকদের আড্ডা

আর মাত্র কয়েকদিন আছে একুশে গ্রন্থমেলার। এরপর পর্দা নামবে। তবে এবারের গ্রন্থমেলা বেশ জমজমাট। পাঠক ও মানসম্মত বই বেড়েছে। বেচাকেনাও বেশ। গ্রন্থমেলা নিয়ে কথা বলেছেন গ্রাফোসম্যান পাবলিকেশনের প্রকাশক আব্দুর রউফ।

প্রতিবারের মতো এবারো গ্রন্থমেলার জায়গা বেশ প্রশস্ত। পাঠকদের জন্য ব্যাপারটি খুব ভালো হয়েছে। আর মেলায় বেড়েছে পাঠক এবং মানসম্মাত বই। ইন্টারনেটের যুগে এখনো অনেকের বইপড়া অভ্যাস আছে সেটি ভাবতেই ভালো লাগে। আর বইপড়া, বইকেনা সবই সৃজনশীলতা।

গ্রাফোসম্যান পাবলিকেশন এবারো প্রায় ৩০টি নতুন বই এনেছে বইমেলায়। মোট বইয়ের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। তবে মেলায় অংশ নেওয়া বা বই প্রকাশ করা ব্যবসার অংশ হলেও মনের খোরাক মেটানোর জন্য আমরা এসব করি। আমাদের প্রকাশনী শুরু করেছি কয়েক বছর হবে। একেবারে নতুন আবার অনেক পুরনোও নয়। তবে বর্তমানে আমাদের অবস্থান অনেক ভালো। আমরা চেষ্টা করি পাঠকদের মানসম্মত বই প্রকাশ করতে। প্রকাশনীতে নতুন লেখকের পাশাপাশি প্রবীণ লেখকদের বইও আছে। কারণ পাঠক কাদের গ্রহণ করবে, কার বই কিনবে সেটা বোঝা আসলেই মুশকিল। কিন্তু আমি এটি বলবো পুরনো লেখকদের পাশাপাশি অনেক নতুন ও তরুণ লেখক বেশ ভালো বই করছে। তাদের পাঠকও আছে। যারা নতুন লেখকদের বই খুঁজে খুঁেজ নেন। লেখক-পাঠক-শুভানুধ্যায়ীদের অনুপ্রেরণায় আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। চেষ্টা করছি লেখকে, পাঠক ও প্রকাশকের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে একটা মেলবন্ধন তৈরি করতে।

প্রতিবছরের মতো এবারের গ্রন্থমেলাও বেশ জমজমাট। মেলায় পাঠক বেড়েছে। বেড়েছে মানসম্মত বই। সবাই চেষ্টা করছে নিজ নিজ প্রকাশনা থেকে ভালো মানের বই প্রকাশ করার। ভালো লেখকদের দিয়ে বই লেখানো। শুধু ব্যবসার জন্য নয়, বইপড়া যেহেতু মানুষের নেশা সেহেতু ভাল বই পাঠকের হাতে তুলে দিয়ে পাঠককে প্রকাশনীবান্ধব করা। যাতে আগামীতে একই প্রকাশনাতে পাঠক খুঁজতে আসে নতুন নতুন বই। মেলা আর বইমেলা এই কাজগুলো কোনো ঘিঞ্জি জায়গায় হয় না। ফাঁকা আর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ গ্রন্থমেলার জন্য প্রয়োজনীয় একটি ব্যাপার।

মেলাতে আমরা স্টল পেয়েছি ৩৫৬-৩৫৭। মেলার প্রথম দিন থেকেই পাঠকরা আমাদের স্টলে আসছে বই কিনতে। এমনও হয়েছে অনেক পাঠক মেলাতে এসেছে শুধু আমাদের স্টল থেকে বইকেনার জন্য। আর মেলা ছাড়াও বইকেনা বা বইপড়ার গুরুত্ব আছে। ভালোমানের বইগুলোকে দেশের প্রতিটি লাইব্রেরিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। জেলা শহরের লাইব্রেরিগুলোর সংস্করণ প্রয়োজন। স্কুল-কলেজের লাইব্রেরিগুলোসহ দেশের সব লাইব্রেরিকে যদি সমৃদ্ধ করা হয় তবে পাঠব যাচাই-বাছাই করে বই পড়ার সুযোগ পাবে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, মানুষের মধ্যে নতুন বইপড়ার অভ্যাস হবে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি গ্রাফোসম্যান পাবলিকেশনকে পাঠকদের খুব কাজে নিয়ে আসার জন্য। চেষ্টা করছি গ্রাফোসম্যান পাবলিকেশন থেকে সব ধরনের বই পাঠকদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য। আমাদের নতুন পুরনো সব বইগুলো মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব। আমাদের লেখকের তালিকায় নতুন ও পুরনো সব ধরনের লেখকই আছে। এবারে আমরা বেশি মনোযোগ দিয়েছি শিশু, কিশোরদের জন্যে বই বের করতে এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই প্রকাশ করতে।

