আহসান রাজীব বুলবুল ,প্রধান সম্পাদক, প্রবাস বাংলা ভয়েস :: সম্প্রতি কানাডায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ ফেডারেল মডেলিংয়ের তথ্য অনুসারে কানাডা আগামী শুক্রবারের মধ্যে কোভিড-১৯ -এর আরও ১০ হাজার টিরও বেশি রেকর্ড করার পথে রয়েছে।
মঙ্গলবার কানাডার প্রধান জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: থেরেসা ট্যাম বলেছেন– যেহেতু দৈনিক রিপোর্ট করা সংখ্যাগুলি সর্বদা এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণে পিছিয়ে থাকবে, আমরা কেবল ভবিষ্যতে আরও এক থেকে দু’সপ্তাহ পরে যে সংক্রমণ ঘটছে তা দেখবো এই কারণেই আমাদের কার্যক্রমগুলো এখনই, মহামারী বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, ২০ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে।ট্যাম বলেন –কানাডিয়ানরা যদি বর্তমান পথেই থাকে বা তাদের সতর্কতা নামিয়ে দেয়, তবে আগামী কয়েক মাসে সম্ভবত ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে এবং এই উত্থান আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সক্ষমতাকে ছাপিয়ে যেতে পারে এবং সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাগুলিকেও উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
অন্যদিকে কানাডার বিভিন্ন প্রভিন্সে আবারো কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কানাডার বৃহত্তম প্রদেশ অন্টারিওর সর্বত্র ঘরে ১০ বাইরে ২৫ জনের বেশি সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ এই নিয়মের অধীনে প্রভিন্সের কোথাও ঘরে ১০ এবং বাইরে ২৫ জনের বেশি সমাগম করা যাবে না।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমন রোধে সম্প্রতি কানাডার অন্টারিও প্রদেশের প্রিমিয়ার ডাগফোর্ড এই ঘোষনা দিয়েছেন। এর আগে টরন্টো, অটোয়া এবং পিল রিজিওনের জন্য জনসমাগম সংকোচিত করা হয়েছিলো।
বিভিন্ন শহরের মেয়রদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এখন পুরো শহরে এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো। রেস্টুরেন্ট, সিনেমা হল, বার, উপসনালয়কে এই সিদ্ধান্তের বাইরে রাখা হয়েছে। এই বিধিনিষেধ অমান্য করে জমায়েত আয়োজনকারীদের ১০ হাজার ডলার এবং জমায়েতে অংশগ্রহনকারীদের ৭৫০ ডলার জরিমানা করা হবে।
সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঘরের ভেতর এবং বাইরের সমাগম মিলিয়ে কোনো ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না। এর আগে ঘরে ২৫ জন এবং ঘরের বাইরে ১০০ জন পর্যন্ত জনসমাগম অনুমোদিত ছিলো।
অন্যদিকে অন্টারিওর প্রভিন্সিয়াল সরকার ৫ মিলিয়ন ডোজের বেশি ফ্লু ভ্যাকসিনের আদেশ দিয়েছে। এই শীতে কোভিড সংক্রান্ত অসুস্থতায় হাসপাতালে রোগী ভর্তি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার কুইন্সপার্কে এই ঘোষনা দিয়ে প্রিমিয়ার ডাগ ফোর্ড বলেছেন, কোভিডের দ্বিতীয় প্রবাহ মোকাবেলায় তার সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
সেগুলো পর্যায়ক্রমে ঘোষনা করা হবে। তিনি জানান, ফ্লূ ভ্যাকসিনের জন্য প্রভিন্স ৭০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে। কানাডার ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় এবং সমন্বিত পদক্ষেপ। তারই অংশ হিসেবে ৫.১ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিনের আদেশ দিয়েছে। গত বছর ৪.৪ মিলিয়ন ভ্যাকসিন কিনেছিলো প্রভিন্স। ডাগ ফোর্ড প্রত্যেক নাগরিককে ফ্লু শট নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন- এ বছর প্রতিটি নাগরিকের ফ্লু শট নেয়া অত্যন্ত জরুরী।
উল্লেখ্য ইতিমধ্যে করোনা মোকাবিলা করা এবং নাগরিকদের সাহস জোগাতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বিভিন্ন খাতে জরুরী সহায়তা দিয়ে আসছে। তারপরেও স্টককানাডার ৪টি প্রাদেশিক সরকার স্বাস্থ্যখাতে আরোও সহায়তার দাবি করেছেন ফেডারেল সরকারের কাছে।
কানাডা সরকারের বিভিন্ন প্রদেশগুলোয় করোনা সংকট মোকাবেলায় স্বাস্থ্যখাতে মোট খরচের ২২ শতাংশ বহন করছে ফেডারেল সরকার। প্রাদেশিক সরকারগুলোর দাবী এ সংখ্যা ৩৫ শতাংশ করার। বর্তমানে ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে প্রদেশ প্রতি গড়ে ৪২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়া হয়।
করোনার কারণে প্রাদেশিক সরকারগুলো বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যসেবা বাড়িয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের সহায়তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন কানাডার অন্টারিও, ম্যানিটোবা, অ্যালবার্টা এবং ক্যুইবেকের ৪ প্রদেশের সরকার প্রধানরা। তারা করোনা সংকটে স্বাস্থ্যখাতে ঊর্ধ্বমুখী খরচ সামাল দিতে ফেডারেল সরকারের কাছে আরো ২৮ বিলিয়ন ডলার জরুরী সহায়তা দাবি করেছে। তারা বলেন, স্বাস্থ্যখাতে কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
উল্লেখ্য করোনা মহামারী শুরুর প্রাক্কালে -করোনা প্রতিরোধের জন্য কানাডা সরকারের একাধিক ভূমিকা এবং উদ্যোগ যেমন– নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা ও প্রনোদনা, চাকরি, বাসস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ স্বাস্থ্যখাতেও যে পদক্ষেপ তা সারা বিশ্বের কাছে প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয় হয়ে রয়েছে।
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০/এমএম





