Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::  বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বর্তমানে যে ভয়াবহ আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে, তার অন্যতম কারণ সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বিল। সমস্যাটি বেশ পুরোনো। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কাছে ২ হাজার ৬১২ কোটি টাকা বকেয়া আটকে যাওয়ায় আর্থিক টানাপোড়েনে পড়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সরকারের ৫৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে ‘ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি)’ বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৭৭৩ কোটি টাকা; এ ছাড়া ‘ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো)’ বকেয়া বিলের পরিমাণ ৫৫৪ কোটি টাকা; বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বাবিউবো) বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৪৫৬ কোটি টাকা; নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) বকেয়া ৩৭১ কোটি টাকা; বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে (বাপবিবো) পাওনা ২৪৫ কোটি টাকা এবং ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) বকেয়া ২১১ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টদের মতে, কয়েক বছর ধরে নানা পদক্ষেপ নিয়েও এ বকেয়া বিল আদায় করতে পারছে না বিতরণ কোম্পানিগুলো। এদিকে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ে সম্প্রতি পুনরায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে ডিও লেটার দিয়েছেন বিদ্যুৎ উপদেষ্টা। সেখানে তিনি বলেছেন, বর্তমান সরকার স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি আরও বলেছেন, বিপুল পরিমাণ বিল দীর্ঘদিন বকেয়া থাকায় সার্বিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিতরণকারী সংস্থাগুলোকে বিদ্যুতের ক্রয়মূল্য পরিশোধে আর্থিক সংকটে পড়তে হচ্ছে।

বস্তুত বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ভুল পরিকল্পনা ও নীতির কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিগত সরকারের স্বজনপ্রীতির চুক্তিসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অতীতে এর দায় সাধারণ জনগণের ওপর চাপানো হয়েছিল। বিস্ময়কর হলো, সাধারণ গ্রাহকের বিল বকেয়া থাকলেই মাইকিং করে সংযোগ কেটে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় এবং সেসব সাধারণ গ্রাহকের বিরুদ্ধে নানারকম পদক্ষেপও নেওয়া হয়। অথচ সরকারি সংস্থাগুলোর বকেয়া বিলের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ ভিন্ন আচরণ করে। সরকারের উচিত জরুরি ভিত্তিতে সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বিল আদায়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অদক্ষতার কারণেই বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। কিছু কর্মকর্তার অদক্ষতার কারণে সারা দেশের মানুষ দুর্ভোগ পোহাবে, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যেহেতু বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সমস্যাগুলো বেশ পুরোনো সেহেতু এসব সমস্যা জিইয়ে না রেখে সমাধানে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে অর্থের অভাবে জ্বালানি আমদানি ব্যাহত হবে। বিদ্যুৎ মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি। এ খাতকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত করে রাখা কোনোভাবেই কাম্য নয়। জনগণের করের টাকা থেকে ভর্তুকি দেওয়া হয়, অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর গাফিলতির কারণে জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ বিষয়ে এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে আগামীতে সৃষ্টি হবে ভয়াবহ জ্বালানি সংকট, যা অর্থনীতি ও জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলবে।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ২২ সেপ্টেম্বর  ২০২৫ /এমএম


Array