গ্রন্থমেলায় শেষ সময়ে বাড়ছে লেখক ও পাঠকদের আড্ডা

আরো বলতে চাই প্রকাশনাশিল্পের কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। আমাদের প্রকাশনাকে আন্তর্জাতিকমানে নিতে গেলে যে প্রযুক্তির সহায়তা প্রয়োজন, তা আমাদের নেই। যাও আছে সেটি খুব কম। এখনো সেই পুরনো যন্ত্রপাতিই ব্যবহার করেন অনেকে। সারাবিশ্বে এখন কম্পিউটারাইজড প্রিন্টিং যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে পিছিয়ে আমরা। এগুলো ইমপোর্ট করে আনতে গেলে যে পরিমাণ ট্যাক্স দিতে হয় এবং মেশিনগুলোর যে দাম পড়বে সেটা কষ্টসাধ্য। এ ক্ষেত্রে সরকার যদি সহযোগিতা করে তবে এই সমস্যাগুলো থেকে উত্তোরণের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।

এ ছাড়াও, প্রতি বছর কাগজের দামও বাড়ে। আবার বিদেশি কাগজের উপর অনেক বেশি ট্যাক্স বসিয়ে দেয়া হয়, যাতে ওই কাগজের সঙ্গে সামঞ্জস্য দেশি কাগজের কারখানাগুলো যেন তাদের ইচ্ছামতো মূল্য নির্ধারণ করতে পারে। ইমপোর্টেড কাগজের দাম কমলে কিন্তু দেশি কাগজের দাম কমে যাবে। তাই প্রকাশনা শিল্পের নতুন দ্বার উম্মোচনের ক্ষেত্রে ট্যাক্স ফ্রি কাগজের ব্যবস্থা করতে হবে।

এসব কারণে প্রকাশনাশিল্পে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কাগজের মূল্য, প্রিন্টিং যন্ত্রপাতির দাম কমালে এবং এগুলো সহজলভ্য করলে কমদামেই পাঠকদের হাতে বই তুলে দেয়া সম্ভব হবে। তখন হয়তো বইকেনার আর পড়ার অভ্যাস আরো বেড়ে যাবে। তারপরও আমি এটি বলবো আমরা অনেক সীমিত প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেও পাশের দেশ ভারতের প্রকাশনাশিল্প থেকে এগিয়ে। বাংলাদেশের প্রকাশনীগুলোর প্রোডাক্ট তাদের চেয়ে অনেক ভালো। আমাদের প্রকাশনার মান পিছিয়ে নেই। আন্তর্জাতিকমানে পৌঁছানোর লক্ষ্যে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি এবং সেপথেই এগোচ্ছি।

এখন ডিজিটাল সময়। ইন্টারনেট কেন্দ্রিক আমাদের যাপিতজীবন। দেশের বাইরে যারা থাকেন তারা বিভিন্ন বই খুঁজে পান না। তাদের জন্য বইপড়ার একটি সহজ উপায় ই-বুক। আমি এটাকে এক হিসেবে ইতিবাচক বলব। ডাউনলোড করে পড়লেও এতে কিছু পাঠক তৈরি হচ্ছে। তারপরও একটি কথা আছে। প্রক্রিয়াটিই অনৈতিক, এটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। যাই হোক, বইপড়ার অভ্যাস বাড়াতে হবে। আমরা চাই বেশি সংখ্যক মানুষ বই পড়ুক, বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠুক। আর সেদিক থেকে ব্যাপারটি পজেটিভ।

আমি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে সাধুবাদ জানাই, তিনি এখনও বইমেলায় ঘুরে ঘুরে বই দেখার ও কেনার ইচ্ছা পোষণ করেন। বই মেলার উদ্বোধনী ভাষণে তিনি একথা বলেছেন। তিনি এও বলেছেন তার মনটা নাকি সারা ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপি বইমেলাতে পড়ে থাকে। বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই আনন্দের এবং জাতির জন্য ইতিবাচক। তিনি সারাদেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি করে লাইব্রেরি চালু করার যে উদ্যোগ নিয়েছেন এবং ঘোষণা দিয়েছেন তা অবশ্যই শিশু সভ্যতা ও মানব সভ্যতা বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।