প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চিন্তা থেকেই অনেক বাবা–মা খুব অল্প বয়সেই যোগাযোগ করার সুবিধার্থে শিশুদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দিচ্ছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে উঠে এসেছে, ১১ থেকে ১২ বছর বয়সী অধিকাংশ শিশুর কাছেই এখন স্মার্টফোন রয়েছে। অথচ শিশু মনোবিজ্ঞানী ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের একটি বড় অংশ মনে করেন, অন্তত ১৬ বছর বয়সের আগে শিশুদের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে রাখা উচিত।
জরিপে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ অভিভাবক জানিয়েছেন, সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার প্রয়োজনেই তারা ফোন দিয়েছেন। কারও কাছে এটি নিরাপত্তার বিষয়, আবার কারও কাছে আধুনিক সময়ের বাস্তবতা। তবে স্মার্টফোন মানে শুধু কল বা মেসেজ নয়—এর সঙ্গে যুক্ত থাকে সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব, শর্ট ভিডিও, গেম এবং নানা অজানা ডিজিটাল জগৎ।
গবেষণায় দেখা যায়, ৮৫ শতাংশ অভিভাবক জানিয়েছেন তাদের সন্তান নিয়মিত ইউটিউব দেখে। এমনকি দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যেও ইউটিউব দেখার প্রবণতা আগের তুলনায় বেড়েছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষক কোলিন ম্যাকক্লেইন জানান, সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো—শিশুরা খুব অল্প বয়সেই স্ক্রিনের সঙ্গে পরিচিত হয়ে পড়ছে।
যদিও ৮৬ শতাংশ অভিভাবক দাবি করেন, তারা সন্তানের স্ক্রিন ব্যবহারে নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন, বাস্তবে সেই নিয়ম অনেক শিশুই মানছে না। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের প্রায় অর্ধেক অভিভাবকই স্বীকার করেছেন, স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণে তারা আরও ভালো ভূমিকা রাখতে পারতেন।
স্মার্টফোন ছাড়াও যোগাযোগ সম্ভব
অনেক অভিভাবকই ভাবেন না যে স্মার্টফোন ছাড়াও সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা সম্ভব। তবে কিছু কার্যকর বিকল্প রয়েছে—
ডাম্বফোন বা ফ্লিপ ফোন: যেখানে শুধু কল ও মেসেজের সুবিধা থাকে, নেই সোশ্যাল মিডিয়া
স্মার্ট ওয়াচ: কল, মেসেজ ও লোকেশন ট্র্যাক করার সুবিধা
ফ্যামিলি ফোন: শিশুর ব্যক্তিগত নয়, প্রয়োজনের সময় ব্যবহারের জন্য রাখা ফোন
এই বিকল্পগুলো ব্যবহার করে শিশুকে অনলাইন ঝুঁকি থেকে দূরে রেখেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
অনেক সময় অভিভাবকরা বলেন, বন্ধুদের সবাই ফোন ব্যবহার করে বলে সন্তানকেও বাধ্য হয়ে ফোন দিতে হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখানে সমন্বয়ের বিষয়টি জরুরি। শিশুর বন্ধুদের অভিভাবকদের সঙ্গে আগেই আলোচনা করে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিলে ফোন দেওয়া পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব, এতে শিশু নিজেকে আলাদা বা বঞ্চিত মনে করবে না।
পারিবারিকভাবে ফোন ব্যবহারের নিয়ম
নিউইয়র্কের মনোবিজ্ঞানী লরেন টেটেনবাউমের মতে, শুধুমাত্র যোগাযোগের জন্য অনেক পরিবার আবার ল্যান্ডলাইন ফোন ব্যবহারের কথাও ভাবছে। তবে নিয়ম শুধু শিশুর জন্য নয়, পুরো পরিবারের জন্য হওয়া প্রয়োজন। যেমন—
ঘুমের সময় ফোন ব্যবহার নয়
পড়াশোনার সময় নোটিফিকেশন বন্ধ
খাবারের টেবিলে ফোন নিষিদ্ধ
নিয়ম ভাঙলে নির্দিষ্ট পরিণতি
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—এই নিয়মগুলো শিশুর সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করা। এতে তারা দায়িত্ববোধ শিখতে পারে। একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, ডিভাইসটি আসলে শিশুর নয়, অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে।
আজকের সময়ে স্মার্টফোন ছাড়া চলা কঠিন—এ কথা অস্বীকার করা যায় না। তবে প্রশ্ন হলো, কখন এবং কীভাবে ব্যবহার শুরু করা হবে। শিশুকে নিরাপদ রাখতে গিয়ে যদি তার মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, তবে সেই নিরাপত্তার মূল্য থাকে না। সঠিক সিদ্ধান্ত, বিকল্প চিন্তা ও পারিবারিক নিয়ম—এই তিনের সমন্বয়েই শিশুদের প্রযুক্তির সঙ্গে একটি সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব।
প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ /এমএম





