Menu

আসাদ উল্লাহ'র একগুচ্ছ কবিতা

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক ::

পাটের রঙিন মহল

পাটের জীবন রহস্য উন্মোচিত হয়

অজ্ঞাত থেকে যায় মানুষের জীবন।

কতোদিন হয়ে গেলো ভিখারি হলাম

এখনো জানা হলোনা রেলের প্ল্যাটফর্মে

দেয়াল ঘেঁষে পড়ে থাকা জবুথবু

গফুর আলীর জন্ম অনিবার্য ছিলো কি-না

মন্দির ও মসজিদ খচিত এই শহরে,

অথবা ওভার ব্রীজে ঘুমিয়ে থাকা

উলঙ্গ শিশু কঙ্কালের কী প্রয়োজন!

গাঁয়ের আল ধরে হাঁটি

একদল পরগাছার মতো-

কৃষক লাঙ্গল কাস্তে কোদালে

খেলা করে শুধুই জলে কাদায়

শস্যময় উঠোন হাসেনা তাদের উঠোনে।

উড়েছিলো প্রিয় শহর আর হলুদ শাড়ি

উড়েছিলো কোন এক নারী দীঘল কেশের হাওয়ায়,

আর করতলে দাঁড়িয়েছিলো স্বপ্ন রঙিন ঘর।

এখন এ শহরে নির্জন পথে পথে

জমাট চুলের অন্ধকার

এখন এ শহরে কাকের মতো হাহাকার,

দূরে বহুদূরে শানে বান্ধাল ঘাটে

দেখি তারে পদ্মদিঘিতে ভাসে জলের চিরল হাসি-নহরে।

তবু কেনো পড়ে থাকে যখন যেখানে খুশি

কেনো চলে যায় উল্লসিত মন-

পারফিউম মানুষতো জানেনা

সামান্য সরিষাফুলের ঘ্রাণে

কতোটা মাতোয়ারা হয় সাধারণজন,

কে জানে কেনো পড়ে থাকে ইলেকট্রিক তারে

জীবনের মলিন কোলাহল
কে জানে কতোদূর পাটের রঙিন মহল!

বিত্ত নিচ্ছে ছবক বেশ্যার

দিনে দিনে বদলে বদলে যাচ্ছে দিন

দিনে দিনে বিত্ত নিচ্ছে ছবক বেশ্যার,

এখন আর ফুল কুড়াতে যায় না প্রিয়জন

এখন আর মন কুড়াতে যায় না প্রিয় মন।

হৃদয় দেখি খুবলে খুবলে খায় স্বজন

স্বজন দেখি ভুলে গেছে সব প্রীতি পুরাতন।

উঠোনে উঠোনে দেখি বণিকের কালো হাত
ঢেঁকিছাটা চাল, লাউয়ের মাচান হলো বেহাত!

ভিজে না জলের শরীর

জলতো জলেই থাকে আজন্ম কাল

তবু ভিজে না জলের শরীর

মনে হয় স্নিগ্ধ নারী, নাম জলকমল।

তবে মানুষ ভিজে কেনো এতো

ঘরে কেনো জবুথবু চোখ

পথে কেনো এতো পড়ে থাকে পাখি

এতো উঁচুতে কি করে উঠে মেঘ?

জলতো জলেই থাকে আজন্মকাল

তবু ভিজে না জলের শরীর,

দিঘির দিকে তাকালে, নদীর দিকে তাকালে

দেখি খুব ভোরের লাজে নত হলুদ নারী

তবে মানুষ এতো ভিজে কেনো?

বাজারে আগুন মানুষ ভিজে

রাষ্ট্রের দু’দল রাজনীতিকের-

পরস্পর পুচ্ছ প্রদর্শনে মানুষ ভিজে

টিকিট কাউন্টার খোলা, বাইরে হুলস্থুল

মানুষ ভিজে, মানুষ অনবরত ডাঙায় ভিজে

অথচ জল আজন্মকাল জলে থাকে
তবুও ভিজে না জলের সামান্য শরীর!

মানুষেরা হোক শাদা

রাত যতোই কালো হোক

মানুষেরা হোক শাদা,

ভাষণে বক্তৃতায় ফোলা গাল নয়

আসুক জনতার জয় মুক্তির বার্তা

প্রলেতারিয়েত বুঝে শুধু –

রুটি-বস্ত্র-বাসস্থান

ভালোবাসায় হয়েছে ডাক নাম-
স্বাধীনতা…

আবার বর্ষা নামুক

আবার বর্ষা নামুক ঘনঘোর আষাঢ়ষ্য বর্ষা

টিনের চালে ময়ূর পেখম ছড়িয়ে নাচুক,

লেবুতলায় সাঁতার কাটুক সোনালী ঘ্রাণ

ললিত পুঁইয়ের শাক কিশোরীর উছল স্তনের মতো-
দুর্দম উজালা বর্ষা নামুক।

পড়ার ঘরের বারান্দার অদূরে জল থৈ থৈ

ভাসুক ধানক্ষেত আউশ আমন কদমের ফুল।

আবার বর্ষা নামুক-

বৃষ্টির গানে শাপলা শালুকে হাসুক

প্রিয় বাল্যশিক্ষা প্রিয় কৈশোর।

রোদের মুখে কড় কড়ে খড় খড়ে আগুন
নগর ঘুরে নগরে, এ গলি- ও গলি ছাই উড়ে।

আবার বর্ষা নামুক, ঘনঘোর আষাঢ়ষ্য বর্ষা

বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে হেসে হেসে-
মরুক গাঁয়ের দুরন্ত বালক এক।

বৃষ্টি তুমি প্রেমে পোড়াও

কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে খুব কাছে কোথাও

জলের মরণ মুখে রৌদ্র অসহায়।

কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে খুব কাছে কোথাও

বৃষ্টিতে জমলো ক্ষত তুলসিতলায়।

কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে খুব কাছে কোথাও
বৃষ্টি তুমি পরাণের পাখি, প্রেমে পোড়াও!

পাহাড়ে আলো জ্বালাও

পাহাড়ে আলো জ্বালাও

নাহলে পাহাড় ভাঙবে আরো।

সবুজ পাহাড়ের বুকে খসখসে হায়েনা

হাতির দাঁত

কালো কালো নখরাঘাত

রক্তের ফিনকি সারিসারি লাশ,

পাহাড় পড়ে আছে পাহাড়ে

যেনো ধর্ষিতার করুণ ভেজা উরু!

পাহাড় তো মুজিবের তর্জনীর চেয়ে বড় নয়
পাহাড় হতে পারে জনকের চশমার আধেক ফ্রেম।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ০৫ অক্টোবর ২০১৯/ এমএম


Array