লায়লা নুসরাত, সম্পাদক, প্রবাস বাংলা ভয়েস :: জার্মানির মহাকাশ গবেষণাগার পরিদর্শনে কানাডা সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি প্রবাসী বাঙালি বিজ্ঞানী ড. দেলোয়ার হোসাইন এয়ারবাস ও জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার (DLR)–এ বিপ্লবী মেডিকেল প্রযুক্তি উপস্থাপনায় মহাকাশ শিল্পে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন।কানাডা সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী বিশেষ গবেষণা–বাণিজ্যিক (আর এন্ড ডি পার্টনারশিপ) দলের সদস্য হিসেবে তিনি ইউরোপের দুই শীর্ষ মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র—এয়ারবাস ও জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার (ডিএলআর)—পরিদর্শন করেন এবং মহাকাশ–স্বাস্থ্য প্রযুক্তিতে তাঁর উদ্ভাবন উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর প্রযুক্তি “বিপি অ্যারো এ্যাকটিভ প্লাস”, এটি নির্বাচিত ১২ উদ্ভাবনের একটি। কানাডা সরকারের গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা, এন আর সি- আই আর এ পি এবং ডুসেলডর্ফস্থ কানাডা কনস্যুলেটের উদ্যোগে আয়োজিত কানাডিয়ান স্পেস টেকনোলজি পার্টনারিং মিশন ২০২৫ এ অংশগ্রহণের জন্য কানাডার সর্বাধুনিক ১২টি উদ্ভাবন নির্বাচিত হয়।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ড. দেলোয়ার হোসাইনের উদ্ভাবিত মহাকাশ-চিকিৎসা যন্ত্র বিপি অ্যারো এ্যাকটিভ প্লাস”- এই ১২ নির্বাচিত উদ্ভাবনের মধ্যে একটি। এই যন্ত্রটি মহাকাশচারীদের হৃদ্স্বাস্থ্য বাস্তব সময়ে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম, যা দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশযাত্রায় জীবনরক্ষাকারী ভূমিকা রাখতে পারে।
এয়ারবাস হলো একটি ইউরোপীয় বিমান ও মহাকাশ সংস্থা, যা বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক বিমান এবং প্রতিরক্ষা খাতের জন্য পণ্য তৈরি করে, এটি এয়ারবাস এ৩২০, এ৩৩০, এ৩৮০ (বিশ্বের বৃহত্তম যাত্রীবাহী বিমান) সহ নানা মডেলের বিমান তৈরি করে, যা বোয়িং-এর সাথে প্রতিযোগিতা করে এবং বিমান বাংলাদেশ ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মতো অনেক এয়ারলাইন্সের বহরে রয়েছে।অন্যদিকে জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার (ডি এল আর) হলো জার্মানির জাতীয় গবেষণা কেন্দ্র যা বিমানবিদ্যা, মহাকাশ, শক্তি, পরিবহন এবং নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে; এটি জার্মানির মহাকাশ ও বিমান গবেষণা এবং প্রযুক্তি উন্নয়নে নেতৃত্ব দেয়, যার সদর দপ্তর কোলন-এ অবস্থিত।
এয়ারবাসে বিরল এই সুযোগে মহাকাশযান পরিদর্শন ও বিজ্ঞানীদের সঙ্গে গভীর আলোচনায় ব্রেমেনের এয়ারবাস গবেষণা কেন্দ্রে ড. হোসাইন কথা বলেন শীর্ষ বিজ্ঞানীদের সঙ্গে এবং পরিদর্শন করেন- ইউরোপীয় মানব–মিশনে ব্যবহৃত মহাকাশযান, ২০ বার মহাকাশ ভ্রমণ করা ঐতিহাসিক মহাকাশযান, স্পেসক্রাফট সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন ল্যাব, উচ্চ প্রযুক্তির গবেষণা ও নির্মাণ সুবিধা।
মহাকাশযানের ভেতরে প্রবেশের অভিজ্ঞতা এবং প্রকৃত লুনার-মিশন প্রযুক্তি কাছ থেকে দেখার সুযোগ ছিল ড. দেলোয়ারের জন্য এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত।
ইউরোপীয় নভোচারীদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র ঘুরে দেখেছেন ড. হোসাইন। তিনি পরিদর্শন করেন জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার (ডিএল আর)–এর প্রধান কেন্দ্র কোলনে, যেখানে তিনি পরিদর্শন করেন- ইউরোপীয়ান এস্ট্রোনার্ট সেন্টার (ইএসি) যেখানে ইউরোপ থেকে যেসব মহাকাশ যায় তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়াও পরিদর্শন করেন মেডিক্যাল সেন্টার ফর এস্ট্রোনার্ট যেখানে- মহাকাশ গামীদের শারীরিক ও মানসিক পরীক্ষা ও যত্ন নেওয়া হয়, পরিদর্শন করেন লুনা ফ্যাসিলিটি, যেখানে ভবিষ্যৎ চাঁদ-অভিযানের সিমুলেশন কেন্দ্র।ডিএল আর -এ তিনি তাঁর উদ্ভাবন উপস্থাপন করেন গবেষক, কর্মকর্তা ও শিল্প–নেতাদের সামনে। ফলাফল ছিল সম্ভাব্য সহযোগিতা, যৌথ গবেষণা এবং মহাকাশ–স্বাস্থ্য প্রযুক্তিতে ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের পথ উন্মুক্ত।
ড. হোসাইন ইউরোপের বৃহত্তম মহাকাশ–প্রযুক্তি প্রদর্শনী “স্পেস টেক এক্সপোর্ট ইউরোপ ২০২৫ এ অংশগ্রহণ করেন। তিন দিনের এই প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন- মহাকাশচারীগন, ইউরোপের শীর্ষ ইঞ্জিনিয়ার, মহাকাশযান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, স্যাটেলাইট ও লঞ্চ ভেহিকল কোম্পানি, আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত–নির্ধারক ও গবেষকরা এটি ছিল তাঁর জন্য এক অসাধারণ সুযোগ এবং বাংলাদেশি গবেষকের উদ্ভাবনকে বৈশ্বিক মহাকাশ শিল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে প্রচারের।
বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের গর্ব ড. দেলোয়ার হোসাইনের এই অর্জন শুধু ব্যক্তিগত সাফল্য নয়- এটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের মেধা, সম্ভাবনা এবং বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে।তিনি জানান, একমাত্র বাংলাদেশি হিসাবে এই মিশনে অংশ গ্রহণ করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।এরুপ উদ্ভাবনী অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান আমি বাংলাদেশের শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে চাই।
প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ /এমএম








