প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: পুরুষদের জন্য নিরাপদ, কার্যকর ও হরমোনমুক্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের প্রাথমিক মানব পরীক্ষায় মিলেছে উৎসাহজনক ফল। যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ জন পুরুষের অংশগ্রহণে পরিচালিত এই ট্রায়ালে দেখা গেছে, ওষুধটি শরীরে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছালেও তা হৃৎস্পন্দন, হরমোন ভারসাম্য, যৌনক্ষমতা বা মানসিক স্বাস্থ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেনি।
এই সাফল্যের ফলে এখন পিলটির কার্যকারিতা ও দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা যাচাইয়ের জন্য বড় পরিসরের পরীক্ষার পথ খুলেছে। গত মঙ্গলবার (২২ জুলাই) প্রভাবশালী সাময়িকী কমিউনিকেশন মেডিসিন-এ গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়।
বর্তমানে পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণের মাত্র দুটি বিকল্প রয়েছে—কনডম ও ভ্যাসেকটমি। পিলটি অনুমোদন পেলে এটি হবে পুরুষদের জন্য প্রথম ওষুধনির্ভর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি।
পিলটির বৈজ্ঞানিক কাঠামো ও কার্যপদ্ধতি
গবেষকদলের নেতৃত্বে ছিলেন মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি কলেজের অধ্যাপক গুন্ডা জর্জ। পিলটির নাম ওয়াইসিটি–৫২৯, যা তৈরি হয়েছে ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটা ও কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে। ট্রায়ালের তত্ত্বাবধানে রয়েছে বায়োটেক প্রতিষ্ঠান ইউর চয়েস থেরাপিটিকস।
ওয়াইসিটি–৫২৯ মূলত শরীরের একটি নির্দিষ্ট প্রোটিন—রেটিনোইক অ্যাসিড রিসেপ্টর আলফা (RAR-α)—এর কার্যক্রম বন্ধ করে শুক্রাণু উৎপাদন থামিয়ে দেয়। এই রিসেপ্টরটি ভিটামিন-এ নির্ভর একটি রাসায়নিকের সঙ্গে কাজ করে, যা কোষের বৃদ্ধি, ভ্রূণের বিকাশ এবং শুক্রাণু তৈরিতে ভূমিকা রাখে। RAR-α-কে লক্ষ্য করে শতাধিক যৌগ বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা তৈরি করেছেন এই ওষুধ।
প্রাণীর ওপর আশাব্যঞ্জক ফলাফল
ল্যাবরেটরিতে পুরুষ ইঁদুরের শরীরে চার সপ্তাহ ওয়াইসিটি–৫২৯ প্রয়োগে জন্মনিয়ন্ত্রণে ৯৯ শতাংশ সফলতা পাওয়া গেছে। ওষুধ সেবন বন্ধের চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে তাদের প্রজননক্ষমতা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। একই রকম ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে বানরের শরীরেও।
মানবদেহে প্রথম ধাপের পরীক্ষা
এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশগ্রহণ করেন ৩২ থেকে ৫৯ বছর বয়সী ১৬ জন পুরুষ, যাদের সবারই আগে ভ্যাসেকটমি করা ছিল—পরবর্তীতে প্রজনন ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেই সতর্কতা থেকেই এই ব্যবস্থা।
অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন মাত্রায় ওষুধ পান—কেউ খালি পেটে, কেউ ভারী খাবারের পর। সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, ওষুধটি নিরাপদভাবে শরীরে কার্যকর মাত্রায় পৌঁছাতে সক্ষম।
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নাদজা মানোয়েটজ জানান, ভবিষ্যতে প্রতিদিন ১৮০ মিলিগ্রাম মাত্রায় একটি ক্যাপসুল সেবনের মতো হতে পারে এই পিলের প্রস্তাবিত ডোজ।
পরবর্তী ধাপ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বর্তমানে চলছে দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল, যেখানে পুরুষদের ২৮ থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত ওয়াইসিটি–৫২৯ সেবন করানো হচ্ছে। লক্ষ্য—শুক্রাণুর মান ও পরিমাণে কী ধরনের পরিবর্তন আসে এবং দীর্ঘমেয়াদে ওষুধের কোনো প্রভাব পড়ে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা।
এই ধাপে অংশ নিচ্ছেন তারা, যারা সন্তান না নেওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে এসেছেন কিংবা যাদের ইতিমধ্যেই ভ্যাসেকটমি হয়েছে।
গবেষকদলের প্রত্যাশা, ওয়াইসিটি–৫২৯ পিলটি ভবিষ্যতে পুরুষদের জন্য একটি নিরাপদ, কার্যকর এবং বিপরীতযোগ্য জন্মনিয়ন্ত্রণের বিকল্প হয়ে উঠবে, যা পরিবার পরিকল্পনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে এবং নারী-পুরুষ উভয়ের মাঝে দায়িত্ব ভাগাভাগির সুযোগ তৈরি করবে।
প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ২৪ জুলাই ২০২৫ /এমএম