আহসান রাজীব বুলবুল, প্রধান সম্পাদক, প্রবাস বাংলা ভয়েস :: কানাডার আলবার্টার প্রথম বাংলা অনলাইন প্রবাস বাংলা ভয়েসের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ নিয়ে ভার্চুয়াল আলোচনা। আলোচনার শুরুতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের অন্যান্য শহীদদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়ে শুরু হয় আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন প্রবাস বাংলা ভয়েসের প্রধান সম্পাদক আহসান রাজীব বুলবুল।
উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কানাডাস্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার মিজানুর রহমান, বালাদেশ টেলিভিশন ও এফডিসি’র প্রাক্তন মহাপরিচালক, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং বিশিষ্ট নাট্যজন ম.হামিদ, বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর প্রাক্তন পরিচালক, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের নির্বাহী সভাপতি এবং চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও বিশিষ্ট নাট্যজন ফাল্গুনী হামিদ। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কানাডার আলবার্টা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি আবদুল্লাহ রফিক এবং কানাডার আলবার্টা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর সেলিম।
আলোচনায় বক্তারা বঙ্গবন্ধুর চিন্তা চেতনা ও ভাবাদর্শ, বঙ্গবন্ধুর সাফল্যের নেতৃত্বে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছার অবদান, কানাডায় অবস্থানরত ঘাতক নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য কূটনৈতিক পর্যায়ের বর্তমান অবস্থা, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী কুশিলীবদের সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত ছিল তাদের পিছনের মদদদাতা কারা ছিল তাদের ব্যাপারে সরকারের জোরালো পদক্ষেপ, ১৫ আগস্টের কাল রাতের পটভূমি, বাঙালি ও বাঙালি জাতিকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও পরিকল্পনা, বঙ্গবন্ধুর বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠা, বঙ্গবন্ধুর সেক্যুলার রাজনীতির পর্যবেক্ষণ এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান নিয়ে আলোচনা করেন।
কানাডাস্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত রাত আজ। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৭৫-এর কালিমা লিপ্ত রক্তঝরা এ দিনেই জাতি হারিয়েছে তার গর্ব, ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে সেদিন ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার পরিবার-পরিজনকেও ঘৃণ্যতম পৈশাচিকতায় হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল এই বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে একদিন তিনি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, শস্য শ্যামলা সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করার। সে লক্ষ্য নিয়েই তিনি কাজ করেছেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশন ও এফডিসির প্রাক্তন মহাপরিচালক এবং বিশিষ্ট নাট্যজন ম.হামিদ বলেন, আমরা জানি পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধুকে নিঃশেষ করতে পারেনি খুনিরা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সংহতির প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখনও তাঁর জীবন, কর্ম ও বাণী দিয়ে জাতিকে শক্তি জুগিয়ে চলছেন। আমরা নিশ্চিত, অনাগত দিনগুলোতেও বঙ্গবন্ধু হয়ে থাকবেন বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য অনিঃশেষ বাতিঘর। আমরা দেখেছি, বঙ্গবন্ধু কেবল বাংলাদেশের নন, গোটা বিশ্বব্যবস্থায় বিবেকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তিনি উদাত্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত-শোষক ও শোষিত। শেখ মুজিব শোষিতের পক্ষে।’ তাই আজও পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে স্বাধীনতা বা স্বাধিকারের প্রশ্ন এলে একজন শেখ মুজিবের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়।
তিনি আরো বলেন স্বীকার করতে হবে, দেশীয় ও বিদেশি চক্রান্তের জাল ছিঁড়ে বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত। পঁচাত্তরের মর্মন্তুদ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের যে পশ্চাৎমুখী যাত্রা শুরু হয়েছিল, বিলম্বে হলেও তারই কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। বঙ্গবন্ধুর খুনিচক্র কেবল জীবন্মৃত দিন কাটায় না; তাকে নিয়ে কুৎসা রটনাকারীরাও আজ মুখ লুকানোর অবলম্বন খুঁজে কূল পান না। আমরা দেখছি, যত দিন যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর ছায়া যেন ক্রমেই দীর্ঘতর হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের নির্বাহী সভাপতি এবং চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও বিশিষ্ট নাট্যজন ফাল্গুনী হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর হৃদয় জুড়ে ছিল বাংলাদেশের মানুষ, তার হৃদয়ের মণিকোঠায় সব সময় বাংলাদেশের গরীব দুঃখী মানুষের অবস্থান তাদের মুক্তির জন্য তিনি জীবনের প্রায় ১৩ টি বছর পাকিস্তানের কারাগারে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদান সামনের দিনগুলোতে নতুন নতুন মাত্রায় উদ্ভাসিত হবে।
কানাডার আলবার্টার বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লা রফিক বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব পুরো বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে যে তিনি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা। তিনি আরো বলেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার ভূমিকা বিশ্ববাসী আজ স্বীকার করছে।
কানাডার আলবার্টার আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর সেলিম বলেন, দীর্ঘ নয় মাস ১৪ দিন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালী কারাগারে বন্দি ছিলেন, বন্দি অবস্থায় ও বঙ্গবন্ধু ছিলেন দূঢ়। আজ বাংলাদেশের যে উন্নয়ন কর্মকান্ড তার ভিত্তি বঙ্গবন্ধুর হাতেই হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি জানতো পুরো পরিবারটি ছিল বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের অংশ। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু কোন নির্দিষ্ট দলের নন। বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সবাই তার দেখানো পথে দেশ গড়ায় আত্মনিয়োগ করে চলেছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংগ্রাম ও সমৃদ্ধিতে দেদীপ্যমান দীপশিখা হয়ে বঙ্গবন্ধু আজীবন থাকবেন আমাদের হৃদয়ে।
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/১৫ আগস্ট ২০২০/এমএম




