Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: এ দেশ যেন এক মৃত্যু উপত্যকা; এখানে মৃত্যু হানা দেয় বারবার! প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে সৃষ্ট মর্মান্তিক ঘটনায় দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও গভীরভাবে শোকাহত। সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান (যুদ্ধবিমান) মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এর ফলে ভবনটিতে আগুন ধরে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মারা যান অনেকে, যাদের বেশির ভাগই শিশু। এ সম্পাদকীয় লেখার সময় পর্যন্ত বিমানের চালকসহ ৩১ জনের মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহতের সংখ্যা ১৬৫, যাদের অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। জানা যায়, দুপুর ১টায় স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছিল; এরপর দুই ঘণ্টা কোচিংয়ের জন্য কিছু ছাত্রছাত্রী সেসময় স্কুলে ছিল। তাদেরই অনেকের ভাগ্যে নেমে আসে এ ভয়াবহ পরিণতি। এই মর্মান্তিক ঘটনার পর স্বজনহারাদের আর্তনাদ আর কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে আশপাশ এলাকার বাতাস। আহতদের দেখতে হাসপাতালগুলোয় ছুটে যান সর্বস্তরের মানুষ। অনেকে হাসপাতালে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রক্ত দিতে আসেন। দুর্ঘটনায় ২০টি শিশুকে বাঁচিয়ে নিজের জীবন দিয়ে গেছেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সমন্বয়ক মাহেরীন চৌধুরী। তার এ আত্মত্যাগ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ দুর্ঘটনায় সারা দেশের মানুষ আজ বেদনা ভারাক্রান্ত। দুর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, আমরা তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। স্বজনহারাদের প্রতি রইল আমাদের গভীর সমবেদনা। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার দেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়। স্থগিত করা হয় মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা।

প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার কারণ যান্ত্রিক ত্রুটি বলে মনে করা হচ্ছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বিধ্বস্ত হওয়া এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানটি উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয়, যার বিস্তারিত জানানো হবে তদন্তসাপেক্ষে। দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে ইতোমধ্যে বিমানবাহিনীর একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২১ বছরে (২০০৫-২৫) বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ২৬টি বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এর বেশির ভাগই প্রশিক্ষণ চলাকালে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। কিন্তু সোমবারের দুর্ঘটনাটি সবচেয়ে ভয়াবহ বলে মনে করা হচ্ছে। এ দুর্ঘটনায় অনেক শিশুর মৃত্যু হওয়ায় মানুষের বুকে চেপে বসা বেদনার পাথরও অনেক ভারী। জানা যায়, দুর্ঘটনায় নিহত বিমানচালক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম প্রশিক্ষণের সব ধাপ শেষে প্রথমবারের মতো একা বিমানটি চালাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনা না ঘটলে এটি হতে পারত তার স্বপ্ন পূরণের দিন। সেই স্বপ্নটি পূরণের পরিবর্তে এক বিশাল শোকের বার্তা গেছে তার পরিবারে।

দুর্ঘটনার ওপর মানুষের হাত নেই, সত্য। তবে একটি স্কুল ভবনের ওপর বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা মেনে নেওয়া কঠিন। এক্ষেত্রে এমন প্রশ্নও উঠেছে, জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়ন কতটা যৌক্তিক? দুর্ঘটনার পর উদ্ধার তৎপরতায় আমাদের দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতার বিষয়টিও সামনে এসেছে। উদ্ধারকাজে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, পুলিশসহ সবাই দ্রুততার সঙ্গে অংশ নিলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে লজিস্টিক সমর্থনের ঘাটতির বিষয়টি লক্ষ করা গেছে। এসব ঘাটতি পূরণে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। আমরা আশা করব, তদন্তের মাধ্যমে এ দুর্ঘটনার কারণ জানা যাবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সংশ্লিষ্টরা যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে যারা চিকিৎসাধীন রয়েছে, তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যবস্থা নেবে সরকার, এটাও কাম্য।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ২৩ জুলাই ২০২৫ /এমএম


Array